মীরাবাই চানু ফাইল চিত্র
বছর সাতেক আগে মণিপুরের ছোট্ট একটা গ্রাম থেকে যে মেয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল, শনিবার তিনি নামবেন সযত্নে লালিত একটা স্বপ্নকে সত্যি করতে। ভারতীয় সময় সকাল ১০.২০ থেকে গোটা দেশের নজর সম্ভবত থাকবে টোকিয়োয়। যখন পদকের লড়াই শুরু হবে মীরাবাই চানুর। তার অল্প সময়ের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে, ভারতীয় ভারোত্তোলকের গলায় পদক ঝুলবে কি না।
পারবেন কি চানু পাঁচ বছর আগের রিয়ো অলিম্পিক্সের দুঃস্বপ্ন মুছে ফেলে টোকিয়োয় ইতিহাস সৃষ্টি করতে? কর্নম মালেশ্বরীর পরে ভারোত্তোলনে প্রথম অলিম্পিক্স পদক জিততে? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরছে কোটি, কোটি ভারতবাসীর মনে।
শুক্রবার টোকিয়োয় যখন চানুর দীর্ঘদিনের কোচ বিজয় শর্মাকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে ধরা হল, তখনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হতে ঘণ্টা দু’য়েক বাকি। আনন্দবাজারকে বিজয় বলছিলেন, ‘‘আমরা পুরো তৈরি। চানু নিজের সেরাটা দিতেই নামবে। পদক জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না।’’ গত কয়েক বছর ধরে প্রায় সব রকম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন চানু। যে কারণে তাঁর উপরে প্রত্যাশাটা অনেক বেশি। আত্মবিশ্বাসী বিজয়ের কথায়, ‘‘এইটুকু বলতে পারি, চানু এখন জীবনের সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সেরা ফর্মে পৌঁছেছে। আর তো কয়েকটা ঘণ্টা। তার পরেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, কী হতে চলেছে।’’
ছাব্বিশ বছর বয়সি চানু তাঁর ৪৯ কিলো বিভাগে অন্যতম ফেভারিট হিসেবেই অভিযান শুরু করবেন। চানুর সেরা পারফরম্যান্স মোট ২০৫ কিলো ওজন তোলা। যে ওজন এ বার তুলতে পারলেই আট মেয়ের লড়াইয়ে পদক জিতে নেওয়ার কথা চানুর। এখন অনুশীলনে ‘ক্লিন অ্যান্ড জার্ক’ এবং ‘স্ন্যাচ’-এ কতটা ওজন তুলতে পারেন চানু? কোচ বলছেন, ‘‘আমরা সেই ভাবে অনুশীলন করছি না। কতটা ওজন তুলতে হবে, তা প্রতিযোগিতা চলার সময় পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক করে নেব। আমাদের মাথায় এখন একটা জিনিসই ঘুরছে। পদক।’’
বিজয় মানছেন, করোনা অতিমারির কারণে একটা সময় ধাক্কা খেয়েছিল চানুর প্রস্তুতি। কিন্তু তিন মাসে সেই ঘাটতি অনেকটাই মিটিয়ে নিয়েছেন। টোকিয়ো আসার আগে যুক্তরাষ্ট্রে অনুশীলন করেছেন চানু। কোচের কথায়, ‘‘মে মাসের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলাম আমরা। ওখানে করোনার জন্য কোনও বিধিনিষেধের মুখে পড়তে হয়নি। যে রকম চেয়েছিলাম, সে রকমই অনুশীলন করতে পেরেছি। তার পরে ওখান থেকে সোজা টোকিয়ো।’’ জাপানে আসার পরে কী ভাবে চলেছে অনুশীলন? বিজয় বললেন, ‘‘এখানে আমরা একটু হাল্কা ধরনের অনুশীলন করেছি। খুব বেশি চাপ দেওয়া হয়নি চানুর উপরে।’’
ভারোত্তোলন মহলে খোঁজ করলে জানা যায়, চানুর উত্থানের পিছনে কোচ বিজয়ের কত বড় ভূমিকা। চানুই বলেছেন, ‘‘বিজয় স্যরের জন্য ভুল-ত্রুটি শুধরে প্রত্যেক বছর উন্নতি করতে পারছি।’’ অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র পেতে গেলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পদক জিততে হয়। চানুর সেই রাস্তায় শেষ স্টেশন ছিল কলকাতা। রাজ্য ভারোত্তোলন সংস্থার তৎকালীন সচিব রঞ্জিত ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘কলকাতায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র পেয়েছিল চানু। সে দিন থেকেই আমরা নিশ্চিত, চানু টোকিয়োয় পদক পাবে। সেটা সোনা হলেও আশ্চর্য হব না।’’ বর্তমানে রাজ্য সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট রঞ্জিতবাবুর মন্তব্য, ‘‘কোচ বিজয় ওকে দারুণ ভাবে তৈরি করেছে। চানুর সাফল্যে কোচ এবং জাতীয় সংস্থার সচিব সহদেব যাদবের অবদান ভুললে চলবে না।’’
দিন সাতেক হল টোকিয়োয় পা রেখেছেন চানু এবং বিজয়। পদক অভিযানে নামার আগে ছাত্রীকে আড়াল করে রাখা কোচ বলছিলেন, ‘‘আমাদের এখানে কোনও সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছে।’’ আর করোনা-বিধি? কত বার করোনা পরীক্ষা করাতে হল টোকিয়ো আসার পরে? বিজয়ের জবাব, ‘‘আমাদের রোজ সকালে করোনা পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। খুবই কড়াকড়ির মধ্যে চলছে সব।’’