বাংলার ফুটবলে অন্ধকারের ছবি মেয়েদের খেলাতেও

আই লিগে দল নিয়ে ঢিলেমি

মহিলাদের আই লিগে নাম নথিভুক্ত করার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। বাংলা থেকে অংশ নেবে কোন দু’টো দল, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কেন? মহিলাদের আই লিগে মূল পর্বে খেলার জন্য আবেদনকারী দলগুলো নিজেদের মধ্যে খেলবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৩
Share:

বিতর্ক: ফুটবল নিয়ামক সংস্থার কর্তাদের ব্যর্থতায় উঠে আসছে না নতুন প্রতিভা, পিছিয়ে পড়ছে বাংলার মেয়েদের ফুটবলও। ফাইল চিত্র

ভারতের মহিলা সিনিয়র ফুটবল দলে এই মুহূর্তে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি সঙ্গীতা বাঁশফোর। একই ছবি অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলেও। বাংলা থেকে সুযোগ পেয়েছেন শুধু দেবনীতা রায়। অনূর্ধ্ব-১৬ ও ১৫ দলে কেউ নেই। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে প্রথম বছরের মতো এ বারও মহিলাদের আই লিগ (আইডব্লিউএল)-এ বাংলার কোনও ক্লাব হয়তো অংশ নিতে পারবে না!

Advertisement

মহিলাদের আই লিগে নাম নথিভুক্ত করার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। বাংলা থেকে অংশ নেবে কোন দু’টো দল, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কেন? মহিলাদের আই লিগে মূল পর্বে খেলার জন্য আবেদনকারী দলগুলো নিজেদের মধ্যে খেলবে। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স দল আই লিগের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করবে। অথচ বাংলায় মহিলাদের লিগ শুরু হওয়ার কথা কি না ডিসেম্বর মাসে! বাংলার মহিলা ফুটবলের দায়িত্বে থাকা সহ-সচিব কৌশিক বসু অবশ্য দাবি করছেন, আই লিগে বাংলার দল থাকবে। কী ভাবে? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘নাম নথিভুক্ত করার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর ঠিকই। কিন্তু আমরা সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কাছে আবেদন করেছি, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে নভেম্বরের মাঝামাঝি আমরা আই লিগে খেলার জন্য আবেদনকারী দলগুলোকে নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করব। ডিসেম্বেরের দ্বিতীয় সপ্তাহে যা শেষ হয়ে যাবে।’’ ফেডারেশন কি রাজি হয়েছে নাম নথিভুক্ত করার সময়সীমা বাড়াতে? বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থার সহ-সচিব বললেন, ‘‘ফেডারেশন এখনও সম্মতি দেয়নি। কথাবার্তা চলছে। আশা করছি ফেডারেশন আমাদের আবেদন মেনে নিয়ে সময়সীমা বাড়াবে।’’

সূত্রের খবর, ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল নাম নথিভুক্ত করার শেষ তারিখ। তা বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর করেছিল ফেডারেশন। চলতি বছরের মে মাসে আইএফএ-তে মহিলা ফুটবলের সাব কমিটির বৈঠকে চেষ্টা হয়েছিল জুলাই মাসে লিগ শুরু করার। কয়েক জন সদস্য আপত্তি জানান। তাঁরা বলেছিলেন, সেপ্টেম্বর মাসে মহিলাদের দলবদল শেষ হওয়ার পরে লিগ শুরু করতে। নভেম্বরের মাঝামাঝি লিগ শেষ হয়ে যাবে। ফলে আই লিগের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে কোনও সমস্যা হবে না। সেই দলবদল এখনও হয়নি!

Advertisement

২০১৬-’১৭ মরসুমে শুরু হওয়া আই লিগেও ছিল না বাংলার কোনও দল। কারণ খুঁজতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বাংলা থেকে আবেদন করেছিল— কলকাতা পুলিশ, তালতলা দীপ্তি ও চুঁচুড়ার মানিক ফুটবল কোচিং ক্যাম্প। ফেডারেশনের তরফে আইএফএ-কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, আবেদনকারী তিনটি দলকে নিয়ে প্রতিযোগিতা করে আই লিগের জন্য দল পাঠাতে। কিন্তু বাংলার নিয়ামক সংস্থার কর্তারা সময় মতো সেই চিঠিই দেখেননি! গত মরসুমে আই লিগে ছিল বাংলার চাঁদনি স্পোর্টিং ক্লাব।

ফেডারেশনের চিঠি দেখতে না পাওয়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয় আইএফএ-তে। কয়েক মাস আগে মেয়েদের সাব-জুনিয়র প্রতিযোগিতায় নাম নথিভুক্ত করার দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে তা নজরে আসে আইএফএ কর্তাদের! ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের দুই প্রাক্তন তারকা কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার ও শুক্লা দত্তের অভিযোগ, বাংলায় মহিলা ফুটবলকে আইএফএ গুরুত্বই দেয় না। ক্ষুব্ধ কুন্তলা বললেন, ‘‘আন্তঃ জেলা লিগ হয় না। কলকাতা লিগ কখন হবে কেউ জানে না। এ ভাবে চলতে থাকলে ফুটবলার উঠবে কী ভাবে?’’ অনূর্ধ্ব-২০ ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন শুক্লা দত্ত। বছর দু’য়েক আগে ক্ষোভে বাংলা ছেড়ে ওড়িশায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। গত মরসুমে তাঁর কোচিংয়েই মহিলাদের আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কটকের রাইজিং স্টুডেন্টস ক্লাব। তিনি বললেন, ‘‘জাতীয় দলে ফুটবলার নির্বাচিত করা হয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে। বাংলায় তো তার কিছুই হয় না।’’ ওড়িশা, মণিপুরের উদাহরণ দিয়ে যোগ করেন, ‘‘মেয়েদের ফুটবলকে এই দু’টো রাজ্যে প্রচণ্ড গুরুত্ব দেওয়া হয়। সারা বছর ধরে প্রচুর প্রতিযোগিতা হয়। তাই ফুটবলারও উঠে আসছে।’’

এই মুহূর্তে বিশ্ব জুড়েই মেয়েদের খেলাধুলো অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে মেয়েদের খেলা মন জয় করে নিচ্ছে ক্রীড়াপ্রেমীদের। যেমন, আগে ছেলেদের ও মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ একই সঙ্গে চলত। এ বার ওয়েস্ট ইন্ডিজে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে আলাদা ভাবে। শুক্রবার থেকে যা শুরু হচ্ছে। এর কোনও প্রভাবই চোখে পড়ছে না বাংলায়। আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আরও বেশি করে প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত। কিন্তু আর্থিক সমস্যায় তা সম্ভব হচ্ছে না। স্কুলে মেয়েদের ফুটবলের প্রচার চালানো উচিত।’’ জাতীয় দলে বাংলার প্রতিনিধির সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। আইএফএ সচিব কাঠগড়ায় তুলছেন ফেডারেশনকে। বললেন, ‘‘বাংলা তো জাতীয় পর্যায়ে খারাপ ফল করছে না। ফুটবলার নির্বাচন ঠিক মতো হচ্ছে বলে মনে হয় না। আমি মনে করি, জাতীয় দলে বাংলার আরও বেশি ফুটবলার থাকা উচিত।’’

কিন্তু কী ভাবে আরও বেশি ফুটবলার বাংলা থেকে সুযোগ পেতে পারে, সেই সুষ্ঠু প্রক্রিয়া কি তাঁরা আয়োজন করতে পারছেন? বাংলার ফুটবলের সর্বত্র দুর্দশার ছবি দেখার পরে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement