বার্সা স্টাইল অচল
ছোটবেলা থেকেই বার্সেলোনার সঙ্গে খেলছে মেসি। বিখ্যাত লা মাসিয়া অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছে। চোখ বন্ধ করেই ও বুঝতে পারে কার পজিশন কোথায়। একটা নির্দিষ্ট স্টাইলে ওর খেলা তৈরি। ছোট পাসিং, দ্রুত মুভমেন্ট এ সব করেই ও অভ্যস্ত। ক্লাব ফুটবলে বছরে একটা ফুটবলারকে যতগুলো ম্যাচ খেলতে হয়, দেশের হয়ে অর্ধেকেরও খেলার সুযোগ নেই। আবার ক্লাবে একটা সেট টিম থাকে। দেশে প্রায়ই নতুন মুখ আনা হচ্ছে। ফুটবল ম্যাজিক নয় যে দু’দিনে সম্পূর্ণ অন্য একটা ছকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যাবে। মেসির পক্ষেও কাজটা দ্রুত করা সম্ভব নয়। তবে আশা করব আর একটু সময় গেলে কোপাতে চেনা মেসিকে দেখা যাবে।
অতিরিক্ত মেসি নির্ভরতা
ব্যক্তিগত প্রতিভায় যতই কেউ বড় হোক না কেন, ভাল সাপোর্ট না পেলে মুশকিলে পড়তেই হয়। আর্জেন্তিনা দলটায় সব কিছুই যেন মেসির উপর নির্ভর। বার্সেলোনায় মেসি ভাল না খেললে যেমন সুয়ারেজ, নেইমার আছে। আর্জেন্তিনার ক্ষেত্রে পুরোটাই মেসি। ও যদি ভাল খেলতে না পারে তা হলে মানসিক ভাবে চাপে পড়ে যায় আর্জেন্তিনা। প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে তো ঠিক সেটাই হল। মেসি যত খেলা থেকে হারিয়ে যেতে থাকল, আর্জেন্তিনার বাকি ফুটবলাররাও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলল।
সেই রসদ কোথায়
বার্সেলোনা আর আর্জেন্তিনার ফুটবলারদের ক্লাসের অনেক তফাত। বার্সেলোনায় মেসির পাশে আছে ইনিয়েস্তার মতো এক জন অসাধারণ বল প্লেয়ার। নেইমার ও সুয়ারেজের মতো দুই বিশ্বমানের ফরোয়ার্ড। হ্যাঁ আর্জেন্তিনায় দি’মারিয়া, আগেরো, ইগুয়াইন, মাসচেরানোর মতো ফুটবলাররা রয়েছে। ব্যস, এই হাতেগোনা কয়েক জন। মাঝমাঠ থেকে দেখলে বোঝা যাবে আর্জেন্তিনার অধিকাংশ ফুটবলারই বেশ সাধারণ। রোখো, বানেগা, ওটামেন্ডি, রনকাগলিয়া, গ্যারে, পাস্তোরে এরা মেসির পাঁচশো মাইলের মধ্যেও আসে না। মেসির বিরুদ্ধে সব সময় কোনও কোচের নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি হয় ওর মুভমেন্টটাকে বন্ধ করা। লোক বাড়িয়ে ওকে ব্লক করা। এক সপ্তাহ আগে জুভেন্তাসও তাই করেছিল। কিন্তু মেসিকে মার্ক করায় সুয়ারেজ-নেইমার ফ্রি হয়। এখানে সে রকম প্লেয়ার কোথায় যে সে সুযোগটা নেবে।
স্কিমার নেই দলে
বার্সেলোনায় প্রতিটা ফুটবলার বল প্লেয়ার। বল নিয়ে যে রকম দক্ষ, বল ছাড়াও সে রকমই। ঠিক জায়গায় পজিশন নিয়ে বিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারে। আর্জেন্তিনায় সেই ছন্দ নেই। খুব কমই দেখলাম কোনও পাসিং মুভ তৈরি হচ্ছে ম্যাচে। দি’মারিয়া ছাড়া মেসির সঙ্গে ফরোয়ার্ডে আর কোনও ফুটবলারই ঠিক করে কম্বাইন করতে পারেনি। মাঝমাঠ থেকেও ঠিক করে সাপ্লাই পাচ্ছিল না মেসি। যে কারণে একা একাই সুযোগ তৈরি করতে হচ্ছিল। ড্রিবল করে, ডিফেন্ডারদের টেনে অনেকটা উইথড্রল খেলতে হয়েছে। আর মেসির মতো ফুটবলার যদি ফরোয়ার্ডে সেন্ট্রালি না খেলতে পারে, তা হলে আর ওকে দলে রাখার ফায়দা কোথায় তুললেন কোচ।
ডিফেন্সকে পাস মার্ক নয়
বার্সেলোনার সঙ্গে আর্জেন্তিনা ডিফেন্সের কোনও তুলনা হয় না। বার্সায় পিকে-আলবা-আলভেজ যে কোনও বিশ্বমানের ফরোয়ার্ড লাইনকে শান্ত রাখতে পারে। খারাপ ফর্মের পিকেও আর্জেন্তিনা ডিফেন্ডারদের থেকে ভাল। ওটামেন্ডি-গ্যারে দেখতেই বড়সড়। আসলে খুব স্লো। রনকাগলিয়া বলে যাকে দেখলাম সে তো খেলার থেকে বেশি মাথা গরম করল। রোখোও কোনও আলবা বা আলভেজ নয়। দুই দলের একমাত্র কমন ফ্যাক্টর মাসচেরানো। যে এখন বার্সার বিকল্প সেন্টার ব্যাক হয়ে গিয়েছে। তাকেও আর্জেন্তিনা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ব্যবহার করল। যেটা শেষমেশ কার্যকরী হল না। বোঝাই যাচ্ছে, মেসি গোল করলেও সেই লিড ধরে রাখার মতো ক্ষমতা এই ডিফেন্সের ছিল না। ২-০ থেকে ২-২ হওয়াতে আমি তাই আশ্চর্য হইনি।