ফাইল চিত্র।
ডান পায়ের হাঁটুর অসহ্য যন্ত্রণা উপেক্ষা করে শনিবার ফ্রিস্টাইল কুস্তির ৬৫ কেজি বিভাগে কাজ়াখস্তানের দৌলেত নিয়াজ়বেকভকে ৮-০ হারিয়ে অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন তিনি।
রবিবার টোকিয়ো অলিম্পিক্সের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতের পতাকা বহন করলেন হরিয়ানার সেই কুস্তিগির বজরং পুনিয়া। তার আগে রবিবার সকালে ভারতের কিছু নির্বাচিত সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে বজরং জানালেন, হাঁটুর যন্ত্রণাকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জয়ের কাহিনি!
কী হয়েছিল? হরিয়ানার খুদান গ্রামের বাসিন্দা, ২৭ বছরের অলিম্পিয়ানের কথায়, ‘‘মা-বাবা আমার হাঁটুর চোটের ব্যাপারটা জানতেন। তাই আমি যে চোটের জায়গায় হাঁটু-বন্ধনী বা ব্যান্ডেজ বেঁধে লড়ছি, সে ব্যাপারেও অবহিত ছিলেন তাঁরা।’’ যোগ করেন, ‘‘সেমিফাইনালে হারের পরে খুব বিমর্ষ ছিলাম। বাড়িতে কথা বলার সময়ে মা বলেন, তোর চোটের দিকে মন চলে যাচ্ছে। কুস্তিতে মন থাকছে না।’’ অতীতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ভারতের হয়ে তিনটি পদক আনা (একটা রুপো, দু’টো ব্রোঞ্জ) এই ক্রীড়াবিদ বলে চলেন, ‘‘শনিবার লড়াইয়ের আগে ফিজিয়োথে্রাপিস্টকে বলি, এ বারের অলিম্পিক্সে এটাই শেষ ম্যাচ। পদক পেতেই হবে। আমার ব্যান্ডেজ ও হাঁটু-বন্ধনী খুলে দাও। ফিজিয়ো বলেছিল, ঝুঁকি হতে পারে। কিন্তু পদকের জন্য আমিও মরিয়া ছিলাম। তাই সেগুলো খুলে রেখেই লড়তে নেমেছিলাম।’’
প্রশ্ন ওঠে যদি চোট হত? ব্রোঞ্জ প্রাপ্তির সাফল্য কোভিড-যোদ্ধাদের উৎসর্গ করা বজরং বলেন, ‘‘চোট হলে বাড়ি ফেরার পরে বিশ্রামের সময় পাওয়া যাবে। তখন চোট সারিয়ে তোলা যাবে। অলিম্পিক্স পদক হাতছাড়া হলে তা আর ফিরে আসবে না, তাই ঝুঁকি নিয়েছিলাম।’’ যোগ করেন, ‘‘এতে আমি মানসিক ভাবে অনেক খোলা মনে যেমন লড়তে পেরেছি, তেমনই বিপক্ষের উপরেও পাল্টা চাপ তৈরি হয়েছিল যে, আমি চোট সারিয়ে লড়তে এসেছি।’’
বজরংয়ের বাবা-মা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, এই ব্রোঞ্জ পদক সোনার সমান। আপনিও কি এ ভাবেই দেখছেন জীবনের প্রথম অলিম্পিক্স থেকে পাওয়া এই সাফল্যকে? অর্জুন, পদ্মশ্রী ও মেজর ধ্যানচাঁদ খেলরত্ন সম্মানপ্রাপ্ত পালোয়ান এ বার বলেন, ‘‘বাবা-মা চোটের কথাটা জানতেন। তাই বলেছেন। যদিও আমি তা মানতে নারাজ। দেশ আমার কাছে সোনার পদক চেয়েছিল। আমি তা দিতে পারলাম না। কথা দিচ্ছি, তিন বছর পরে প্যারিস অলিম্পিক্স থেকে সোনা নিয়েই ফিরব।’’
বজরং জানিয়েছেন, পদকের জন্য মরিয়া হয়ে প্রস্তুতি নিতে গিয়েই অলিম্পিক্সের আগে চোট পান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘অলিম্পিক্সের আগে অতিমারি ভুগিয়েছে আমাদের সবাইকে। কোনও প্রতিযোগিতা ছিল না। সে কারণেই রাশিয়াতে প্রস্তুতি ও প্রতিযোগিতা দু’টোর জন্যই গিয়েছিলাম।’’ ব্রোঞ্জ জয়ী কুস্তিগির জানিয়েছেন, জিতুন বা হারুন, বাড়ি ফিরলেই মায়ের হাতের ‘চুরমা’ খেতে ভালবাসেন তিনি। এ বারও তা রাঁধবেন তাঁর মা। অলিম্পিক্সের থেকে পাওয়া শিক্ষা সম্পর্কে ছত্রশাল স্টেডিয়ামে কুস্তির পাঠ নেওয়া এই পালোয়ান বলছেন, ‘‘ভুল শোধরানোর সময় পাওয়া যায় না অলিম্পিক্সে।’’