কোহলি, রোহিতদের ভূমিকা নিয়ে উঠল প্রশ্ন। —ফাইল ছবি।
দিল্লির যন্তর মন্তরে শান্তিপূর্ণ ধর্না দিচ্ছেন কুস্তিগিররা। দেশের ক্রীড়াবিদদের অনেকে তাঁদের আন্দোলনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। দেশের প্রথম সারির ক্রিকেটাররা এখনও কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেননি। তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আন্দোলনের অন্যতম মুখ বিনেশ ফোগাট।
রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি-সহ দেশের প্রথম সারির ক্রিকেটাররা এখন ব্যস্ত রয়েছেন আইপিএল নিয়ে। কুস্তিগিরদের আন্দোলন নিয়ে তাঁরা কেউই মন্তব্য করেননি। মুখ খোলেননি অন্য খেলার সঙ্গে যুক্ত প্রথম সারির অনেক ক্রীড়াবিদও। তাঁদের নীরবতায় ব্যথিত হয়ে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিনেশ। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেছেন, ‘‘ওঁদের যথেষ্ট সাহস নেই।’’
কথা বলার সময় বিনেশের গলায় শোনা গিয়েছে কিছুটা আক্ষেপের সুর। তিনি বলেছেন, ‘‘গোটা দেশ ক্রিকেটকে ধর্ম মনে করে। অথচ এক জন ক্রিকেটারও মুখ খুললেন না। আমরা বলছি না যে, আমাদের সমর্থনেই বক্তব্য রাখতে হবে। কিন্তু কোনও নিরপেক্ষ বার্তা তো দিতে পারতেন কেউ। ন্যায়বিচারের পক্ষে তো কিছু বলতে পারতেন। এটাই আমাকে সব থেকে কষ্ট দিচ্ছে। ক্রিকেটার, ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়, অ্যাথলিট, বক্সার— সকলের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে।’’
এই প্রসঙ্গে বিনেশ তুলেছেন ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্স’ আন্দোলনের প্রসঙ্গ। তিনি বলেছেন, ‘‘আমেরিকায় যখন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্স আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন বিশ্বের বড় বড় ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা মুখ খুলেছিলেন। আমাদের দেশে বড় মাপের ক্রীড়াবিদ নেই এমন নয়। তাঁদের অধিকাংশই ক্রিকেটার। সে সময় তাঁরা অনেকেই সমর্থন করেছিলেন। অথচ এখন সকলে চুপ! আমরা কি এটুকুর যোগ্যও নই?’’
বিনেশের আক্ষেপ, তিনি এবং বজরং পুনিয়া দেশের সব ক্রীড়াবিদদের একটি খোলা চিঠি দিয়েছিলেন। সমাজমাধ্যমে বার্তা দিয়ে ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুক্তরা সমর্থন জানালেও প্রথম সারির ক্রীড়াবিদদের একাংশের কোনও বার্তা তাঁরা পাননি। বিনেশ বলেছেন, ‘‘জানি না তাঁরা কোনও কারণে ভয় পাচ্ছেন কি না। হয়তো তাঁরা ভাবছেন, মুখ খুললে স্পনসরশিপ হারাতে হতে পারে। তাঁদের বিজ্ঞাপনের বাজারে প্রভাব পড়তে পারে। হয়তো সেই ভয় থেকেই তাঁরা অন্য অ্যাথলিটদের সঙ্গে গলা মেলাতে ভয় পাচ্ছেন।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও সাফল্য পেলে সকলে অভিনন্দন জানান। সে সময় ক্রিকেটাররাও সমাজমাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা দেন। তা হলে এখন কী হল! ওঁরাও কি তা হলে প্রশাসনকে ভয় পান? না কি তাঁদের মধ্যেও এমন কোনও সমস্যা রয়েছে, যে মুখ খুলতে পারছেন না।’’
বিনেশের মতে, অব্যবস্থা বন্ধ করার দায়িত্ব দেশের প্রথম সারির ক্রীড়াবিদদেরই নিতে হবে। দু’বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জয়ী কুস্তিগিরের দাবি, ‘‘সব ক্রীড়াবিদরা এখানে একসঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হলে গোটা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। কেউ নিশ্চিন্তে ঘুমাতেও পারবেন না। কিন্তু বড় ক্রীড়াবিদরা মুখ বন্ধ করে থাকলে, বাকিরা কী করবে? সব ক্রীড়া সংস্থাতেই কিছু না কিছু সমস্যা রয়েছে। অন্য খেলার সঙ্গে যুক্ত অনেকে আমার ভাল বন্ধু। তার মধ্যে কোনও ভণিতা থাকা উচিত নয়। আমি যেমন ওদের খেলা দেখতে যাই, ওরাও অনেকে আমার খেলা দেখতে আসে। আমরা একসঙ্গে ছবি তুলি। পদক জিতলে পরস্পরকে অভিনন্দন জানাই। এক জন ক্রীড়াবিদ অন্য এক জন ক্রীড়াবিদের থেকে এইটুকু সমর্থন তো আশা করতেই পারে।’’
মানুষের একাংশের প্রতিক্রিয়া নিয়েও খুশি নন বিনেশ। তিনি বলেছেন, ‘‘অনেকে বলছেন, কুস্তিগিরদের মাথা ঠিক নেই। কিন্তু আমি বলব, আমাদের মস্তিষ্ক এবং মন একদম ঠিক রয়েছে। কেউ যদি মনে করেন, তিনি তা হলে নিজের মাথা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।’’
ধর্নারত তিন কুস্তিগিরের ছবি দিয়ে সমাজমাধ্যমে কপিল দেব লিখেছিলেন, ‘‘এরা কত দিনে বিচার পাবে?’’ কুস্তিগিরের পাশে দাঁড়িয়ে বার্তা দিয়েছেন অলিম্পিক্স সোনা জয়ী শুটার অভিনব বিন্দ্রাও। তাঁদের উদাহরণ দিয়ে বিনেশ বলেছেন, ‘‘আমরা খেলা থামাব না। আরও বেশি পরিশ্রম করব। দেশকে আরও পদক এনে দেব। এখন যাঁরা আমাদের পাশে থাকতে ভয় পাচ্ছেন, তাঁরা দয়া করে সাফল্য পেলেও আমাদের অভিনন্দন জানাবেন না।’’ সর্বভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণের শাস্তির দাবিতে অনড় কুস্তিগিররা।