অতন্দ্র প্রহরা। গদ্দাফি স্টেডিয়াম ।
ছ’বছর আগে লাহৌরের লিবার্টি গোল চক্কর। শ্রীলঙ্কা টিম বাসের উপর জঙ্গিদের নির্বিচার গুলির দুঃসহ স্মৃতি আজও তাঁর মনে আছে ছবির মতো। সে দিন দু’টো গুলি তাঁর যকৃৎ আর ফুসফুস ফুটো করে বেরিয়েছিল। নিজের পায়ে ফের উঠে দাঁড়াতেই লেগে গিয়েছিল ছ’মাসের বেশি। তবু পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে এহসান রাজা বলছেন, ‘‘নিজেকে এত দিনে সম্পূর্ণ মনে হচ্ছে!’’
ছ’বছর পর সেই অভিশপ্ত লাহৌরেই গদ্দাফি স্টেডিয়ামে শুক্রবার জিম্বাবোয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে শাহিদ আফ্রিদির পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ম্যাচের দুই ফিল্ড আম্পায়ারের এক জন রাজা। যাঁর জীবনে শুক্রবার একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হচ্ছে। জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে দায়িত্ব পেয়ে সেই পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় টেস্টে রিজার্ভ আম্পায়ার ছিলেন। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসাবে একুশটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা চল্লিশ বছরের রাজা এ দিন বলেছেন, ‘‘সম্ভবত এই মুহূর্তে গোটা পাকিস্তানে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ নয়। দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলানো পর্যন্ত আমার জীবনটাই অসম্পূর্ণ ছিল।’’ রাজার কথায়, ‘‘ঘটনাটা পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পেরেছি। কোনও রাগ, ক্ষোভ বা ভয় আজ আর নেই। তবে প্রতি বছরের ৩ মার্চ আমরা যে চার জন আম্পায়ার সে দিন ছিলাম, তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলি। মাঝের বারোটা মাসে জীবনে কী কী অভিজ্ঞতা হল, সেগুলো ভাগ করে নিই। ভেবে দেখি, জীবন ফিরে পেয়ে সেই জীবনটা নিয়ে ভাল কিছু করতে পারলাম কি না।’’
তিনি যে বেঁচে, নিজের পরিবারের সঙ্গে এবং আম্পায়ার হিসাবে সফল, এহসান রাজার মতে, সেটাই জীবনের পরম প্রাপ্তি। পুরো কুড়ি বোতল রক্ত দিয়ে সে দিন বাঁচাতে হয়েছিল তাঁকে। দফায় দফায় অস্ত্রোপচার চলে তার পরের ক’মাস। পেটের আশিটা সেলাইয়ের দাগ আজও টনটন করে মাঝেমাঝে। বলেছেন, ‘‘আম্পায়ারিং জীবনের শুরুতেই চরম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটা ঘটে। সে দিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যা যা ঘটেছিল, ছবির মতো মনে আছে। কিন্তু দিনটা তো শুধু আমার জন্য নয়, পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্যও খুব খারাপ ছিল।’’ যোগ করেছেন, ‘‘ওই একটা ঘটনা বিশ্বের সামনে আমাদের দেশকে ছোট করে দিয়েছিল। তবে জিম্বাবোয়ে আসতে রাজি হওয়ায় এত দিনে সেই ভাবমূর্তি পাল্টানোর একটা সুযোগ পাচ্ছে পাকিস্তান।’’
একই কথা এ দিন নানা সাক্ষাৎকারে বললেন আফ্রিদিও। ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফের খেলা হচ্ছে পাকিস্তানের মাটিতে। এর চেয়ে বেশি তৃপ্তির আর কিছু নেই। আশা করি জিম্বাবোয়ের পর অন্য টিমগুলোও এ দেশে খেলতে আসতে আর ভয় পাবে না।’’ সঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমার লক্ষ্য ভারতের মাটি থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া। তার জন্য পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি টিমটাকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।’’ জিম্বাবোয়ে সফরকে সেই দিকে প্রথম ধাপ বলছেন আফ্রিদি।