নজরে: স্পেনের আক্রমণকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কোস্তা। ফাইল চিত্র
নতুন চেহারার দিয়েগো কোস্তা এখন স্পেনের নতুন অস্ত্র। দিন পনেরো আগে সোচিতে পর্তুগালের বিরুদ্ধে ম্যাচেই সেটা বোঝা গিয়েছিল। যখন দু’টো গোল করে কোস্তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এই বিশ্বকাপে স্পেনের আক্রমণকে নেতৃত্ব দিতে তৈরি তিনি।
কোস্তার ফুটবল প্রতিভা নিয়ে কেউ কোনও দিন প্রশ্ন তোলেননি। প্রশ্ন ছিল তাঁর দায়বদ্ধতা এবং ফিটনেস নিয়ে। যে দুই প্রশ্নের জবাব এই বিশ্বকাপে দিয়ে দিয়েছেন তিনি। কোস্তাকে এই জায়গায় এনে দেওয়ার পিছনে রয়েছে দু’টি নাম। অস্কার ওর্তেগা এবং দাভিদ লাগোস। আতলেতিকো মাদ্রিদের ফিটনেস কোচ এবং পুষ্টিবিদ। ম্যানেজার আন্তোনিয়ো কন্তের সঙ্গে ঝামেলা করে চেলসি ছেড়ে গত সেপ্টেম্বরে আতলেতিকো মাদ্রিদে চলে এসেছিলেন কোস্তা। তাঁকে দেখে তখন চমকে যান অস্কার। বেশ কয়েক কেজি অতিরিক্ত ওজন! নিজের শহর লাগার্তো-তে ছুটি কাটিয়ে, পার্টি করে ওজন বাড়িয়ে ফেলেছেন স্পেনের এই স্ট্রাইকার। ইতালির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতেও সুযোগ পাননি তিনি।
তার পরেই অস্কারের সঙ্গে ট্রেনিং শুরু কোস্তার। প্রথমেই কোস্তার নতুন ডায়েট চার্ট তৈরি করে দেন অস্কার এবং লাগোস। এর আগে নিজের ওজন বাড়া নিয়ে কোস্তা বলেছিলেন, ‘‘আমাকে দোষ দেবেন না। দোষ দিন আমার মাকে। উনি খুব ভাল রান্না করেন।’’ এ বার তাই কোনও ঝুঁকি নেয়নি ক্লাব। কঠোর নিয়ম এবং ট্রেনিং চালু করা হয় কোস্তার জন্য। স্প্যানিশ স্ট্রাইকারও এ বার বদ্ধপরিকর ছিলেন নিজেকে বদলে ফেলতে।
কতটা কঠিন ছিল কোস্তার এই ট্রেনিং সূচি? বিশ্বকাপে আসার আগে কোস্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি এখন আর ওজন মাপার মেশিনে উঠতে ভয় পাই না। কিন্তু অস্কার ওর্তেগার ট্রেনিং সেশন নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে আছি।’’
ব্রাজিলীয় বংশোদ্ভূত কোস্তার বার্বিকিউ মাংসের প্রতি যে ভালই ঝোঁক, সেটা জানতেন আতলেতিকো ম্যানেজার দিয়েগো সিমিয়োনে। তাই বেশি করে নজর দেওয়া হয়েছিল কোস্তার ডায়েটের প্রতি। মাংসের পরিমাণ কমিয়ে পুষ্টিবিদ যে চার্ট করে দিয়েছিলেন, তাতে কোস্তাকে দিনে পাঁচ বার অল্প অল্প করে খেতে হত। যে খাদ্য তালিকায় থাকত অলিভ অয়েল, সেদ্ধ মাছ, তাজা ফল আর সব্জি। এমনকি কোস্তা কতটা পরিমাণ জল খাবেন, তাও মেপে দেওয়া হত।
ট্রেনিং যতটা শারীরিক ছিল, ততটাই মানসিক। দলের বাকি সদস্য যখন ফুটবল নিয়ে অনুশীলন করতেন, ফাইভ আ সাইড ম্যাচ খেলতেন, তখন কোস্তাকে সাইডলাইনের ধারে একা একা অনুশীলন করাতেন অস্কার। এক্সারসাইজ বাইকে বসে সাইক্লিং করতে হত তাঁকে। এতে দু’ভাবে কাজ হত। ফিটনেস তো বাড়তই, তা ছাড়া মাঠে ফেরার জন্য বাড়তি একটা তাগিদও অনুভব করতেন কোস্তা। যা তাঁকে আরও কঠোর অনুশীলন করার দিকে ঠেলে নিয়ে যেত।
এখানেই শেষ নয়। কোস্তার ট্রেনিং সূচিতে যোগ হয়েছিল বক্সিংও। সতীর্থ ফের্নান্দো তোরহেসের ব্যক্তিগত জিমে নিয়মিত যেতেন কোস্তা। যেখানে শারীরিক ভারসাম্য, রিফ্লেক্স এবং বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য বিশেষ বক্সিং ক্লাসও নেওয়া হত কোস্তার।
ফল পাওয়া যেতে থাকে অক্টোবরের শেষ দিকেই। চর্বি ঝরে গিয়ে সুগঠিত পেশির অধিকারী হতে থাকেন কোস্তা। এই রকম কঠোর নিয়মের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে মেজাজ হারাতেন কোস্তা। কিন্তু তাঁর সতীর্থরা জানতেন, কোস্তা মেজাজ হারালেও কিছু সময়ের মধ্যেই সব ভুলে আবার অস্কারকে জড়িয়ে ধরবেন। ঠিক সেটাই হত। এখানেই ভুলটা করেছিলেন চেলসি ম্যানেজার কন্তে। কোস্তা যখন মেজাজ হারিয়ে চেলসির ফিটনেস কোচের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন, তখন মাথা গরম করে ফেলেছিলেন কন্তে। সোজা বসিয়ে দেন কোস্তাকে। এর পর আর দু’জনের সম্পর্ক ঠিক হয়নি।
রাশিয়া বিশ্বকাপে কোস্তা দেখিয়ে দিচ্ছেন, একশো শতাংশ ফিট থাকলে তিনি কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। আজ, রবিবার শেষ ষোলোয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে আবার পরীক্ষায় নামতে চলেছেন কোস্তা।
শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার মাটিতে স্পেন যদি সফল হয়, তা হলে কোচ ফের্নান্দো ইয়েরো ধন্যবাদ দিতে পারেন আতলেতিকো মাদ্রিদের এই দুই সাপোর্ট স্টাফকে।