ভক্তের সেলফি আবদার মেটাচ্ছেন রবি শাস্ত্রী।
প্রশ্ন: সৌরভ কাল টিভিতে আপনার প্রতিক্রিয়া দেখে বলছিলেন, রবি এই জয়ের মাহাত্ম্য জানে।
শাস্ত্রী: অফ কোর্স জানে। সৌরভ ঠিক বলেছে। শুনুন ভাই, বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল যাওয়া তো একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই। বাট ব্রাদার প্লিজ আন্ডারস্ট্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া! অস্ট্রেলিয়া! আল্টিমেট জয়। তা-ও এ ভাবে।
প্র: বিরাটের ইনিংসকে কী বলবেন?
শাস্ত্রী: লাবণ্যর ধারা।
প্র: শুধু লাবণ্য? ভেবেছিলাম আপনি অনেক কিছু বলবেনটলবেন। সেঞ্চুরিয়নে সচিনের ৯৮-এর পর আপনি বলেছিলেন অন্যরা ক্রিকেট খেলে, সচিন অন্য কিছু খেলে। এ বার সেখানে প্রশংসায় এত মিতব্যয়ী?
শাস্ত্রী: কী বলব! এখনও একটা ঘোরের মতো। আমার দেখা সর্বকালের সেরা তিনটে ইনিংসের মধ্যে এটা থাকবে। ক্লাসিক্যাল ব্যাটসম্যানশিপ যে টি-টোয়েন্টিতে দেখানো যায়, ও চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে।
প্র: আপনার সেরা তিন আন্দাজের চেষ্টা করছি। গাওস্করের বেঙ্গালুরুর ৯৬। সচিনের শারজা। তার পর এটা।
শাস্ত্রী: গাওস্করেরটা রাখবেন না। টেস্ট ম্যাচ অন্য জিনিস। এর সঙ্গে তুলনা হবে না। এটাকে মাপতে হবে ম্যাচের চাপ দিয়ে। ওই রকম দানবীয় আস্কিং রেট। তার ওপর ওই পরিমাণ চাপ যে, হেরে গেলেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায়! তাকে এত সহজে ম্যানেজ করা অবিশ্বাস্য!
প্র: কাল রাত্তিরের পর থেকে মাঠেঘাটে সর্বত্র এই তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে যে এ সচিনের চেয়েও ভাল। আপনি সচিনকে একেবারে শুরু থেকে দেখেছেন। আপনার মনে হচ্ছে না যে তুলনাটা এত তা়ড়াতাড়ি অযৌক্তিক?
শাস্ত্রী: একটা লোক যদি দিনের পর দিন এই পর্যায়ের ইনিংস খেলে, তাকে তো লোকে সচিনের সঙ্গে তুলনা করবেই।
প্র: আপনার নিজের কী মত?
শাস্ত্রী: নিজের মত মানে?
প্র: আপনি বিরাটকে কী রেটিং করবেন?
শাস্ত্রী: আমার দেখা সবচেয়ে ভাল ব্যাটসম্যানের যা রেটিং ওকে তাই দেব।
প্র: তাই?
শাস্ত্রী: অফকোর্স। সুপার ব্যাটসম্যান। আর তেমনই নার্ভ। চেজ করে যখন কম্পিউটারের মতো মাথাটা কাজ করে।
প্র: তা হলে কী দাঁড়াল? কে সেরা?
শাস্ত্রী: ও ভাবে বলা যায় না। আমি এটুকু বলতে পারি কাল কোহালি যে ইনিংস খেলেছে টি-টোয়েন্টিতে তার চেয়ে ভাল ইনিংস খেলা শক্ত। পাশাপাশি একটা কথা মনে রাখবেন। সচিনের দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ হয়নি। ওর যৌবনে টি-টোয়েন্টি থাকলে সচিনও কিন্তু এই ফর্ম্যাটে দারুণ ব্যাটসম্যান হত!
চণ্ডীগড় বিমানবন্দরের লাউঞ্জে ফিজিও ও যুবরাজ সিংহের সঙ্গে রবি শাস্ত্রীর মিনি বৈঠক। যুবরাজের ফিটনেস নিয়ে চিন্তা কাটেনি ভারতের।
প্র: ১৯তম ওভারে মাঠের মধ্যে তোয়ালে নিয়ে একজন ঢুকল। সে ধোনি-কোহালির সঙ্গে খানিকক্ষণ কথাও বলল। আপনার নিশ্চয়ই কোনও খবর পাঠানোর ছিল?
শাস্ত্রী: একেবারেই না। ওই স্টেজে ক্রিজে রয়েছে বিরাট আর ধোনি। ওদের আমার কিছু বলার দরকার আছে নাকি?
প্র: একবারও ভেবেছিলেন এই ম্যাচ বেরোবে?
শাস্ত্রী: ওদের ইনিংসের পর খুব ভেবেছিলাম।
প্র: এটা এখন জেতার পর বলছেন!
শাস্ত্রী: একদমই না। ১৬১ এই পিচে হওয়ার কথা। একটা ক্রাইসিস তৈরি হয়ে যাওয়ায় সেটা অসাধ্য মনে হচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচে আমাদের আগেই ফিরিয়েছে বোলাররা। ওদের কৃতিত্ব দিতে ভুলবেন না। চার ওভারে ৫৩ ফর নো লস মানে হল ১৯০/২০০ মাথায় নাচছে। ওই অবস্থায় নেহরা-বুমরাহ কী দারুণ বল করল! ভরত অরুণকে কৃতিত্ব দিতে ভুলবেন না (ভরত পাশ দিয়ে যাচ্ছেন তখন)। ও কিন্তু এমন এক হিরো যে কখনও বন্দিত নয়। অথচ অন্তরালে থেকে কাজের কাজটা করে।
প্র: আপনার কাছে ওটাই টার্নিং পয়েন্ট?
শাস্ত্রী: ইয়েস চার ওভার হয়ে যাওয়ার পর আমাদের বোলিং। এমএস খুব ভাল ক্যাপ্টেন্সিও করেছে। যে ভাবে বোলারদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ও ইউজ করল।
প্র: যুবরাজের তো লেগে গেল। কী মনে হচ্ছে, সেমিফাইনাল হবে?
শাস্ত্রী: (গম্ভীর এই প্রথম) দেখি ফিজিও কী বলে।
প্র: যুবরাজের ইনিংসটাও কি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না?
শাস্ত্রী: অবশ্যই। ও তো ইডেনেও ভাল খেলেছে।
প্র: ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে কী হবে?
শাস্ত্রী: দেখা যাক।
(সামনে দিয়ে এ বার হেঁটে যাচ্ছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। আনন্দবাজার অশ্বিনকে জিজ্ঞেস করল, এ বার তো আপনি আর আপনার কাস্টমার।)
অশ্বিন: হুম।
শাস্ত্রী: কাস্টমার? সেটা আবার কে?
অশ্বিন: আরে রবি ভাই বুঝলে না, ক্রিস গেইলের কথা বলছে।
শাস্ত্রী: ওহ কাস্টমার— তাই তো!
ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য