‘গ্রেস অব গড’ নামে ঘানায় তাঁর একটা নিজস্ব স্কুল আছে। ষোলোশো ছাত্র আসে নিয়মিত। নিখরচায় সেখানে পড়াশোনা চলে। কারণ তিনি মনে করেন গরিবদের পক্ষে টাকা-পয়সা খরচ করে সন্তানকে স্কুলে পাঠানো সম্ভব নয়। আর স্কুলে না গেলে গরিবের সন্তান গরিবই থেকে যাবে।
তাঁকে ধরতে গেলে ঘানা যেতে হয় না। ফোন নম্বর আছে, ই-মেল আইডি আছে। নিজের নামে একটা ওয়েবপেজও তৈরি করেছেন। কাউকে পরামর্শ দিয়ে কোনও পারিশ্রমিকও নেন না তিনি! তিনি মনে করেন, যা তাঁকে করতে হয়, সবই ঈশ্বরের দেওয়া কাজ।
তিনি— ঘানার ভয়ঙ্করতম ওঝা, লোকে তাঁকে জানে ‘কাওয়াকু বনসাম’। ইংরেজিতে যার অর্থ, বুধবারের শয়তান!
বুধবারের পর তাঁর আরও একটা পরিচয়ের জন্ম হল। তিনি ক্রিশ্চিয়ানোর রোনাল্ডোর ঘোষিত ‘শত্রু’! যাঁর দাবি, তাঁর কালা জাদুর শিকার হয়েছেন রোনাল্ডো।
বিশ্বকাপের আগে রোনাল্ডো জোড়া চোটের কবলে পড়েছেন পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশন জানিয়ে দেওয়ার পরপরই ঘানার ওঝা দাবি করতে থাকেন যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বারোটা বাজানোর জন্য যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, সেটা কাজ করতে শুরু করেছে! বলে দেন যে, কালা জাদু প্রয়োগ করছেন রোনাল্ডোর উপর। নিশ্চিত করবেন যাতে, সিআর সেভেনের বিশ্বকাপেই না আর নামতে পারেন!
বিশ্বকাপে পর্তুগাল এবং ঘানা দু’টো টিমই এক গ্রুপে রয়েছে। অতএব, ঘানার ওঝার কেন এমন ‘হিংসাত্মক’ মনোভাব, আন্দাজ করা কঠিন নয়। ঘানার এক সংবাদপত্রকে বনসাম বলে দেন, “ক্রিশ্চিয়ানোর চোটের কথা আমি জানি। ওকে নিয়ে আমার কাজ চলছে। আর আমি এটা নিয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস। যেমন গত সপ্তাহে আমি চারটে কুকুর খুঁজছিলাম। তার পর ওদের দিয়ে আমি কাউইরি কাপাম নামের এক বিদেহী আত্মা সৃষ্টি করি, যে আদতে শয়তান।” শুধু তাই নয়, চার মাস আগেই নাকি তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, রোনাল্ডো শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন না। তিনি ঈশ্বরের থেকে বিশেষ এক পাউডার পেয়েছেন। যা বিভিন্ন পাতার নির্যাসের সঙ্গে মেশানো হয়েছে। মিশিয়ে তা ব্যবহার করা হয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ছবির চার দিকে।
খুব সহজে, যা ব্ল্যাক ম্যাজিক!
এমনিতেই কোনও টুর্নামেন্টে আফ্রিকান দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপার থাকলে বিভিন্ন ওঝাদের আসরে নেমে পড়তে দেখা গিয়েছে। বিপক্ষের প্লেয়ারদের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে তন্ত্র-মন্ত্র, ঝাড়ফুঁকের টোটকা। বিশ্বকাপে ঘানাজাত ওঝার সিআর সেভেনকে নিশানা বানিয়ে ফেলাটা মোটেও আশ্চর্যের নয়। মিশরের বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ জয় ছিনিয়ে নিয়ে ঘানা বিশ্বকাপে উঠবে, যে ভবিষ্যদ্বাণী তিনি আগেভাগেই করেছিলেন। ফুটলবিশ্ব জুড়ে রোনাল্ডোকে নিয়ে এত নাচানাচি যাঁর মোটেও সহ্য হয় না। সবচেয়ে বড় কথা, বনসাম মনে করেন রোনাল্ডো নামলে একাই বিশ্বকাপ থেকে উড়িয়ে দিতে পারেন ঘানাকে।
তাই কাঁটা তুলতে হবে!
“আমি চার মাস আগেই ঠিক করেছিলাম যে, রোনাল্ডোকে অন্তত ঘানার বিরুদ্ধে নামতে দেওয়া যাবে না। বিশ্বকাপে না নামতে দিলে তো আরও ভাল। আর তাই ঠিক করেছিলাম যে চোট পাইয়ে পাইয়ে ওকে ঘায়েল করে ছাড়ব,” হুঙ্কার দিয়েছেন বনসাম। সঙ্গে গর্জন— রোনাল্ডোর চোট কোনও ভাবে সারা সম্ভব নয়। ডাক্তার নাকি হাজার চেষ্টা করেও চোট কেন বাড়ছে খুঁজে বার করতে পারবে না! কারণ, পুরোটাই তন্ত্র-মন্ত্রের ব্যাপার। ডাক্তারের সাধ্য নেই, রোনাল্ডোকে সুস্থ করার। “আজ হাঁটুতে লাগবে। কাল উরুতে। পরুশু অন্য কোনও জায়গায়,” শ্লেষাত্মক মন্তব্য বনসামের।
নিজের ফুটবল কেরিয়ারে কম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জেতেননি রোনাল্ডো। লিওনেল মেসিকে হারিয়েছেন। নেইমারকে পরাস্ত করেছেন। জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচের দেশকে একাই ছিটকে দিয়েছেন বিশ্বকাপ থেকে। ঘানার ওঝার দাবি সত্যি হলে, সিআর সেভেনের সামনে ইনিই বোধহয় কঠিনতম প্রতিদ্বন্দ্বী।
পুরোটাই তো বল আর গোলের বাইরের যুদ্ধ!