তিনটে, মাত্র তিনটে ম্যাচ যে একটা বিশ্বকাপ দলের রূপরেখা তৈরি করে দিতে পারে, অস্ট্রেলিয়ায় সদ্য ভারতের ৩-০-য়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতার আগে জানা সম্ভব ছিল না। অন্তত আমার পক্ষে।
আজ দিল্লিতে একইসঙ্গে বাংলাদেশে এ মাসের এশীয় কাপ আর পরের মাসে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দল বেছে নিতে বসছেন আমাদের পাঁচ জাতীয় নির্বাচক। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিলেকশন মিটিংয়ে ওঁদের পাঁচ জনের যেমন হাজির থাকাটা একদম নিশ্চিত, আমার কাছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলটাও কতকটা তাই! মানে আমি বলতে চাইছি, পনেরো জনের স্কোয়াডটা নিয়ে আমি মোটামুটি নিশ্চিত।
তাই বিশেষ কথা না বাড়িয়ে লেখার গোড়ার দিকেই বলে দিচ্ছি, এই সে দিন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য পনেরো জনের যে দলটা বাছা হয়েছে, প্রায় সেটাই আমার মতে বিশ্বকাপে ভারতের দল।
‘প্রায়’ শব্দটা লেখার কারণ, বিরাট কোহলিকে সামনের মঙ্গলবার থেকে শুরু তিন ম্যাচের এই সিরিজে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপে বিরাট ঢুকবে। সে ক্ষেত্রে ভারত যদি ষোলো জনের স্কোয়াড করে তা হলে তো ল্যাঠা চুকেই গেল। তখন আমার দল দাঁড়াচ্ছে, শ্রীলঙ্কা সিরিজের ১৫+বিরাট। আর যদি বিশ্বকাপে পনেরো জনের দল হয়, তখন আমার মতে পবন নেগি কিংবা অজিঙ্ক রাহানের মধ্যে কেউ বাদ যেতে পারে।
আসলে অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ উড়িয়ে দেওয়ার আগে পর্যন্ত এই ফর্ম্যাটে ভারতের কোনটা সঠিক কম্বিনেশন তা নিয়ে আমাদের যেন পরিষ্কার ধারণা ছিল না। কিন্তু দশ দিনের মধ্যে তিনটে ম্যাচের পারফরম্যান্সেই সেই ধারণাটা প্রায় পুরোটা পরিষ্কার। কী জাতীয় দলে কামব্যাক করা দু’-তিনজন সিনিয়র বলুন আর কী নতুন জুনিয়র মুখ বলুন— যাদের যাদের টাটকা ফর্ম, কন্ডিশন বিশ্বকাপের আগে দেখার দরকার ছিল, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দেখা হয়ে গিয়েছে ভারতের। যে জন্য ওই সফরে কিংবা পরের সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে মেরেকেটে একটার বেশি ‘চেঞ্জ’ আমি ভারতের বিশ্বকাপ টিমে দেখছি না।
সুরেশ রায়না অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে দু’টো খুব ভাল ইনিংস খেলেছে, সম্পূর্ণ দু’টো আলাদা পরিস্থিতিতে। প্রথমটায় ও ৪২ রান করেছিল ১২০-র মতো স্ট্রাইকরেটে। যখন আমাদের দু’জন ওপেনার পরপর আউট হয়ে যাওয়ার পর ওর দরকার ছিল বিরাটকে সার্পোট দেওয়ার। রায়না ঠিক তাই করেছিল। আর পরেরটায় রায়না নিজেই পেটাল। ৪৪ করেছিল ২৪ না ২৫ বলে। মানে দুশো স্ট্রাইকরেটে। সুপার্ব।
