উচ্ছ্বাস: ইরানের বিরুদ্ধে গোলের পরে দিয়েগো কোস্তার কাঁধে ইস্কো (২২ নম্বর)। বুধবার কাজানে। ছবি: এএফপি
স্পেন ১ : ইরান ০
কাজান স্টেডিয়ামে স্পেন বনাম ইরান ম্যাচটা শুরু হওয়ার পরে চমকে গিয়েছিলাম। আন্দ্রে ইনিয়েস্তাদের আটকাতে ইরানের দশ জন ফুটবলার নেমে এসেছেন নিজেদের রক্ষণে! শুধু তা-ই নয়। স্পেনের ফুটবলাররা বল ধরলেই ইরানের তিন-চার জন ঝাঁপিয়ে পড়ে মেরেধরে বল কেড়ে নিচ্ছেন। ফুটবল না মল্লযুদ্ধ! যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের চোট পেতে পারতেন ফুটবলাররা।
ম্যাচের শুরু থেকেই যদি একটা দলের লক্ষ্য হয়, যে-ভাবেই হোক বিপক্ষকে গোল করতে না-দেওয়া, তা হলে খেলার সৌন্দর্য থাকে না। ইরানের কোচ কার্লোস কুইরোজ দীর্ঘদিন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে স্যর আলেক্স ফার্গুসনের সহকারী ছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদেও কোচিং করিয়েছেন তিনি। ভেবেছিলেন, দিয়েগো কোস্তাকে একা ফরোয়ার্ডে রেখে খেলতে নামা স্পেনকে সহজেই আটকে দিতে পারবেন। কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, স্পেনের এই দলটার মাঝমাঠে ইনিয়েস্তা, ইস্কো, দাভিদ সিলভার মতো ফুটবলার রয়েছেন। তার উপরে এ দিন শুরু থেকেই ছিলেন দানি কার্ভাহাল। ফলে স্পেনের মাঝমাঠকে আটকানোর মতো শক্তি এই মুহূর্তে বিশ্বের খুব কম দলেরই আছে। তা সত্ত্বেও প্রথমার্ধে স্পেন আটকে গিয়েছিল শুধুমাত্র নিজেদের ভুলে।
স্পেন শুরু থেকেই মাঠের মাঝখান দিয়ে ইরানের পেনাল্টি বক্সে ঢোকার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ইরানের ফুটবলাররা যে-ভাবে পায়ের জঙ্গল তৈরি করেছিলেন, তাতে বারবার আটকে যাচ্ছিলেন ইনিয়েস্তারা। ওঁদের উচিত ছিল, উইং দিয়ে আক্রমণ করা। কারণ, কোস্তার মতো শক্তিশালী স্ট্রাইকার রয়েছেন দলে। আতলেতিকো দে মাদ্রিদের স্ট্রাইকার দারুণ ছন্দে আছেন। পর্তুগালের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচেই দু’গোল করেছিলেন। কিন্তু প্রথমার্ধে চক্রব্যূহ থেকে বেরোনোর পথই খুঁজে পেলেন না তিনি।
কোচিংয়ের শর্তই হচ্ছে, সব সময় বিকল্প রণনীতি তৈরি রাখা। স্পেনের কোচ ফের্নান্দো ইয়েরো ‘প্ল্যান বি’ প্রয়োগ করলেন দ্বিতীয়ার্ধে। মাঝমাঠের বদলে উইং দিয়ে দিয়ে আক্রমণ শুরু করতেই ইরানের রক্ষণে ভাঙন দেখা গেল। কোস্তাও চক্রব্যূহ থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজে পেলেন। ৫৪ মিনিটে ইনিয়েস্তার অসাধারণ পাস ধরে হাফ টার্নে ইরানের ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে দিয়ে গোল করলেন তিনি। দশ মিনিটের মধ্যেই অবশ্য সমতা ফিরিয়েছিল ইরান। গোল করেন সৈয়দ এজাতোলাহি। কিন্তু ভিডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভার)-র সাহায্য নিয়ে গোল বাতিল করে দেন রেফারি। রিপ্লেতেও স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, অফসাইডে ছিলেন সৈয়দ। যদিও ইরান শিবির রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। আমার মতে কিন্তু ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন রেফারি।
দুই ম্যাচে তিন গোল করে স্পেনকে শুধু শেষ ষোলোর দিকে এগিয়েই দিলেন না, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ঘাড়ে নিঃশ্বাসও ফেলতে শুরু করে দিলেন কোস্তা। সাবধান সি আর সেভেন!