উদয়নের রান্নাঘরে পরিবেশনে ব্যস্ত। শুক্রবার দুপুরে ব্যারাকপুরে স্টিভ। —নিজস্ব চিত্র।
পাক্কা পনেরো বছর পর আজ ফের ইডেনে পা দিতে পারেন তিনি। তাও আবার বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে।
সেই ইডেন! পনেরো বছর আগে যে মাঠ তাঁর অস্ট্রেলিয়া টিমের অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়ে দিয়েছিল। ভিভিএস লক্ষ্মণের ঐশ্বরিক ২৮১ এবং হরভজন সিংহের হ্যাটট্রিকের সৌজন্যে।
২০০১-এর সেই মহা ম্যাচের ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখন সিএবি প্রেসিডেন্ট। যে প্রসঙ্গ তুললে চুপ করে যান স্টিভ ওয়। বলেন, ‘‘পনেরো বছর আগের একটা ম্যাচ দিয়ে ইডেনকে মনে রাখতে যাব কেন? কলকাতাকে মনে রাখব অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সেই সাতাশিতে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ জেতার ম্যাচটার জন্য।’’
একটু থেমে বললেন, ‘‘ভারত ফাইনালে নেই। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ফাইনালেও পুরো ভর্তি স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের ভিকট্রি ল্যাপের সময় স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়েছিল। যা আজও চোখ বুজলে দেখতে পাই।’’
এ বারও কি ওই দু’টো টিমই ফাইনাল খেলবে? শুনে চুপ করে যান গত শতাব্দীর শেষ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া টিমের ক্যাপ্টেন। প্রসঙ্গ পাল্টে এ বার বললেন, ‘‘শনিবার তো ইডেনে মেগা ম্যাচ। নিশ্চয়ই ইডেন পুরো ভরে যাবে।’’
কথা বলার ফাঁকেই মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে হোর্ডিংয়ের ছবি তুলতে লেগে গেলেন প্রাক্তন অজি ক্যাপ্টেন। যেখানে বাচ্চাদের মাঝে তাঁর ছবিই জ্বলজ্বল করছে। মাঝখানে লেখা—স্টিভদা কিপ হোল্ডিং আওয়ার হ্যান্ডস লাইক দিস। বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, স্টিভদা আমাদের হাতটা এ ভাবেই ধরে রেখো।
শুক্রবারের দুপুর। মাথায় উপর গনগনে রোদ। ঘড়ির কাঁটা ছুটছে দু’টোর দিকে। দমদম বিমানবন্দরে নেমেছিলেন সকাল দশটায়। এক ঘণ্টার মধ্যেই সেখান থেকে সোজা ব্যারাকপুরের উদয়ন হোমে। একদা সৌরভের টিমের দাপুটে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক যেন মাটির মানুষ। উদয়নের ডিরেক্টর ফাদার জোসের সঙ্গে প্রথমে গেলেন মেয়েদের হোস্টেলের দিকে। কচিকাঁচাদের গান শুনে এলেন সামনের মাঠে বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে। মিনিট পনেরো ব্যাট করে ডাইনিং হলে। যেখানে উদয়নের কচিকাঁচাদের সঙ্গে প্রথমে প্রার্থনায় বসলেন। তারপর প্রত্যেক বাচ্চাকে নিজের হাতে খাবার বেড়ে দিলেন তাদের স্টিভদা। পরার্থপর এই অস্ট্রেলিয়ানকে দেখলে তখন কে বলবে দিন কয়েক আগে এই মানুষটাকেই স্বার্থপর বলেছেন তাঁর একদা সতীর্থ শেন ওয়ার্ন। যে প্রসঙ্গ মনে করাতেই ‘স্টিভদা’-র চটজলদি উত্তর, ‘‘নো কমেন্টস। ওকে নিয়ে একটা কথাও নয়।’’
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মেগা ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে হাতের কাছে যদি ধরা দেন স্টিভন রজার ওয়, তা হলে তাঁকে ছাড়া যায় নাকি! হাজার নিষেধ সত্ত্বেও প্রশ্ন ছুটে গেল ভারত-পাক ম্যাচে ফেভারিট কে? মাথায় কাচাপাকা চুল ছোট করে ছাঁটা। পরনে নীল টি শার্ট আর কালো জিন্স। এ বার হেসেই ফেললেন স্টিভ। ‘‘এই ম্যাচটা সারাজীবনে না খেললেও, উত্তেজনাটা ভাল মতোই জানি। আমি নস্ত্রাদামুস নই। তবে এটা জানি, এই ম্যাচের কোনও ফেভারিট হয় না। ফিফটি-ফিফটি।’’
সেকেন্ড দশেক চুপ। তার পর নিজেই বললেন, ‘‘আফ্রিদি মাঝখানে রান পাচ্ছিল না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে রিদমে ব্যাট করল তাতে ওকে নিয়ে বিশেষ হোমওয়ার্ক করতে হতে পারে ইন্ডিয়াকে। ওকে ছন্দে খেলতে দিলেই কিন্তু মুশকিল। সঙ্গে মহম্মদ আমেরের পেস বোলিং...।’’
আর ভারতের ইউএসপি? স্টিভের উত্তর, ‘‘ব্যাটিং। বিশেষ করে কোহালি, রোহিত আর ধোনি। সঙ্গে ইডেনের দর্শক। পাক বোলিং ভার্সাস ইন্ডিয়ান ব্যাটিং। বহুদিন পর একটা জমজমাট ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।’’