Sachin Tendulkar

ডনের ছেলে পদবি ত্যাগ করেছিলেন, অর্জুন কি ‘তেন্ডুলকর’-কে নিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারবেন?

রোহিত শর্মার দল তাঁকে ২০ লাখ টাকায় কিনতেই শুরু হয়ে গেল নেট মাধ্যমে হইচই।

Advertisement

সব্যসাচী বাগচী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৫:১৯
Share:

নেটিজেনদের কটাক্ষ হজম করে আপন ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছেন অর্জুন। ছবি - টুইটার

তখন ওর বয়স বড় জোর ৪ কিংবা ৫। সেই বয়সে ক্রিকেট বোঝা সম্ভব নয়। তবুও বাবার সঙ্গে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াত। ছোটবেলা আর পাঁচটা বাচ্চার মত আনন্দে কেটে যেত। তবে বয়স বাড়তেই শুরু হল সমস্যা। বিখ্যাত বাবার সন্তান হওয়ার জ্বালা আর কি! সবার মনে একটাই প্রশ্ন, ‘ছেলেটা ওর বাবার মতো প্রতিষ্ঠা পাবে তো?’ মন দিয়ে ক্রিকেট পাঠ শুরু করার পর থেকে অর্জুনের দিকে ক্যামেরার লেন্স তাক করার ব্যাপারটা আরও বাড়ল। দিন দিন সেটা বেড়েই যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও বাড়বে। তাই প্রশ্ন অর্জুন কি ‘লক্ষ্যভেদ’ করতে পারবেন?

Advertisement

তবুও অর্জুন তেন্ডুলকর নিজের মত করে এগিয়ে চলেছেন। একজন প্রকৃত মুম্বইকরের মতো ‘খরুস’ মানসিকতা নিয়ে। কিন্তু পিতা সচিন তেন্ডুলকরের নামের ওজন আর ছাড়ল কোথায়! লেখা ভাল ‘তেন্ডুলকর’ পদবির ওজন। ব্যাপারটা আরও জোরদার হল আসন্ন আইপিএলের জন্য মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এই তরুণ অলরাউন্ডারকে দলে নেওয়ার পর। রোহিত শর্মার দল তাঁকে ২০ লাখ টাকায় কিনতেই শুরু হয়ে গেল নেট মাধ্যমে হইচই। শুরু হয়ে গেল স্বজনপোষণের মারাত্মক অভিযোগ।

অর্জুন ওঁর কাছে সন্তানের মত। তাই ২১ বছরের ছেলেটিকে নেট মাধ্যমে ‘ট্রোল’ হতে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন বিনোদ কাম্বলি। মুম্বই থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “আমরা সচিন ঘনিষ্ট। তাই হলফ করে বলতে পারি ‘সচ’ কখনও ওর ছেলের জন্য সুপারিশ করতে যাবে না। গত কয়েক বছর অর্জুন আমার কাছে অনুশীলন করছে। মুম্বই প্রিমিয়ার লিগে আকাশ টাইগার্স দলে আমি ওকে কোচিং করিয়েছি। তাই অর্জুনের দক্ষতা ও পরিশ্রম সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। ইদানীং কিছু মানুষ নিজের মত ভাবনাচিন্তা করে অন্য মানুষ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে নিচ্ছে। আর এতেই সমস্যায় পড়ছে অর্জুনের মত তরুণরা। সেলিব্রেটির সন্তান হওয়া যেন এই দেশে অপরাধ হয়ে গিয়েছে!”

Advertisement

সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে নিজেকে তেমন মেলে ধরতে পারেননি। বিজয় হজারে মুম্বই দলেও অর্জুন নেই। যদিও দেশের প্রাক্তন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মনে করেন অর্জুন খুব দ্রুত সব রাজ্য দলের হয়ে সব ফরম্যাটে খেলবেন। জুড়ে দিলেন, “একজন দক্ষ অলরাউন্ডার হওয়ার সব গুণ ওর মধ্যে আছে। সচিনের ছেলে হলেও এই লড়াই ওর নিজের। মাঠে ব্যাট ও বল হাতে ওকে একাই লড়তে হবে। দেশের মিডিয়ার জন্য অর্জুন খুব কম বয়সে সেটা বুঝেও গিয়েছে। সেই জন্য প্রতিদিন অনুশীলনে ওকে নতুন উদ্যমে দেখা যায়। তাই যেভাবে ও এগিয়ে যাচ্ছে তাতে মুম্বইয়ের হয়ে সব ফরম্যাটে খেলা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।”

কাম্বলির মত আরও একজন সচিনের খুবই কাছের। ‘বিদর্ভ এক্সপ্রেস’ উমেশ যাদবকে গড়ে তোলা সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক বছর আগে অর্জুনের ব্যাক্তিগত কোচ ছিলেন। ভারতের প্রাক্তন জোরে বোলার নাগপুর থেকে বেশ আক্ষেপের সঙ্গে বলছিলেন, “এই তেন্ডুলকর পদবি ওর কাছে যেমন সম্মানের, তেমনই আবার যন্ত্রণার। গোটা দেশে এত কিছু ঘটে যাচ্ছে সেই দিকে কারও নজর নেই। অথচ দেখুন একটা বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে সবাই পড়ে আছে। আরে বাবা ওকে খোলা মনে খেলতে তো দেওয়া উচিত। ওকে সচিনের মতই সাফল্য পেতে হবে, এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে!”

অর্জুন প্রচার মাধ্যম দেখলেই এড়িয়ে যান। সাক্ষাৎকার দেওয়া তো অনেক দূরের কথা। তাঁর বাবাও ছেলের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন না। তাই সুব্রত শেষে বললেন, “এই বিষয় নিয়ে অর্জুনের সঙ্গে অনেক বার কথা হয়েছে। ওকে নিয়ে এই বাড়াবাড়ি একদম পছন্দ করে না। কারণ ও জানে সাফল্য ওর বাবা পেয়েছে। অর্জুনের পথচলা তো সবে শুরু।”

ব্যাটের পাশাপাশি বল হাতেও নজর কাড়ছেন জুনিয়র তেন্ডুলকর। ফাইল চিত্র।

সে অনেক বছর আগের কথা। ১৯৭২ সাল। তখন নেট জগত তো অনেক দূরের কথা, টেলিভিশন, খবরের কাগজের এত রমরমা ছিল না। যদিও স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ছেলে জনের উদাহরণ রয়েছে। ‘ব্র্যাডম্যান’ পদবির ভার বইতে না পেরে জন তাঁর পদবি বদলে ‘ব্রেডসন’ করে ফেলেন।

তবে অতি সক্রিয় নেট মাধ্যমের যুগে অর্জুন কি তাঁর ‘তেন্ডুলকর’ পদবির বিশাল ভার আজীবন বইতে পারবেন! পারবেন মহাভারতের সেই অর্জুনের মত ‘লক্ষ্যভেদ’ করতে! পুরাণের সেই অর্জুনের কাছে শুধু গাণ্ডিব ছিল। আধুনিক যুগের অর্জুনের কাছে রয়েছে দুটো অস্ত্র। ব্যাট ও বল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement