Moin Ejaz

E-Sports: সময় নষ্ট নয়, ভিডিয়ো গেম খেলেও রোজগার করা যায় কোটি টাকা, বলছেন কমনওয়েলথে ব্রোঞ্জজয়ী বাংলার মইন

বাংলা থেকে অচিন্ত্য শিউলি, সৌরভ ঘোষালই নয়, পদক পেয়েছেন আরও এক জন। সেই মইন ইজাজ কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ১৮:২৪
Share:

ব্রোঞ্জ পদক হাতে মইন ছবি টুইটার

কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতে ফেরার পর থেকেই আকর্ষণের কেন্দ্রে অচিন্ত্য শিউলি। ভারোত্তোলনে পদক জিতেছেন হাওড়ার দেউলপুরের ছেলে। মাতামাতি হচ্ছে সৌরভ ঘোষালকে নিয়েও, যিনি স্কোয়াশে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। অথচ এই বাংলা থেকেই আরও এক জন পদক জিতে ফিরেছেন, যাঁকে ঘিরে না আছে কোনও উচ্ছ্বাস, না কোনও মাতামাতি।

Advertisement

তিনি মইন ইজাজ। খাস উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের ছেলে। খুব ছোট করে তাঁর পরিচয় দিতে গেলে বলতে হয়, তিনি ভিডিয়ো গেম খেলেন। কমনওয়েলথ গেমসে ই-স্পোর্টসে তিনি ব্রোঞ্জ জিতেছেন। এই খেলায় বাইরে গিয়ে ঘাম ঝরাতে হয় না। তাঁর খেলায় স্রেফ টেবিল-চেয়ার, একটি অত্যাধুনিক কম্পিউটার হলেই চলে। দৃষ্টি সব সময় থাকে কম্পিউটারের মনিটরের দিকে। তাঁর খেলায় সেই উচ্ছ্বাস, মাতামাতি, অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ, সমর্থক নেই বলেই হয়তো উৎসাহ কম।

তাতে অবশ্য কোনও আক্ষেপ নেই মইনের। সোমবার স্বাধীনতা দিবসে মহমেডান ক্লাবে সংবর্ধনা নিতে এসে চোখের সামনে দেখলেন অচিন্ত্যকে নিয়ে মাতামাতি। তিনি রইলেন কিছুটা আড়ালেই। পরে আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “আক্ষেপ থাকবে কেন? আমাদের খেলাটা যে কমনওয়েলথে রয়েছে, সেটাই তো অনেকে জানেন না। এ বারই প্রথম আমরা কমনওয়েলথ গেমসে খেলার সুযোগ পেয়েছি। পদক জেতার পর লোকে এই খেলার ব্যাপারে জানতে পারছে। এই সচেতনতা আরও বাড়বে আগামী দিনে। আশা করি পরের কমনওয়েলথের আগে আরও অনেক লোক এই খেলার ব্যাপারে জানতে পারবে।”

Advertisement

গেম খেলায় ব্যস্ত মইন ছবি টুইটার

গোটা বিশ্বে অনেক দিন ধরেই ই-স্পোর্টসের প্রচলন রয়েছে। তবে ভারতে চর্চা শুরু বছর পাঁচ-সাত আগে থেকে। ভিডিয়ো গেম খেলে যে মোটা টাকা রোজগার করা যায়, এটাই অনেকে জানতেন না। এখনও হয়তো জানেন না। তবে মইন জানিয়েছেন, ভিডিয়ো গেম খেলে কোটি টাকাও আয় করা সম্ভব। শুধু বুদ্ধি এবং মনোযোগ থাকলেই হবে।

মইন যে গেমে পারদর্শী, তার নাম ‘ডিওটিএ ২’ বা ‘ডোটা’। পুরো নাম ‘ডিফেন্স অব দ্য অ্যানসিয়েন্ট’। এক একটি ম্যাচে পাঁচ জনের দু’টি দল খেলে। প্রত্যেকের কাজ হল নিজের এলাকা রক্ষা এবং বিপক্ষের এলাকা দখল করা। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের একটি নিজস্ব চরিত্র (ক্যারেক্টার) থাকে। তাঁরা স্বাধীন ভাবে একটি ক্যারেক্টারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সেই ক্যারেক্টারগুলিকে ‘হিরো’ নামে ডাকা হয়। প্রত্যেক ‘হিরো’র নিজস্ব দক্ষতা এবং শক্তি রয়েছে। প্রত্যেক ‘হিরো’কে ‘এক্সপিরিয়েন্স পয়েন্ট’ এবং ‘আইটেম’ সংগ্রহ করে তাই দিয়ে বিপক্ষকে ঘায়েল করতে হয়। গোটা খেলাতেই দরকার বুদ্ধি, সঠিক রণকৌশল এবং পরিকল্পনা। এক চুল এদিক-ওদিক হলেই বিপক্ষের হাতে মারা পড়তে হবে।

