নায়ক ওয়েডসন।
‘দিস ইজ পঞ্জাব। উই আর ওয়ারিয়র্স।’
লুধিয়ানার গুরু নানক স্টেডিয়ামে কোথাও কোথাও ঝুলছে এই ব্যানার। পনেরো হাজারের গ্যালারিতে হাতেগোনা জনাকয়েক দর্শক।
নিঝুম আবহকে অবশ্য জাগিয়ে তুলল লাল-হলুদ ঝড়। খারাপ মাঠ ও কনকনে শীতের বাধা টপকে আগুন জ্বালাল মর্গ্যানের ফরোয়ার্ড লাইন। খেলার শুরু থেকে শেষ উপহার দিল গোল-বিনোদন।
গত কয়েক বছর ইস্টবেঙ্গল ভাল দল গড়লেও শেষমেশ কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাগ্য। এ বার সমর্থকদের স্বস্তি দিয়ে সেটাও হয়তো কাটিয়ে উঠছে লাল হলুদ।
কিছু দিন আগেই ঘরের মাঠে এই মিনার্ভার বিরুদ্ধে মোহনবাগান করেছিল চার গোল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে তার জবাবটা এল পাঁচে।
দেশজ সনি নর্ডিকেও অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন ওয়েডসন। চলতি লিগে বিনীতের পর দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করে ইস্টবেঙ্গলের হাইতি তারকা বুঝিয়ে দিলেন, ম্লান আই লিগের স্বপ্নপূরণ করতে তিনিও তৈরি।
ম্যাচের আগে মাঠ নিয়ে চিন্তিত ছিল লাল-হলুদ। লুধিয়ানার মাঠের খারাপ অবস্থা প্রভাব ফেলল ম্যাচেও। বল স্লিপ খাচ্ছে। বাউন্স অসমান। কিন্তু সেটাও ইস্টবেঙ্গলকে থামাল কোথায়? অবিসংবাদিত দাপট যাকে বলে। মিনিটের পর মিনিট। গোলের পর গোল। মিনার্ভাকে পর্যুদস্ত করার পিছনে কেন্দ্রীয় চরিত্র সেই ওয়েডসন।
লুধিয়ানা থেকে ফোনে ম্যাচের সেরার উদ্দেশ্যে তাই তো লাল-হলুদ কোচ মর্গ্যান বললেন, ‘‘হ্যাটট্রিক অবশ্যই আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ওয়েডসন। গোলগুলো ভাল ছিল। কিন্তু বাকিরাও ভাল খেলেছে। প্লাজার গোলটাও অসাধারণ। ট্রেনিংয়ে আমরা সেট পিস প্র্যাকটিস করেছিলাম। সেটাও কাজে লেগেছে।’’
ম্যাচের শেষে গোড়ালিতে সামান্য সমস্যা অনুভব করলেও জয়ের নায়ক অবশ্য হ্যাটট্রিক নিয়ে নির্লিপ্ত। ক্লাবের সরকারি ম্যাগাজিনের ফেসবুক পেজে ভিডিও পোস্টে ওয়েডসন বলেছেন, ‘‘আমি হ্যাটট্রিক করে খুব খুশি। জানি আমার থেকে আরও অনেক আশা করে সবাই। আমি সেই সব পূরণ করার চেষ্টা করছি। ম্যাচের সেরা হওয়ার শিরোপা আমি দলের সঙ্গে ভাগ করতে চাই। দলের সাহায্য না পেলে সেটা সম্ভব ছিল না।’’
ওয়েডসনের তিনটে গোলই ক্লিনিকাল ফিনিশ। প্রথমটা লালরিন্দিকার পাস থেকে সুযোগসন্ধানী হেড। দ্বিতীয়, পেনাল্টি থেকে মাথা ঠান্ডা রেখে ফিনিশ। তৃতীয়, নিঁখুত প্লেসমেন্ট। গোল ছাড়াও সর্বদা ট্র্যাক ব্যাক করে গেলেন। পাস বাড়িয়ে গেলেন। যেন ঠিক করে এসেছিলেন, দলকে শীর্ষস্থানে উঠিয়েই মাঠ ছাড়বেন।
হাইতি তারকার হ্যাটট্রিক ছাড়া অবশ্য ম্যাচের বর্ণনা দিতে বসলে তিনটে জিনিস সামনে আসে। ৪-৪-২ ফর্মেশনে নামা ইস্টবেঙ্গল উইং প্লে-কে হাতিয়ার করল। রাহুল-নিখিল-লালরিন্দিকা শুরু থেকেই মাঠের দুই ফ্ল্যাঙ্ক টার্গেট করেন। ক্রস বাড়িয়ে বাড়িয়ে গোল করানোর চেষ্টা করেন। মিনার্ভার প্রতিআক্রমণেও ডিফেন্সের শেপ বজায় রেখেছে লাল-হলুদ। মাঝমাঠও তখন ট্র্যাক ব্যাক করে জমাট ছিল। প্লাজা ও রবিনকে নিয়ে ফরোয়ার্ড লাইন গোলের জন্য ঝাঁপায়। ওয়েডসন ছাড়াও এ দিন যাঁরা গোলের তালিকায়। মিনার্ভা ডিফেন্সের যা অবস্থা ছিল তাতে পাঁচের বেশি গোল হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। লাল-হলুদের অপ্রতিরোধ্য পারফরম্যান্সে সামান্য চিন্তা হয়তো ডিফেন্স। বুকেনিয়াকে মাঝেমাঝে নড়বড়ে দেখিয়েছে।
পাঁচ গোল। এখনও অপরাজিত। মোহনবাগানের সঙ্গে সমসংখ্যক পয়েন্ট নিয়েও গোল পার্থক্যে শীর্ষে। কিন্তু মর্গ্যানের দাবি লিগ তো সবে শুরু। ‘‘এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। আরও চড়াই উতরাই হবে। বেঙ্গালুরুও ভাল খেলবে। এখনও কিছুই হয়নি। মাত্র পাঁচটা ম্যাচ হয়েছে। পয়েন্ট টেবলের দিকে এখন দেখছি না। এখনও অনেক কিছু শুধরোতে হবে।’’
আগামী বুধবার ইস্টবেঙ্গলের পরের হার্ডল মুম্বই এফসি। তাই মানসিক ভাবে মর্গ্যান নেমে পড়েছেন মিশন-মুম্বইয়ে। বললেন, ‘‘হাতে সময় নেই। প্রতিটা ম্যাচ এখন গুরুত্বপূর্ণ। মুম্বই যথেষ্ট ভাল দল। তাই এই জয় নিয়ে ভাবলে হবে না।’’
ইস্টবেঙ্গল: রেহনেশ, বুকেনিয়া, গুরবিন্দর, রাহুল, নারায়ণ, নিখিল, মেহতাব (রওলিন), ওয়েডসন, লালরিন্দিকা (জ্যাকিচন্দ), প্লাজা, রবিন (হাওকিপ)।