দুরন্ত: ওয়ান ডে-তে ৪২তম সেঞ্চুরির পরে কোহালি। রবিবার পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। এএফপি
ওয়ান ডে-তে ৪২তম সেঞ্চুরি করার পরে পিঠে তিন বার চাপড় মারলেন বিরাট কোহালি। সঙ্গে তাঁর উচ্ছ্বসিত লাফ। বিরাটের পরিচিত উৎসবের ভঙ্গি শেষ পাঁচ মাস উপভোগ করতে পারেননি ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকেরা। বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি পাননি। টি-টোয়েন্টিতেও সেই সুযোগ হারিয়েছেন। ওয়ান ডে সিরিজে প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় আরও দু’দিন কোহালি সমর্থকদের অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু পোর্ট অব স্পেনে অধিনায়ক ফিরলেন তাঁর প্রিয় মেজাজে। ১২৫ বলে তিনি করলেন ১২০ রান। ১৪টি চার ও একটি ছয়ের সৌজন্যে। ৫০ ওভার শেষে সাত উইকেট হারিয়ে ভারতের রান ২৭৯।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩৪তম ইনিংসে জাভেদ মিয়াঁদাদের রেকর্ড ভেঙে দিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। এ দিন ১৯ রান করলে ওয়ান ডে-তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষে যাওয়ার সুযোগ ছিল তাঁর। শনিবার রাত পর্যন্ত ১৯১২ রান ছিল কোহালির দখলে। এ দিন ১২০ রান করায় ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে সব চেয়ে বেশি রানের (২০৩২) মালিক হয়ে গেলেন বিরাট।
শুরু থেকেই তাঁর ব্যাটিং দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বড় ইনিংস খেলার স্বপ্ন নিয়ে নেমেছেন। প্রথম ওভারেই শেলডন কটরেলের ছোট ইনসুংইয়ে পরাস্ত হয়ে ফিরতে হয় শিখর ধওয়নকে (২)। তখন ভারতের স্কোর ২-১। খেলার বয়স তিন বল। তখনই তিন নম্বরে নামা ব্যাটসম্যানের আসল পরীক্ষা। ওপেনারের ব্যর্থতা ঢাকতে বিরাটকেই মূল দায়িত্ব নিতে হত। কোহালি বরাবরই সেই দায়িত্ব নিতে পছন্দ করেন। এ দিন কেমার রোচকে কভার ড্রাইভে স্বাগত জানিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, আরও এক বার সেই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
ব্রায়ান লারার শহর পোর্ট অব স্পেনের পিচ ব্যাটিং সহায়ক। যদিও শুরুতে সাহায্য পাচ্ছিলেন কটরেল, রোচরা। শেষ দু’দিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় পিচ ঢাকা ছিল। প্রত্যাশা মতোই পিচে স্যাঁতসেঁতে ভাব ছিল। কোহালি ও রোহিত শর্মার পোক্ত টেকনিক যদিও পেসারদের কার্যকারিতা ম্লান করতে যথেষ্ট। ৭৪ রানের জুটি গড়ে নতুন বলের আতঙ্ক কমিয়ে দিল রোহিত-কোহালি জুটি। রোহিত মাত্র ১৮ (৩৪ বল) রান যোগ করেন।
এ দিন নিজের ছন্দে ছিলেন না ‘হিটম্যান’। তাই কোহালিকে স্কোরবোর্ড সচল রাখার দায়িত্ব নিতে হয়। রোহিত ফিরে যাওয়ার পরে বহু চর্চিত চার নম্বরে ব্যাট করতে আসেন ঋষভ পন্থ। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী সফল হননি তরুণ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ৩৫ বলে ২০ রান করার পরে কার্লোস ব্রাথওয়েটকে শর্ট আর্ম জ্যাব করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। একেবারে সামনের পায়ের বল লেগস্টাম্পের দিকে টানতে গিয়ে ব্যাটের নীচের দিক দিয়ে স্টাম্পে আছড়ে পড়ে বল।
পাঁচ নম্বরে আসা শ্রেয়স আইয়ারের কাঁধে দায়িত্ব ছিল কোহালিকে সঙ্গ দেওয়ার। ওয়ান ডে-তে মাঝের ওভারগুলোয় স্কোরবোর্ড সচল রাখা একজন মিডল অর্ডারের চ্যালেঞ্জ। সেই কাজটি অনায়াসে করে গেলেন দিল্লি ক্যাপিটালস অধিনায়ক। ৪৯ বলে ওয়ান ডে-তে তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি সম্পূর্ণ করলেন শ্রেয়স। কিন্তু প্রথম সেঞ্চুরি করার সুযোগ নষ্ট করলেন। ৬৮ বলে ৭১ রান করে ফিরে যাওয়ার সময় ভারতীয় ইনিংসের বয়স ৪৫.৩ ওভার। শেষ পাঁচ ওভারে ২৯ রানের বেশি তুলতে পারেনি ভারত। ১৪ বলে ১৬ করে রান আউট হন কেদার যাদব।
জবাবে এভিন লুইস (৬৫) ভাল শুরু করলেও ক্রিস গেল ফেরেন ১১ করে। যদিও ব্রায়ান লারার রেকর্ড ভেঙে গেলই এখন ওয়ান ডে-তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। ২৭.২ ওভার শেষে চার উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ১৪৮। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ১৮.৪ ওভারে তাদের করতে হবে ১২২ রান।
স্কোরকার্ড
ভারত ২৭৯-৭ (৫০)
ভারত
ধওয়ন এলবিডব্লিউ বো কটরেল ২•৩
রোহিত ক পুরান বো চেজ ১৮•৩৪
কোহালি ক রোচ বো ব্রাথওয়েট ১২০•১২৫
পন্থ বো ব্রাথওয়েট ২০•৩৫
শ্রেয়স বো হোল্ডার ৭১•৬৮
কেদার রান আউট ১৬•১৪
জাডেজা ন. আ. ১৬•১৬
ভুবনেশ্বর ক রোচ বো ব্রাথওয়েট ১•২
শামি ন. আ. ৩•৫
অতিরিক্ত ১২
মোট ২৭৯-৭ (৫০)
পতন: ১-২ (ধওয়ন, ০.৩), ২-৭৬ (রোহিত, ১৫.৩), ৩-১০১ (পন্থ, ২২.২), ৪-২২৬ (কোহালি, ৪১.৩), ৫-২৫০ (শ্রেয়স, ৪৫.৩), ৬-২৫৮ (কেদার, ৪৬.৪), ৭-২৬২ (ভুবনেশ্বর, ৪৭.৪)।
বোলিং: শেলডন কটরেল ১০-০-৪৯-১, কেমার রোচ ৭-০-৫৪-০, জেসন হোল্ডার ৯-০-৫৩-১, ওশেন থমাস ৪-০-৩২-০, রস্টন চেজ ১০-১-৩৭-১, কার্লোস ব্রাথওয়েট ১০-০-৫৩-৩।
অসম্পূর্ণ স্কোর