কোটি কোটি মানুষের আইডল তিনি। তাঁর দর্শন, তাঁর অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের মানসিকতা মুগ্ধ করে তাঁর ভক্তদের।
তিনি বিরাট কোহালি।
কিন্তু বিরাট নিজে কাকে দেখে মুগ্ধ?
উত্তর, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। যা নিজেই বলেছেন ভারতের টেস্ট অধিনায়ক।
পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই- এটাই মূলমন্ত্র বিরাটের। কঠোর পরিশ্রমই যে তাঁকে ধারাবাহিক সাফল্যের শিখরে রেখে দিতে সাহায্য করে, তা ক্রিকেটবিশ্বে বিরাটের ঘনিষ্ঠজনেরা অনেকেই বলেছেন। এত পরিশ্রমের প্রেরণা পান কোথা থেকে? এই প্রশ্ন অনেকের মনেই ছিল এত দিন। এ বার তার উত্তর দিলেন বিরাট।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েবসাইটে এক সাক্ষাৎকারে বিরাট বলেন, ‘‘এই ব্যাপারে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোই আমার প্রেরণা। এত বছর ধরে ও নিজেকে কী ভাবে সেরার জায়গায় রেখে দিয়েছে? এ শুধু হার্ডওয়ার্কের ফল। শুনেছি রোনাল্ডো বিশ্বের সবচেয়ে পরিশ্রমী ফুটবলার। সে জন্যই ও আজ নিজেকে এই জায়গায় রেখে দিতে পেরেছে। মেসির প্রতিভা আছে। কিন্তু এই ভদ্রলোক শুধু পরিশ্রম দিয়ে ওর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে।’’
সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তিনি বিশ্বের সেরা ক্রীড়াবিদদের মধ্যে প্রথম সারিতেই থাকবেন। দুনিয়ার বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই যেখানে ধারাবাহিকতার অভাবে ভোগেন, সে খানে কী ভাবে তিনি এত ধারাবাহিক? বিরাটের ব্যাখ্যা, ‘‘নিজের ভুলগুলো অনবরত শুধরে নেওয়ার নামই ধারাবাহিকতা। আমার মধ্যে যা শক্তি আছে সেগুলো কাজে লাগাও আর যা যা দুর্বলতা আছে তা দূরে সরিয়ে রাখো। এই কাজটা অনবরত করে যেতে পারলেই ধারাবাহিকতা আসে। নিজের এই ভাল-মন্দগুলো আমি খুব ভাল বুঝি।’’
প্রতি ক্রিকেটারেরই যে ভুলভ্রান্তি হয়, এই চরম সত্যিটা মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন কিংবদন্তি। তাঁর মতে, ‘‘অনেকে বলেন, খেলায় ভুল থাকলে চলবে না। এটা ঠিক না। ভুল থাকবেই। কিন্তু ভুলগুলোকে শুধরে নিতে হয়। এটা নিয়মিত করতে পারলেই খেলায় ধারাবাহিকতা আসে আর নিয়মিত রান পাওয়া যায়। বরাবর এটাই করার চেষ্টা করে এসেছি আমি। নিজের খেলাটা কোন দিকে যাচ্ছে, এটা ঠিকমতো বুঝতে পারলেই নিজেকে খুশি রাখতে পারি।’’
পেশাদার খেলোয়াড়দের জীবনে চাপ নতুন কিছু নয়। আর এই চাপ নেওয়াটাই তাঁর জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করেন বিরাট কোহালি। এবং তিনি এটা উপভোগও করেন। এই প্রসঙ্গে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বলেন, ‘‘চাপ আমরা কেউ কখনও দূরে সরিয়ে রাখতে পারি না। তাই একে কাছে টেনে নেওয়াই ভাল। কে কোন পরিস্থিতিকে কী ভাবে নিচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে চাপ। যখন কেউ ব্যাট করতে নামছে, তখন চাপ থাকে। যখন দেখি চারটে স্লিপ ফিল্ডার আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আথবা আমার বাউন্ডারি ছাড়া কোনও উপায় নেই, তখনও একই চাপ।’’
বিরাট বলছেন মাঠের বাইরের চাপও তিনি উপভোগ করতে শুরু করেছেন। বলেন, ‘‘বাইরের চাপ থেকে পালিয়ে না গিয়ে আমি এটা উপভোগ করি। চাপের কাছ থেকে পালাতে চাইলে চাপ আমাকে সব সময় তাড়া করবে। সে এমন জায়গায় ফেলে দেবে, যা কল্পনাও করা যায় না। তাই চাপের সঙ্গে ভাব করে নিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে চলাই ভাল।’’
এমন দর্শন যে খেলোয়াড়ের, সাফল্য তাঁর নিত্যসঙ্গী হবে না?