বিশ্বসেরা: বরাবরের মতোই বোর্ডের সামনে সেই নিমগ্ন সাধক। র্যাপিড দাবায় তরুণ সব প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ। ছবি: গেটি ইমেজেস
চমক!
অনেকে হয়তো বলবেন রিয়াধে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্বনাথন আনন্দের এ ভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা তাই। কিন্তু আমার কাছে এটা চমক নয়!
আনন্দকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। মাস তিনেক আগেও কথা হয়েছে আমাদের। আমি জানি আনন্দ যতদিন দাবাটা উপভোগ করতে পারবে ততদিন এ ভাবে ও চমকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
৪৮ বছরের এক জন দাবাড়ু যার চলতি মরসুমে তেমন বড় কোনও সাফল্য নেই, মার্চে হতে চলা ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টেও (আট জন দাবাড়ুর মধ্যে যে টুর্নামেন্ট থেকে ঠিক হয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের চ্যালেঞ্জার কে হবে) সুযোগ পায়নি, ক’দিন আগে হওয়া লন্ডন চেস ক্ল্যাসিক টুর্নামেন্টে শেষ করেছিল লাস্ট বয় হিসেবে, সে-ই রিয়াধে বিশ্ব র্যাপিড দাবায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। সেরা হওয়ার পথে হারিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনকে। এবং শেষে হারিয়েছে টাইব্রেকারে বয়েসে ২৬ বছরের ছোট রাশিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বীকে!
তিন বছর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে কার্লসেনের কাছে টানা দ্বিতীয় বার হারার পরে এই আনন্দকে নিয়েই অনেকে বলেছিলেন, ওর সময় শেষ, আর সেই আনন্দকে দেখা যাবে না দাবার বোর্ডে। অনেকে তো এমনও বলেছিলেন, কার্লসেন, নাকামুরা, কারইয়াকিন, অ্যারোনিয়ানের মতো ওর চেয়ে বয়েসে অনেক জুনিয়র যে দাবাড়ুরা এখন বিশ্ব দাবায় দাপট দেখাচ্ছে, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না আনন্দ। সেই সমালোচকদের গালে একটা থাপ্পড় কষিয়ে দিল ভিশি এই জয়ে।
আসলে গ্রেটদের নিয়ে কখনও ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। যেমন রজার ফে়ডেরার। বয়সকে পাত্তা না দিয়ে টেনিসে কী প্রত্যাবর্তনটাই না দেখাল ফেডেরার সদ্য শেষ হওয়া মরসুমে। গ্রেটরা নিজের দিনে ঠিক এ ভাবেই ফিরে আসতে পারে। আনন্দের প্রত্যাবর্তনে, ১৪ বছর পরে ফের বিশ্ব র্যাপিড দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেখে তাই আমি চমকে যাইনি।
তবে একটা ব্যাপারে আমি একটু অবাক হয়েছি। টাইব্রেক শেষ হওয়ার পরে ঠিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুহূর্তে ভিশির উচ্ছ্বাস দেখে। ইন্টারনেটে দেখছিলাম দুটো হাত ঝাঁকিয়ে ও হাসছিল, খুব উল্লসিত দেখাচ্ছিল ওকে। শেষ কবে ওকে এ ভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখেছি মনে করতে পারছি না। এই দৃশ্যটাই বলে দিচ্ছিল ও কতটা চাপে ছিল। সেই চাপটা কেটে যেতেই উল্লাস বাধ মানেনি।
বিজয়ী: ফের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে আনন্দের উচ্ছ্বাস। ছবি: টুইটার।
অনেকে হয়তো এর পরেও বলবেন, র্যাপিড দাবায় বিশ্বসেরার মুকুট পেলেও ক্যান্ডিডেটসে তো আনন্দ সুযোগই পাননি এ বার লড়াই করার। তাই এই ফর্মটা মাস তিনেক পরে ধরে রেখে যে ফের কার্লসেনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে ও, সেটাও তো হওয়ার সুযোগ নেই। এটা ঠিক। এ মরসুমে ওর পারফরম্যান্স আহামরি ছিল না, র্যাঙ্কিংয়েও অনেক পিছিয়ে পড়েছিল তাই। কিন্তু এটাও কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না কার্লসেনের কাছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে হারার তিন বছর পরে ফের বিশ্ব পর্যায়ের কোনও টুর্নামেন্টে এ রকম দাপট দেখাল আনন্দ। তাই এর পরের বছর ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে যে আনন্দ এর চেয়েও বড় কোনও চমক দেবে না, কে বলতে পারে!
ওই যে বললাম, গ্রেটদের নিয়ে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না!