ছোট থেকেই ভিডিয়ো গেম খেলা শুরু করেন মইন। শুরুর দিনগুলির সম্পর্কে বললেন, “সাত বছর বয়স থেকে আমার খেলা শুরু। এক দিন হঠাৎ বাবাকে দেখি ব্যক্তিগত কাজের জন্য কম্পিউটার নিয়ে আসতে। বাবার কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে কম্পিউটারে ভিডিয়ো গেম খেলা শুরু করি। বরাবরই নতুন নতুন গেমের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। পরে এক বন্ধুর থেকে ‘ডোটা’র ব্যাপারে জানতে পারি। আমাকে বলেছিল গেমটা নাকি দারুণ। আমিও খেলতে খেলতে ভালবেসে ফেললাম। কৌশল দেখাতে হয় বা বুদ্ধি খাটাতে হয়, এ রকম গেম আমার খুব ভাল লাগে।”

পদকজয়ী ভারতীয় দল। একদম বাঁ দিকে মইন ছবি টুইটার

ভিডিয়ো গেমের প্রতি এই প্রেম থেকেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে শুরু করেন মইন। তবে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করলেন এ বারই প্রথম। কমনওয়েলথে ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। মইন ছাড়াও দলে ছিলেন কেতন গয়াল, অভিষেক যাদব, শুভম গোলি এবং বিশাল বেরনেকর। ব্রোঞ্জ পদক জয়ের ম্যাচে তাঁরা ২-০ হারান নিউজিল্যান্ডকে। মইনের আশা, আগামী দিনে ভারত থেকে আরও অনেক খেলোয়াড় এগিয়ে আসবেন।

বলেছেন, “এখন ভারতে ই-স্পোর্টস অনেক বেশি প্রচার পাচ্ছে। ই-স্পোর্টস শিল্প এখন গোটা দেশে ছড়িয়ে গিয়েছে। ১০ বছর আগে কোনও প্রতিযোগিতা হত না। তার পরে ছোটখাটো ১০-১৫ হাজার টাকার প্রতিযোগিতা হত। এখন ভারতে ১০ কোটি, ১০০ কোটির প্রতিযোগিতাও হয়। আসলে খেলাটা আমাদের দেশে নতুন। ধীরে ধীরে প্রচার পাচ্ছে। আরও বেশি লোক জানতে পারলে জনপ্রিয়তা বাড়বে।” তাঁর সংযোজন, “ই-স্পোর্টসের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। পাবজি, ফিফা গেম খেলে অনেকে বিরাট উপার্জন করছে। ডোটা একটু কঠিন গেম। কী ভাবে খেলা হয় সেটাই অনেকে জানে না। আমরা পদক জেতার পর আশা করছি অনেকে এই গেমের ব্যাপারে জানতে পারবে। খেলতে এগিয়ে আসবে।”

ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের ভিডিয়ো গেম খেলতে বারণ করেন। তাঁদের কাছে ভিডিয়ো গেম মানে স্রেফ সময় নষ্ট। মইন একেবারেই মানতে রাজি নন। তাঁর মতে, যদি ছোটবেলা থেকেই কারওর ভিডিয়ো গেমের প্রতি উৎসাহ থাকে, তা হলে তার পাশে দাঁড়ানো উচিত। এ ভাবেই নতুন প্রতিভা পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহু দল বসে আছে, যারা প্রতিভাবান খেলোয়াড় খোঁজে। সে রকম কোনও দল পেয়ে গেলে মাসে এক থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা রোজগার করা সম্ভব। পাশাপাশি প্রতিযোগিতা জিতলে আলাদা অর্থ তো রয়েছেই।

তাই জন্যেই মইন বলেছেন, “এখনই এই খেলায় আসার সেরা সময়। ভিডিয়ো গেম খেলা মানে সময় নষ্ট, এমনটা মোটেই নয়। পদক জেতার পর আশা করছি বাবা-মায়েরা সন্তানদের ভিডিয়ো গেম খেলতে উৎসাহ দেবেন।”

কমনওয়েলথে পদক এসেছে। মইনের এ বার পাখির চোখ এশিয়ান গেমস। ইতিমধ্যেই যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছেন। এশিয়াডে তিনিই দলকে নেতৃত্ব দেবেন। তবে লড়াই কঠিন। কারণ, এশিয়াডে খেলবেন চিনের খেলোয়াড়রা, যাঁরা ধারে-ভারে অনেক শক্তিশালী। তবে মইন প্রত্যয়ী, কমনওয়েলথের পর এশিয়াড থেকেও পদক আসবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement