একজোট: ধোঁয়াশার অভিযোগে মুখোশ পরে প্রতিবাদ। টেস্টের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন। ছবি: পিটিআই।
বিরাট কোহালির ট্রিপল সেঞ্চুরির স্বপ্নভঙ্গ হল তাঁর ঘরের মাঠের ক্রিকেট ভক্তদের। দিনের শেষে ব্রায়ান লারাকে টপকে যাওয়া কোহালির সঙ্গেই যদিও শিরোনামে কোহালির শহরের দূষণ।
নয়াদিল্লির দূষণ এবং কালো আকাশ নিয়ে চর্চা চলছে অনেক দিন ধরেই। স্বয়ং কোহালি ভিডিও বার্তা দিয়ে রাজধানীকে দূষণমুক্ত করার ডাক দিয়েছিলেন। কে ভেবেছিল, নিজের শহরের পরিবেশ দূষণ তাঁদের ক্রিকেট ম্যাচেও হানা দেবে!
দিনের খেলা শেষে অভিযোগ এবং পাল্টা উত্তরে দূষণ নিয়ে বিতর্ক আরও বেড়েছে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারেরা মাঠে ‘মাস্ক’ পরে নেমেছিলেন মধ্যাহ্নভোজের পরেই। কয়েক জনকে দেখে মনে হয়েছে, অসুস্থ বোধ করছেন। দিনের খেলা শেষে শ্রীলঙ্কার কোচ নিক পোথাস রীতিমতো উদ্বেগের কথা জানিয়ে গেলেন। আবার ভারতীয় বোর্ড এবং ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে তা উড়িয়ে দেওয়া হল।
পোথাসের দাবি, তাঁদের ক্রিকেটারেরা ভাল রকম অসুস্থ বোধ করছিলেন। ড্রেসিংরুমে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখতে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘ক্রিকেটারেরা বমি করছিল। শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। এ রকম পরিস্থিতি ক্রিকেট মাঠে আগে কখনও দেখিনি।’’
মাঠে ‘মাস্ক’ পরে নামা ছাড়াও ধোঁয়াশা নিয়ে আম্পায়ারদের কাছে অভিযোগও জানান শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটারেরা। যার জেরে মিনিট কুড়ি খেলা বন্ধ থাকে। এই সময়েই বিরাটের ট্রিপল সেঞ্চুরির আশায় প্রহর গুণছিলেন ক্রিকেট ভক্তরা। ধোঁয়াশার কারণে খেলা হবে কি হবে না, সেই বিভ্রান্তি তাঁর মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকতে পারে। কোহালি ট্রিপল সেঞ্চুরি পেলেন না। কিন্তু তাঁর শহরে দূষণ বিতর্কে ক্রিকেট স্তব্ধ থাকা নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকল। ‘মাস্ক’ পরা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ায় রাজধানীর কম সম্মানহানী হয়নি এ দিন। সাড়ে পাঁচশো রানে ইনিংস ডিক্লেয়ার করার পরিকল্পনা থাকলেও দীনেশ চান্দিমালদের কাণ্ডকারখানায় ১৪ রান আগেই কোহালি ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন। টুইটারে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারেরা। ভারতীয় ভক্তরা বলতে থাকেন, কোহালিদের ব্যাটের ঘায়ে বিধ্বস্ত চান্দিমাল-রা ‘অজুহাত’ দিচ্ছেন।
নিক পোথাস যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, খেলা থামানো তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল না। জানান, ড্রেসিংরুমে গিয়ে সুরঙ্গা লাকমল বমি করে যাচ্ছিলেন। সে সব দেখেই তাঁরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আবার ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সি কে খন্না পাল্টা তোপ দেগে বলেন, ‘‘গ্যালারিতে উপস্থিত কুড়ি হাজার দর্শকের কারও মাস্ক লাগল না। দিব্যি খেলা দেখল ওরা। বুঝলাম না, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদেরই শুধু অসুবিধে হল কেন?’’
ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে দিনের খেলা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন বি. অরুণ। তিনিও কটাক্ষ করে যান শ্রীলঙ্কার তোলা দূষণ নিয়ে অভিযোগকে। অরুণ বলেন, ‘‘বিরাট তো দু’দিন ধরে ব্যাট করে গেল। ওর তো কোনও মাস্ক লাগল না। আমরা লক্ষ্যের উপরেই ফোকাস করতে চাই। আর সেই লক্ষ্য হচ্ছে ম্যাচটা জেতা।’’ খেলা বন্ধ থাকার সময় দেখা যায় ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী নেমে পড়েছেন মাঠে। কী বলছিলেন শাস্ত্রী? জিজ্ঞেস করায় অরুণ বলেন, ‘‘রবি ভাই আম্পায়ারদের বলছিল, খেলাটা চালিয়ে যেতে। খেলা কেন থেমে থাকবে?’’ এর পর অরুণ যোগ করেন, ‘‘দু’টো দলের জন্যই তো সমান পরিবেশ, পরিস্থিতি রয়েছে। দূষণের জন্য খেলা বন্ধ করতেই হলে, তা ম্যাচ রেফারি দেখবেন। খেলোয়াড়রা অভিযোগ জানাবে কেন?’’
মিনিট কুড়ি মতো খেলা বন্ধও থাকে। ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুনকে একজন ডাক্তারের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে দেখা যায়। আড়াইশোর দিকে এগিয়ে যাওয়া বিরাট কোহালি অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে পড়েন। খেলা শুরু হতেই কোটলার ফ্লাড লাইট জ্বলে ওঠে। কিছুক্ষণ পরে ওভারের মাঝখানে গামাগে ফের অস্বস্তি বোধ করেন ও মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। গামাগের পর অসুস্থ বোধ করায় মাঠ থেকে বেরিয়ে যান শ্রীলঙ্কার আর এক পেসার লাকমলও।
শ্রীলঙ্কার ড্রেসিংরুমে তখন হাহাকার। মাঠে নামার মতো কেউ নেই। অথচ মাঠে দশ জন। হেলমেটে বল লাগায় সাদিরা সমরাবিক্রমাও এ দিন নামেননি। ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী, শ্রীলঙ্কার ম্যানেজার অশাঙ্ক গুরুসিংঘে ও চান্দিমলদের মাঠে ডেকে নেন আম্পায়াররা। সেই মুহূর্তেই বিরাট কোহালির ডিক্লেয়ারের সিদ্ধান্ত তাঁর শহরের সম্মানও বাঁচাল।