এক জন ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা আইকন। টানা হাফডজন বিশ্বকাপ খেলার পর এই প্রথম মাঠের বাইরে। অন্য জন এ বারের বিশ্বকাপের অন্যতম উদ্যোক্তা দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের পাশপাশি ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের সবচেয়ে বিতর্কিত কোচও। সেই সচিন তেন্ডুলকর আর গ্রেগ চ্যাপেল যথাক্রমে আইসিসির জন্য বিশেষ কলাম এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া-এ সাক্ষাৎকারে ধোনির টিম ইন্ডিয়ার উদ্দেশে যা বললেন...
সচিনের ব্যাটিং-মন্ত্র...
পারথ আর ব্রিসবেনের জন্য: দুটো উইকেটই গতি ও বাউন্সের জন্য প্রসিদ্ধ। ফলে ব্যাটসম্যানদের এই দুটো মাঠে খুবই কম ভুল করার সুযোগ থাকবে। ব্যাটসম্যানরা যদি উইকেটের পেস আর বাউন্স ঠিক ভাবে আন্দাজ করতে পারে, তা হলেই একমাত্র বোলারদের শাসন করবে এখানে।
নিউজিল্যান্ডের মাঠের ঝোড়ো হাওয়ার জন্য: দেশটার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নিউজিল্যান্ডের মাঠগুলোয় এক ধরনের ঝোড়ো হাওয়ার প্রবণতা থাকে। এক-এক সময় সেটা এতটাই বেশি থাকে যে, ব্যাটসম্যানের শটের টাইমিংয়ের উপর সাংঘাতিক প্রভাব ফেলে। সে কারণে হাওয়ার বিরুদ্ধে ব্যাটিং করার সময় ব্যাটসম্যানের ব্যাটটা পিছনে ওঠে (ব্যাকলিফট) যেমন বেশি তাড়াতাড়ি তেমনি নেমে আসে (ডাউন সুইং) একটু দেরিতে। সাদা বলও অনেক তাড়াতাড়ি ব্যাটে আসে। যে ব্যাপারগুলো আবার অন্য প্রান্তের উইকেটে উল্টে যায়, যখন ব্যাটসম্যান হাওয়াকে পিছনে রেখে ব্যাটিং করে ওই দেশে। এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে শট অ্যাডজাস্ট করতে হবে।
কিছু মাঠের অদ্ভুত আকারের জন্য: নিউজিল্যান্ডের বেশির ভাগ মাঠের আকার চিরাচরিত গোলাকার নয়। অস্ট্রেলিয়ায় আবার অ্যাডিলেড ওভাল মাঠের আকার একেবারে তার নামের সমার্থক। এই মাঠগুলোর পয়েন্ট আর স্কোয়ার লেগ বাউন্ডারির দৈর্ঘ যত ছোট, সোজা বাউন্ডারি ঠিক ততটাই দীর্ঘ। বিদেশি দলগুলোর কাছে এটা বিরাট পার্থক্য তৈরি করে। যেহেতু তাদের ফিল্ডিং সাজানো আর বোলিং স্ট্র্যাটেজির উপর মাঠের অদ্ভুত আকার প্রভাব ফেলে থাকে। ব্যাটসম্যানদেরও স্কোয়ার অব দ্য উইকেটে বেশি শট খেলার জন্য তৈরি থাকতে হবে।
পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার কিছু মাঠ আবার বিরাট বড়। আমার মনে আছে, নিরানব্বইয়ের সিরিজে ওরা যখন বড় মাঠেও পুরো সাইজের বাউন্ডারি রেখে দিয়েছিল, আমি একবার রিকি পন্টিংয়ের থ্রোয়ে দৌড়ে চার রান নিয়েছিলাম। রিকির হাতে শক্তিশালী থ্রো থাকা সত্ত্বেও বুঝেছিলাম, অত দূর থেকে বল উইকেটকিপারের কাছে পৌঁছতে একটু বেশি সময় লাগবেই।
গ্রেগের চোখে ভারতের সম্ভাবনা...
টিম ইন্ডিয়ার চেহারা: ওদের হয়তো অস্ট্রেলিয়ায় এ বারের গ্রীষ্মটা এখনও দারুণ কাটেনি, কিন্তু দু’দেশের মধ্যে একটা সিরিজ আর বিশ্বকাপ সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। আমার তো মনে হয়, বিশ্বকাপে ভারতীয় দলকে অন্য চেহারায় দেখবেন।
সেমিফাইনাল-আশা: টুর্নামেন্টের এই পর্যায় থেকে আমি দারুণ আমি আগ্রহ নিয়ে বিশ্বকাপ দেখব। শেষ চারে আশা করব, টুর্নামেন্টের ভাল দলগুলোই উঠবে। আর সেই ভাল দল হয়ে ওঠার জন্য এই মাপের টুর্নামেন্টে আপনাকে খুব ভাল খেলতে হবে। আবার সেমিফাইনাল থেকে চূড়ান্ত যুদ্ধে তারাই সফল হয়, যারা সেই বিশেষ দিনটায় প্রতিপক্ষের চেয়ে ভাল খেলে। এ বারের বিশ্বকাপেও তার অন্যথা ঘটবে না।
ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কে: দক্ষিণ আফ্রিকা দারুণ তৈরি দল। শৃঙ্খলাপরায়ণ। ম্যাচে যখন যে কাজটা দরকার সেটাই করে থাকে। পরিবেশ অনুযায়ী সঠিক বোলিং আক্রমণ আছে ওদের।
পাকিস্তানকেও অস্ট্রেলীয় পরিবেশে মুছে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ এখনও ওদের পেস বোলিং বিভাগ বেশ ভাল।
একই কথা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সম্পর্কেও বলব।
সব মিলিয়ে যদিও আমার মতে কাপ তোলার প্রধান দাবিদার অস্ট্রেলিয়া। তবে যুগ্ম সংগঠক নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং ভারতও ফেভারিটের তালিকায় থাকবে। আর এ বারের বিশ্বকাপে আমার ডার্ক হর্স হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।