মৃত অনিকেত শর্মা।—নিজস্ব চিত্র।
প্রতিদিনের মতোই সকালে অনুশীলন করতে নেমেছিলেন পাইকপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেটার অনিকেত শর্মা। এ দিন আর ফিরে এলেন না। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মাঠেই লুটিয়ে পড়লেন ২১ বছরের যুবক।
বুধবার থেকে মিলন সমিতির বিরুদ্ধে ম্যাচ ছিল তাঁর দলের। তাই মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে টালা পার্ক মাঠে অনুশীলন করছিলেন অনিকেত ও তাঁর সতীর্থেরা। হাল্কা গা ঘামানোর পরে ফুটবল খেলায় উদ্যোগী হন অনিকেত নিজেই। দুই দল ভাগ করার সময় হঠাৎই মুখ থুবড়ে পড়ে যান তিনি। ক্লাবের তরফে তাঁকে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক পরীক্ষার পরে অনিকেতকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তারেরা।
প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানের। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাচ্ছে না। ঘটনার সময় অনিকেতের পাশেই ছিলেন সতীর্থ বিপ্লব রায়চৌধুরী। পরে তিনি বললেন, ‘‘হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়ে গেল ও। ভেবেছি, মজা করছে। কিন্তু দু’-তিনবার ডাকার পরেও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। দেখি, চোখ উল্টে গিয়েছে। তখনই অ্যাপ ক্যাব ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।’’
পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, শরীরে কোনও সমস্যা ছিল না অনিকেতের। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল খড়গপুর গোলবাজারের বাসিন্দার। সেই স্বপ্ন রূপায়ণের তাগিদে পাঁচ বছর আগে কোচ সুশীল সিকাড়িয়ার সঙ্গে কলকাতায় আসা। সুশীলবাবু বলছিলেন, ‘‘এক জন ক্রিকেটারের যে এ ভাবে মৃত্যু হতে পারে, তা ভাবতেই পারি না।’’
আরও পড়ুন: একুশেই থামল বিট্টুর ইনিংস
আট বছর বয়সে খড়গপুরের সাউথ স্টার ক্লাবে ক্রিকেট শুরু করেন অনিকেত। সেখান থেকে পিকে সান্যাল মেমোরিয়াল কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। চার নম্বরে নামতেই বেশি পছন্দ করতেন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। সিএবি-র অনূর্ধ্ব-১৪ অম্বর রায় প্রতিযোগিতায় ভাল খেলার পরে কলকাতার সিটি অ্যাথলেটিক ক্লাবে সুযোগ পান। গত বছর সত্যসন্ধি ক্লাবের হয়ে ভাল খেলায় প্রথম ডিভিশন ক্লাবে ডাক পান তিনি। বাবা কমল শর্মা ও মা নিপাদেবীকে কথা দিয়েছিলেন, বড় ক্রিকেটার হবেন তাঁদের একমাত্র সন্তান। সেই প্রতিশ্রুতি আর পূরণ করা হল না অনিকেতের। পুত্রহারা কমলবাবুর মুখে বার বার শোনা গেল একটাই কথা, ‘‘জীবনের কী অর্থ আর? বুঝে পাচ্ছি না!’’