উল্লাস: উদ্বেগ কাটিয়ে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে প্রথম গোল করার পরে নেমারের সেই ডানা মেলে ওড়ার ভঙ্গি। সোমবার সামারা এরিনায়। ছবি: গেটি ইমেজেস
নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র) মনে করেন, রাশিয়া বিশ্বকাপে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। ব্রাজিলীয় মহাতারকার লক্ষ্য মেক্সিকোর কোচ খুয়ান কার্লোস ওসোরিয়ো। ক্ষোভের কারণ মেক্সিকো কোচ নাম না করেই তাঁর বিরুদ্ধে ‘যা ইচ্ছে তাই বলেছেন’।
সামারায় ম্যাচের পরে ওসোরিয়ো বলেন, ‘‘দূর্ভাগ্য ও লজ্জার বিষয় হল একজন ফুটবলারের জন্য আমাদের প্রচুর সময় নষ্ট হয়েছে। এই খেলাটা শক্তিশালী মানুষদের খেলা। ব্যক্তির খেলা। কিন্তু এখানে এত এত অভিনয় সত্যি মানা যায় না।’’
ওসোরিয়োর কথায় বিরক্ত নেমারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা আমার ভাবমূর্ত্তি নষ্ট করার চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু না।’’ ক্ষিপ্ত ব্রাজিলীয় তারকার আরও কথা, ‘‘এই সব সমালোচনাকে পাত্তা দিই না। কারণ এগুলো নিয়ে ভাবলে একজন খেলোয়াড়ের খেলায় তার প্রভাব পড়ে। শেষ দুটো ম্যাচের পরে আমি কথা বলিনি কারণ, অনেকে মিলে বড্ড বেশি কথা বলছিল আর উত্তেজিত হচ্ছিল। জানি না এ সব লোক দেখানো কি না। এখানে এসেছি সতীর্থদের নিয়ে ম্যাচ জিততে। অন্য কিছু করতে নয়।’’
নেমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বার বার তিনি মারাত্মক আহত হওয়ার ‘অভিনয়’ করছেন। ব্রাজিলের কোচ তিতেও এই ধরনের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেছেন, ‘‘ঘটনার ভিডিয়ো দেখুন। তখন দেখবেন আপনাদের কিছুই বলার থাকবে না।’’ বোঝাই যাচ্ছে তিতে রেফারির পক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু মেক্সিকো কোচ ওসোরিয়ো ঠিক উল্টোটা মনে করছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রেফারি পুরোপুরি ব্রাজিলের হয়ে খেলে গেল।’’
সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘আমার তো খেলা দেখে মনে হচ্ছিল ওদের ফরোয়ার্ডরা সারাক্ষণ অপেক্ষা করেছে কখন আমাদের ফুটবলারের সঙ্গে সামান্যতম সংঘর্ষ হবে। আর রেফারি মুহূর্তে মুহূর্তে ফাউল দেওয়ার জন্য তৈরিই ছিল।’’
নেমার কিন্তু এ সব বিতর্ক এড়িয়ে মেক্সিকোর প্রশংসাই করেছেন। সঙ্গে এটাও বুঝিয়েছেন বিপক্ষের খেলা তাঁদের কাছে একটা সময় যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সতীর্থদের উদ্দেশ্য করে তাঁর কথা, ‘‘আমাদের যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। তা থেকে শিখতেও হবে। কঠিন একটা ম্যাচ আমরা খেললাম। ভাল করেই জানতাম বিপক্ষ দলের ক্ষমতার কথা। সত্যিই মেক্সিকো দারুণ দল!’’
সোমবার মেক্সিকোর বিরুদ্ধে খেলার ৫১ মিনিটে উইলিয়ানের ক্রস-এ পা লাগিয়ে গোল করেন নেমার। ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোলটিও হয়েছে তাঁর পাস থেকেই। বিশ্বকাপে নেমারের মোট ছ’টি গোল হয়ে গেল। তবে কম যাননি চেলসির ব্রাজিলীয় উইঙ্গার উইলিয়ানও। ফুটবল বিশ্লেষকদের মতে, ম্যাচে সারাক্ষণ তিনি যে ভাবে বিপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন, তার জন্য কোনও প্রশংসা যথেষ্ট নয়। অথচ সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১-১ ম্যাচে এই উইলিয়ানই ব্যর্থ হন। সাংবাদিক সম্মেলনে উইলিয়ান বলেন, ‘‘আমি নিজের খেলায় খুশি। তবে অনেক বেশি খুশি দল জেতায়।’’
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ব্রাজিল কোচ তিতেও। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমার প্রত্যাশা ছিল আগের মতোই খেলবে দল। অথবা তার চেয়েও ভাল। আর সেটাই হল শেষ পর্যন্ত। আমি কিন্তু আমার এগারো জনের কথা শুধু বলছি না। বলছি পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে যারা নেমেছিল তাদের কথাও। আমাদের দলের সব চেয়ে বড় শক্তি বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভারসাম্য।’’
তিতে যোগ করেন, ‘‘শুনলাম কেউ কেউ বলছেন, এ বারের ব্রাজিল যেন জাতীয় দলের মতো খেলছে না। খেলছে একটা ক্লাব দলের মতো। সত্যিই এই কথাটা আমার কাছে প্রশংসাই। আমি দলের সব ফুটবলারকে সে কথা বলেছিও।’’ তিতের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন ব্রাজিলের সহকারী কোচ সিলভিনো। তিনি আবার উচ্ছ্বসিত উইলিয়ানকে নিয়ে। তাঁর কথা, ‘‘উইলিয়ানের খেলা চিরকাল দর্শনীয়। তবে দলে আমরা বলতাম নিজের খেলার টেকনিক্যাল দিকটায় ওকে নজর দিতে হবে। আজ দ্বিতীয়ার্ধে ওর খেলায় সেই চমকটাই ছিল যা দেখে আমরা সবাই অবাক হয়ে গিয়েছি।’’
সবাই উইলিয়ানের প্রশংসা করলেও নেমার কিন্তু পুরো ব্রাজিল দলের কথাই বলেছেন। সঙ্গে নিজের কথাও, ‘‘এখানে জিততে এসেছি। আশা করি আমার খেলাও ক্রমশ ভাল হবে। জানতাম নিজেকে ফিরে পেতে আমার খেলার জন্য আর একটু জায়গার দরকার হবে। আজকের পরে সত্যিই অনেকটা ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে ছন্দ ফিরে পাচ্ছি। তবে পুরো দলের খেলাই আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে। সবাইকে অভিনন্দন। আমরা সবাই আরও ভাল খেলছি। এটাই সব চেয়ে বড় কথা।’’