যুবরাজ সিংহকে ওই সিরিজে শুরুর দিকে একটু জড়সড় দেখাচ্ছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়েও এক ধরনের ঠান্ডা মেজাজের দরকার পড়ে। মানে, নিজেদের অবস্থান বুঝে ঠিক সময় চার্জ করতে হয়। তার জন্য এই পর্যায়ে প্রচুর খেলার অভিজ্ঞতার দরকার। সিডনিতে ভারতের রান তাড়া করার সময় শেষ ওভারে যুবরাজ যে ভাবে বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি মেরে দলকে জেতাল, তার পরে ও ভাবতেই পারে— এখনও আমি ফিনিশ করে ডাগআউটে ফিরতে পারি! আর সেটা ও ভেবে থাকলে আমার মতে ঠিকই ভেবেছে।
আবার অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি সিরিজে যদি আমাদের নতুন ছেলেদের কথা ধরতে হয়, তা হলে পেসার জস প্রীত বুমরাহ শুধু ধারাবাহিক দুর্দান্ত বলই করেনি, ছেলেটা সিরিজে ভারতের আবিষ্কার।
দেখুন, আমার মনে হচ্ছে বিশ্বকাপে ভারত ষোলো জনের স্কোয়াড করলে তাতে চার জন করে পেসার-স্পিনার, মানে আট বোলার, সাত ব্যাটসম্যান আর একজন উইকেটকিপার রাখবে। নিজের দেশে মার্চ-এপ্রিলের গুমোট সন্ধেয় স্লো টার্নারের কথা ভেবে ভারত এক জন বাড়তি স্পিনার হয়তো রাখবে স্কোয়াডে। সে ক্ষেত্রে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা, হরভজন সিংহের সঙ্গে পবন নেগি-ও থাকবে।
নেগিকে শ্রীলঙ্কা সিরিজে নির্বাচকেরা যখন নিয়েছে, নিশ্চয়ই বিশ্বকাপের কোনও গেমপ্ল্যান ভেবেই নিয়েছে। এমনি-এমনি দুম করে নেয়নি। তা হলে তো বিরাটের জায়গায় কোনও ব্যাটসম্যান নিত। নেগি বাঁ-হাতি স্পিনটার সঙ্গে ব্যাটটাও করে। এবং সেটাও দলের প্রয়োজনে যেমন টপ অর্ডারে, তেমনই আবার লোয়ারেও। চেন্নাই সুপার কিংগসে নেগি-জাডেজা একসঙ্গে দু’জনেই অনেক ম্যাচে খেলেছে। আর সেখানে অনেকবার জাডেজার আগে নেগিকে বল করিয়েছে ধোনি।
শ্রীলঙ্কা সিরিজের চার পেসারেরই বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকাটা মনে হচ্ছে স্বাভাবিক। বুমরাহ, আশিস নেহরা, ভুবনেশ্বর কুমার আর হার্দিক পাণ্ড্য। উমেশ যাদব কি বিশ্বকাপে থাকবে? মনে হয়, না। তা হলে হার্দিকের বদলে ওকে শ্রীলঙ্কা সিরিজে রাখা হত। উমেশের তো আর বিরাটের মতো বিশ্রামের ‘সিন’ নেই! আমি বরং মোহিত শর্মা আর আমাদের মহম্মদ শামির এই মুহূর্তের ফিটনেস রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে বেশি আগ্রহী।
আর সাত ব্যাটসম্যান তো টি-টোয়েন্টিতে আমাদের ঠিক হয়েই রয়েছে। রোহিত-ধবন ওপেনিং জুটি। তিনে বিরাট, চার— রায়না, পাঁচে যুবরাজ। স্কোয়াডে মণীশ ও রাহানে।
ভারতের বিশ্বকাপের দলে আজ কোনও চমক আশা করলে একটা চমকই হতে পারে— পনেরো জনের দল হল আর তাতে রাহানেকে বাদ দিয়ে টি-টোয়েন্টির পক্ষে আদর্শ ‘ফ্রিঞ্জ’ প্লেয়ার নেগিকে রাখা হল!