মরিয়া: মেসিদের নিয়ে কাপ জেতাই লক্ষ্য সাম্পাওলির। ফাইল চিত্র
ইউরোপের ফুটবলপ্রেমীরা মনে করেন আসন্ন বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা কোচ আর্জেন্তিনার হর্হে সাম্পাওলি। কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি তাঁর নিজের দেশে। আর্জেন্তিনার অধিকাংশ মানুষই সাম্পাওলিকে সেরা কোচ বলে মনে করেন না।
কেন? সাম্পাওলির যাবতীয় সাফল্য চিলির কোচ হিসেবে। ২০১৭ সালের ২০ মে আর্জেন্তিনা জাতীয় দলের দায়িত্ব নেন তিনি। কিন্তু গত এক বছরে বিশ্ব ফুটবলে সে ভাবে কোনও ছাপ ফেলতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয়ত, লিয়োনেল মেসির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা। বার্সেলোনা তারকা ছন্দে না থাকলে পুরো দলটাই মুখ থুবড়ে পড়ে। কারণ, দল হিসেবে আর্জেন্তিনাকে গড়ে তুলতে এখনও সফল নন তিনি। অবশ্য সাম্পাওলি নিজেই বলছেন, তিনি আর্জেন্তিনার কোচ ঠিকই। কিন্তু দলটা আসলে মেসির! এই পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপে যে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে চলেছেন আর্জেন্তিনীয় কোচ, তা স্পষ্ট। ১৬ জুন প্রথম ম্যাচেই মেসিদের প্রতিপক্ষ আইসল্যান্ড। প্রথম বার বিশ্বকাপের মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করলেও তাদের একেবারেই হাল্কা ভাবে নেওয়া যাবে না। দু’বছর আগে ইউরো কাপেও প্রথম বার যোগ্যতা অর্জন করেছিল আইসল্যান্ড। কিন্তু ফ্রান্সে অভিষেকেই চমকে দিয়েছিল বরফের দেশের ফুটবলাররা। ইংল্যান্ডকে ইউরো কাপ থেকে ছিটকে দিয়ে শেষ আটে উঠেছিল আইসল্যান্ড। যদিও কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হারেন জিলফি সিগুর্দসন-রা।
এই বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনার গ্রুপেই রয়েছে শক্তিশালী নাইজিরিয়া ও ক্রোয়েশিয়া। নক-আউটে উঠবে গ্রুপ থেকে দু’টো দল। ফুটবল পণ্ডিতদের মতে, এই মারণ গ্রুপ থেকে নক-আউটে যোগ্যতা অর্জন করা একেবারেই সহজ হবে না আর্জেন্তিনার। তাই এমন রণনীতি তৈরি করতে হবে সাম্পাওলিকে, যেখানে মেসিকে সেরা ছন্দে পাওয়া যাবে। তা হলেই কোচ হিসেবে সাম্পাওলিকে সফল বলা যাবে।
আর্জেন্তিনা জাতীয় দলের আরও একটা সমস্যা, ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের পরে বারবার কোচ বদল। চার বছর আগে জার্মানির বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের পরে পদত্যাগ করেন আলেসান্দ্রো সাবেয়া। বার্সেলোনার প্রাক্তন ম্যানেজার সেরার্দো মার্তিনোর কোচিংয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন পর্বে অভিযান শুরু করে আর্জেন্তিনা। কিন্তু ২০১৬-তে শতবার্ষিকী কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির বিরুদ্ধে হারের পরে তিনিও দায়িত্ব ছাড়েন। এর পরে কোচ হন এদগার্দো বাউজার। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল তিনি যখন দায়িত্ব ছাড়েন, কনমেবল (দক্ষিণ আমেরিকা) গ্রুপে পাঁচ নম্বরে ছিল আর্জেন্তিনা। এর পরে কোচ হন সাম্পাওলি। কিন্তু বিশ্বকাপের জন্য দলগঠন করতে গিয়ে বারবারই সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে।
১৯৯৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে আর্জেন্তিনা পাঁচ বার অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতেছে। অথচ সিনিয়র দলের জন্য সে ভাবে প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার উঠে আসেনি। গত এক দশকে অবিশ্বাস্য ভাবে মান খারাপ হয়েছে আর্জেন্তিনার যুব দলের। বিশেষ করে, রক্ষণে। কোনও ভাল ডিফেন্ডার উঠে আসেনি। ফলে ২০১৪ বিশ্বকাপে খেলা ২৩ জন ফুটবলার রয়েছেন এ বারের আর্জেন্তিনা দলে। যাঁদের বয়স তিরিশ পেরিয়ে গিয়েছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনা দলের মাত্র তিন জনের বয়স পঁচিশের নীচে। এঁরা হলেন, পাবলো দেবালা, ক্রিস্টিয়ান পাভোন ও জিয়োভানি লো সেলসো। অথচ প্রতিবেশী দেশে উরুগুয়ে শিবিরে রয়েছেন আট জন অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলের ফুটবলার। যাঁদের অনেকে ইতিমধ্যেই প্রথম একাদশে নিজেদের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে সাম্পাওলির রণনীতি নিয়েও। চিলির কোচ থাকার সময় প্রেসিং ফুটবলই ছিল তাঁর প্রধান। আর্জেন্তিনাকেও একই ভাবে খেলাতে চাইছেন তিনি। যা দলের ছন্দ নষ্ট করে দিচ্ছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত।