ভরসা: ভারতের সাফল্যে এই জুটির দিকেই তাকিয়ে কপিল। ফাইল চিত্র
দেশের কোনও প্রতিভাবান অলরাউন্ডার উঠে আসা মানেই তাঁর সঙ্গে তুলনা হতে বাধ্য। তিনি— কপিল দেব। বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক এবং ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের সঙ্গে অনেকে এখন তুলনা করতে শুরু করেছেন হার্দিক পাণ্ড্যের। তরুণ ভারতীয় অলরাউন্ডারকে নিয়ে তিনি নিজে কী মনে করেন, সে ব্যাপারে মোনাকোয় একটি অনুষ্ঠানে কথা বললেন কপিল।
সংবাদসংস্থাকে কপিল বলেন, হার্দিককে ব্যাটিংয়ে উন্নতি করার দিকে আরও নজর দিতে হবে। ‘‘হার্দিকের প্রতিভা এবং ক্ষমতা দুটোই আছে। অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করা মানে ওকে আরও চাপে ফেলে দেওয়া। আমি চাই মাঠে নেমে ও নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী খেলুক। উপভোগ করুক,’’ বলেছেন কপিল।
সদ্য শেষ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে প্রথম টেস্টে ৯৩ রান করার পরে সিরিজের বাকি ফর্ম্যাটে আর একটিও হাফসেঞ্চুরি পাননি হার্দিক। কপিলের মতে, হার্দিক প্রধানত ব্যাটিং অলরাউন্ডার। যে কোনও অলরাউন্ডারের একটি বা দুটি দক্ষতার উপরে বেশি জোর দেওয়া উচিত। হার্দিককেও এটা মাথায় রাখতে হবে। ‘‘আমি হার্দিককে জাতীয় দলে একটাই কারণে দেখতে চাই, সেটা নিশ্চিত ভাবে হয় এক জন ব্যাটসম্যান অথবা একজন বোলার হিসেবে। ওকে ব্যাটিংয়ের উপরে আরও জোর দিতে হবে কারণ ও ব্যাটসম্যান অলরাউন্ডার। যদি হার্দিক ব্যাট হাতে আরও ভাল পারফর্ম করতে পারে, তখন বোলিংয়ের দায়িত্বটা সামলানো ওর পক্ষে আরও সহজ হয়ে যাবে। অলরাউন্ডারদের ক্ষেত্রে এটাই হয়,’’ বলেছেন কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার।
কপিলের আরও মনে হচ্ছে, হার্দিক এখনও তরুণ, তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা করা হয়ে যাচ্ছে। ‘‘আমার মনে হয় হার্দিকের ক্ষমতা আছে। দলের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট ও। তবে অলরাউন্ডার হিসেবে সাফল্য পেতে গেলে ওকে আরও পরিশ্রম করতে হবে।’’
ক্রিকেট বিশ্বের সব দলই এখন আগামী বছরের বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। কপিল মনে করেন ভারতীয় দলকে বিশ্বকাপে সফল হতে গেলে অধিনায়ক বিরাট কোহালির আগ্রাসন এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ঠান্ডা মাথা, দুটোরই প্রয়োজন হবে। ‘‘মাঠে এ রকম একটা জুটি থাকা কিন্তু দারুণ কাজে আসতে পারে। কেন না জিততে গেলে এমন একজনকে চাই যে মাঠে মাথা ঠান্ডা রাখবে, চুপচাপ থাকবে, খেলাটা বুঝবে পাশাপাশি এমন একজনকেও চাই যে ভীষণ আগ্রাসী।’’ সঙ্গে কপিলের সতর্কবার্তা, ‘‘তবে দলের সবাই আগ্রাসী বা সবাই শান্ত হলে সেটাও কিন্তু কিন্তু মুশকিল। তাই দুটোরই মিশেল থাকলে সেটা টিমকে সাহায্য করবে।’’
কপিল আরও মনে করেন বিরাট কোহালির নেতৃত্বে ভারতীয় দলের আসন্ন ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দুরন্ত পারফরম্যান্স করার ক্ষমতা রয়েছে। ‘‘বিরাটকে দেখেই বোঝা যায়, ও যেটা বিশ্বাস করে সেটা করে দেখানোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে। ক্যাপ্টেনের কাজ হল দলের মধ্যেও এই বিশ্বাসটা ঢুকিয়ে দেওয়া। যদি বিরাট সেটা পারে তা হলে ভারতীয় দলের ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় সাফল্য না পাওয়ার কোনও কারণ নেই। ভারতীয় দলের এই দুটো সিরিজে সফল হওয়ার ক্ষমতা আছে। এ ব্যাপারে আমার কোনও সন্দেহ নেই।’’
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে প্রথম দুটো টেস্টে হারের পরে ভারতের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ কপিল। তিনি বলেন, ‘‘টেস্ট সিরিজে ভারত আরও ভাল ফল করতে পারত। তবে সিরিজের শেষ দিকে ভারতীয় দল দুর্দান্ত খেলেছে। ওয়ান ডে এবং টি টোয়েন্টিতে ভারতীয় দল আধিপত্য রেখে খেলেছে। যেটা এর আগে আমরা পারিনি। যদি প্রথম দুটো টেস্টেও ভারত এ ভাবে খেলতে পারত তা হলে ছবিটা অন্য রকম হতো।’’
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় দলের ছোট ফর্ম্যাটে সাফল্যের নেপথ্যে বিরাট কোহালির দুরন্ত ফর্মের পাশাপাশি রিস্ট স্পিনারদেরও প্রশংসা করেন কপিল। ‘‘বিরাট দুরন্ত ছিল। পাশাপাশি আমার মনে হয় রিস্ট স্পিনাররাও আসাধারণ খেলেছে। এক বছর আগেই টিমে ছিল রবীন্দ্র জাডেজা, আর. অশ্বিন। কিন্তু এখন এ রকম দু’জন দুরন্ত ক্রিকেটার দলে সুযোগ পাচ্ছে না। এতেই বোঝা যাচ্ছে ভারতীয় দলের গভীরতাটা।’’