ইংল্যান্ডের অজুহাত দেওয়ার জায়গা নেই

আমার এখনকার মনের অবস্থা ঠিকঠাক বোঝাতে গেলে একটা কথাই বলতে হয়— প্রচণ্ড হতাশ। এই ইউরোয় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অঘটন যে ইংল্যান্ডের ছিটকে যাওয়া সেটা সহজেই বলে দেওয়া যায়।

Advertisement

পিটার শিল্টন

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০৪:৩৭
Share:

পিটার শিল্টন

আমার এখনকার মনের অবস্থা ঠিকঠাক বোঝাতে গেলে একটা কথাই বলতে হয়— প্রচণ্ড হতাশ। এই ইউরোয় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অঘটন যে ইংল্যান্ডের ছিটকে যাওয়া সেটা সহজেই বলে দেওয়া যায়। বিশেষ করে সেটা আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে হওয়ায়। গোটা টুর্নামেন্টে অপেক্ষা করেছিলাম কখন ইংল্যান্ড ভাল খেলবে। যদিও টুর্নামেন্টে এর আগে তিনটে ম্যাচে ইংল্যান্ড দাপটেই খেলেছিল। কিন্তু যে দিন সেটা সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল, আমরা সহজ দুটো গোল খেয়ে বসলাম। ঠিক যে ভয়টা আমি পাচ্ছিলাম সেটাই হল।

Advertisement

প্রথম গোলটার কথায় আসি। একটা বেসিক লং শট। পাড়ার ফুটবলেও কেউ ওই শটে গোল খায় না। স্কুলবয় গোল। প্রথম গোলটা যদি বিশ্রী রক্ষণের ফল হয় তা হলে দ্বিতীয় গোলটার জন্য জঘন্য গোলকিপিং আর ডিফেন্ডিং দুটোই দায়ী। ট্র্যাজেডি হল এই ইংরেজ ফুটবলারদের মধ্যে অনেকেই ক্লাবের হয়ে এ বার ভাল খেলেছে। কিন্তু দেশের জার্সিতে খেলার চাপই হোক বা সম্ভবত মাঠে কী করছে সেটা বুঝে উঠতে না পারার জন্যই হোক, যত খেলা গড়িয়েছে তত ইংল্যান্ডের খেলা তলিয়ে গিয়েছে।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি হ্যারি কেন্ আর জেইমি ভার্ডিকে কেন একটাও ম্যাচে প্রথম থেকে নামানো হল না। শুরুর দিকে কেন্ একাই নামছিল। তার পর ড্যানিয়েল স্টারিজ আর ভার্ডিকে একসঙ্গে নামানো হল। এর পর কেন্ আর স্টারিজ। এমনকী স্টারিজের চোট কাটিয়ে ওঠার লড়াই, গোটা মরসুমে কখনও মাঠে কখনও বাইরে থাকার ব্যপারটা থাকার পরও। টুর্নামেন্টের প্রথম দিকে ইংল্যান্ডের টিম নিয়েও আমি খুশি নই। যেখানে রহিম স্টার্লিং আর অ্যাডাম লাল্লানাকে খেলানো হল ওয়েন রুনির সঙ্গে। মনে হল যেন রয় হজসন জেতার ফর্মুলা খোঁজার জন্য মরিয়া হলেও সেরা টিম কী হবে সেটা জানে না।

Advertisement

তবে এ সব বলার পরও মানতেই হবে এই হারের পর ইংল্যান্ডের কোনও অজুহাত দেওয়ার জায়গা নেই। তার পর এই ব্যাপারটাও ধরুন যে আইসল্যান্ডের ক্যাপ্টেন অ্যারন গুনারসন ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় ডিভিশন ফুটবলে খেলে। তাতে অন্তত খাতায় কলমে ইংল্যান্ডকে ওদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে রেখেছিল। হয়তো আইসল্যান্ড সমর্থকদের গ্যালারি মাতানো সেই ভাইকিং গানই ওদের আরও তাতিয়ে দিয়েছে। যেটা শুনে বাড়িতে টিভিতে দেখতে দেখতেই আমি সতর্ক হয়ে গিয়েছিলাম, কল্পনা করতে পারছিলাম মাঠে অবস্থাটা কী!

এই হারের পর একটা টিমের বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। ১৯৭৩-এ এ রকমই একটা পরিস্থিতির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের সে বার বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে পোল্যান্ডকে হারাতে হত। শেষ পর্যন্ত আমরা ম্যাচটা ১-১ ড্র করি। সে বছর পোল্যান্ড ভাল খেলছিল। টুর্নামেন্টেও শেষ করেছিল তিন নম্বরে। তবুও ওয়েম্বলিতে সে দিন আমরা ওদের থেকে অনেক শক্তিশালী দল ছিলাম। পোলিশ গোলকিপার জ্যান টমাসজেস্কি চার-পাঁচটা গোল বাঁচিয়ে ওদের জয়ে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল। আর আমি একটা শক্তিশালী শট ফস্কেছিলাম। তার জন্য কম সমালোচনা সহ্য করতে হয়নি। আমাদের দলের অনেকেই ম্যাচটার পর চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। কল্পনা করতে পারছি এই হারটার পর ইংল্যান্ড ফুটবলারদের সময়টাও কতটা খারাপ যেতে পারে। তবে এখনকার ফুটবলারদের আমি ঠিক বুঝি না। জানি না সত্যিই এদের অতটা যন্ত্রণা হয় কি না। নাকি এই ব্যর্থতাও তাদের কাছে আর পাঁচটা দিনের মতো। যেটা ক্ষুব্ধ সমর্থকদের অনেকেই দাবি করছেন।

যাই হোক, এ বার কোয়ার্টার ফাইনালের জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষায় সবাই। যে যুদ্ধে জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম আর পর্তুগালকেই অনেকে হয়তো ফেভারিট বলে ধরবেন। কিন্তু এ বারের ইউরোয় যে ভাবে অঘটন হচ্ছে আমি কাউকে এগিয়ে রাখার সাহস পাচ্ছি না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement