সোমবার দুপুর-দুপুর যদি ইডেনে ক্লাবহাউস গেট দিয়ে কোনও এক্কাগাড়ি ঢুকতে দেখেন, একটু খেয়াল রাখবেন।
সব ঠিকঠাক চললে, তাতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং ডোয়েন ব্র্যাভোর থাকার কথা!
ম্যাচের প্রাক্-মুহূর্তে নয়, সে দিন মাঠে একটু আগেই বোধহয় ঢুকে পড়া ভাল। হাতে টিকিটটা অবশ্যই যেন থাকে, কারণ সেটা দেখালেই বিভিন্ন গেট থেকে পাওয়া যাবে ইডেন নিয়ে স্যুভেনির।
আর গ্যালারিতে বসে চোখ রাখতে পারেন মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনের দিকে। ইডেনে টাইগার পটৌডির বিক্রম যাঁরা দেখেননি, শহরের ক্রিকেট-প্রাণকেন্দ্রে যাঁদের চাক্ষুষ দেখার সৌভাগ্য হয়নি কসমসের জার্সিতে পেলের ফুটবল, দুধের স্বাদ ঘোলে হলেও তা মেটানোর বন্দোবস্ত থাকছে। থাকছে ওই জায়ান্ট স্ক্রিনে।
প্রেসিডেন্টস বক্সের দিকেও মাঝে মাঝে তাকাতে পারেন। অজিত ওয়াড়েকরকে পাবেন ওখানে। গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথকেও। আর পাবেন শর্মিলা ঠাকুরকে। টাইগার-পত্নী শহরে আসছেন ম্যাচের আগের দিন। ফিরবেন ম্যাচ দেখে।
শহরে শারদোত্সব শেষ। আইএসএল নামক ফুটবল-পুজো শুরু হয়েছে তার পরপরই। ক্রিকেট, ইডেন এত দিন কোথাও যেন একটু পিছিয়েই পড়ছিল। কিন্তু ইডেনে ক্রিকেটের দেড়শো বছর পূর্তিকে ঘিরে যে সমস্ত ক্রিকেটীয়-পুজোপাঠের ফর্দ পাওয়া গেল, সিএবি কর্তারা যা যা বলছেন তার সবগুলো যদি বাস্তবে হয়, তা হলে ইডেনে আগামী সোমবারের ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ান ডে ম্যাচকে ঘিরে দীপাবলির আগেই আগমন ঘটতে চলেছে অন্য এক রোশনাইয়ের।
আগমন ঘটছে ক্রিকেট-দীপাবলির।
কী কী হচ্ছে নয়। প্রশ্ন বরং হওয়া উচিত কী হচ্ছে না। আগামী সাত দিন ধরে একের পর এক অনুষ্ঠান। কোনওটা বোর্ডের, কোনওটা সিএবি-র নিজস্ব। ম্যাচ নিয়েও নানা রকম পরিকল্পনা। যেমন কলকাতার এক সময়ের ঘোড়ায় টানা ট্রামের ঐতিহ্যের ছোঁয়া রেখে চেষ্টা হচ্ছে ঘোড়ায় টানা গাড়ির বন্দোবস্ত করার। টিম বাস যেখানে থামবে সেখান থেকে দুই অধিনায়ককে ক্লাবহাউস গেট পর্যন্ত নাকি নিয়ে আসা হবে এক্কায়। পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ কথাবার্তা হয়েছে। সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে বলছিলেন, “আশা করছি এটার ব্যাপারে অনুমতি আমরা পেয়ে যাব। ধোনি-ব্র্যাভোকে এক্কায় করে ক্লাবহাউস গেট পর্যন্ত আনতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।”
দুই অধিনায়ককে নিয়ে পরিকল্পনার শেষ এখানেই হচ্ছে না। মাঠের মধ্যেও অনুষ্ঠান থাকছে। যেখানে ‘১৫০’ লেখা বিশাল গোলাপের মালা পরিয়ে দেওয়া হবে দু’জনকে। টসের জন্য যে বিশেষ স্বর্ণমুদ্রার ব্যবস্থা করছে সিএবি, তার রেপ্লিকা দেওয়া হবে ম্যাচের দুই টিমের প্রত্যেক সদস্যকে।
জায়ান্ট স্ক্রিনে আবার ইডেন নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র চালানোর ব্যবস্থা থাকছে। যেখানে পেলের ম্যাচ তো বটেই, ইডেনের বিশ্বকাপ ফাইনাল আয়োজন থেকে ভারতের হিরো কাপ জয় সবই থাকছে। দুই ইনিংসের মধ্যের বিরতিতে আবার সে দিন ম্যাচে উপস্থিত ভারতের প্রাক্তন অধিনায়করা মাঠ-প্রদক্ষিণও করবেন। যেমন বিশ্বনাথ, যেমন ওয়াড়েকর, যেমন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টানা দু’বারের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডও থাকতে পারেন বলে শোনা গেল।
ম্যাচের দিন তো বটেই, ম্যাচের আগেও চার-পাঁচ দিন ধরে নানা অনুষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। আগামী ১৯ অক্টোবর কলকাতায় পটৌডি-স্মৃতি বক্তৃতা আয়োজন করছে ভারতীয় বোর্ড। ভিভিএস লক্ষ্মণ আসছেন বক্তৃতা দিতে। কলকাতায় কাটানো পটৌডির বিভিন্ন মূহূর্তের উপর একটা ছবির অ্যালবাম বার করছে সিএবি। যা পটৌডি-স্মৃতি বক্তৃতায় উপস্থিত সবাইকে দেওয়া হবে।
তার আগের দিনগুলোয় কখনও দেখা যাবে টসের জন্য বিশেয স্বর্ণমুদ্রার উদ্বোধন করছেন ভারতের প্রাক্তন দুই ক্রিকেটার দীপক শোধন এবং কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। কোনও দিন আবার সিএবি-র প্রথম দেড়শো জন জীবিত সদস্যকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। যাঁদের মধ্যে আছেন দিকপাল ফুটবলার শৈলেন মান্নার দাদা ধীরেন্দ্রনাথ মান্নাও। আগামী বৃহস্পতিবার থেকেই যে অনুষ্ঠান-প্রবাহের উদ্বোধন। ইডেনের ইতিহাস নিয়ে বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক রাজু মুখোপাধ্যায়ের বই উদ্বোধন দিয়ে যার শুরু।
অর্থাত্, মাঝে আর এক দিন। তার পর খেলাধুলোর শহরে ফুটবলের মতো ক্রিকেটেরও ঢাকে কাঠি।
• এক্কা গাড়িতে দুই অধিনায়কের আগমন।
• দেড়শো লেখা গোলাপের মালায় অধিনায়ক বরণ।
• জায়ান্ট স্ক্রিনে ইডেনের তথ্যচিত্র।
• প্রাক্তন ভারত অধিনায়কদের মাঠ প্রদক্ষিণ।
• ভিভিএস লক্ষ্মণের পটোডি স্মারক বক্তৃতা।