পিকের সমর্থন পেলেও ‘দিনু দাস’ খোঁজাই আজ চ্যালেঞ্জ টালিগঞ্জের

আর্মান্দো কোলাসো বা সুভাষ ভৌমিক নন, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন আজ, মঙ্গলবার থাকবে সুব্রত ভট্টাচার্যের দিকেই। দেশের অন্যতম সফল কোচ পিকে চাইছেন, তাঁর ইস্টার্ন রেলের ছাপ্পান্ন বছর আগে গড়া ইতিহাস ছুয়ে ফেলুক টালিগঞ্জ অগ্রগামী। “আমি এখন মাঠে যেতে পারি না। কাল কিন্তু টিভির সামনে বসে খেলা দেখতে দেখতে প্রার্থনা করব বাবলুর টিম চ্যাম্পিয়ন হোক। বাংলার এবং ভারতীয় ফুটবলের স্বার্থে এটা দরকার,” কথা বলার সময় পিকের গলায় আবেগ।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৪
Share:

আর্মান্দো কোলাসো বা সুভাষ ভৌমিক নন, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন আজ, মঙ্গলবার থাকবে সুব্রত ভট্টাচার্যের দিকেই।

Advertisement

দেশের অন্যতম সফল কোচ পিকে চাইছেন, তাঁর ইস্টার্ন রেলের ছাপ্পান্ন বছর আগে গড়া ইতিহাস ছুয়ে ফেলুক টালিগঞ্জ অগ্রগামী।

“আমি এখন মাঠে যেতে পারি না। কাল কিন্তু টিভির সামনে বসে খেলা দেখতে দেখতে প্রার্থনা করব বাবলুর টিম চ্যাম্পিয়ন হোক। বাংলার এবং ভারতীয় ফুটবলের স্বার্থে এটা দরকার,” কথা বলার সময় পিকের গলায় আবেগ। ইচ্ছার ফানুস ওড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি হঠাৎ-ই ফিরে যান ’৫৮-র সেই ঐতিহাসিক বিকেলে। “টোকিও থেকে এশিয়ান গেমস খেলে ফেরার পর দেখি ছ’টা ম্যাচ ড্র করে বসে আছে ইস্টার্ন। মনে আছে আমি টানা ছয় ম্যাচে ছয় গোল করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলাম। দিনু (দাস) শেষ ম্যাচে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করে চ্যাম্পিয়ন করেছিল।”

Advertisement

পিকে যে কাজটা সে বার করেছিলেন, সেটা সুব্রতর দলের জন্য ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন এক নাইজিরিয়ানকোকো সাকিবো। কোকো করেছেন আট গোল। পিকে করেছিলেন বারোটি। কিন্তু আজ যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে দিনু দাস হবেন কে? তন্ময় কুণ্ডুু না নবীন হেলা? লাল-হলুদের ডুডু-র্যান্টিরা যে রকম দুর্ধর্ষ ফর্মে রয়েছেন তাতে কি ইস্টবেঙ্গলের গোলে বল ঢোকালেও লিড ধরে রাখা সম্ভব হবে টালিগঞ্জের? না কি ডুডু-র্যান্টি বনাম কোকো-ড্যানিয়েলদের অমীমাংসিত যুদ্ধ থেকে ফায়দা তুলে নেবেন সুভাষ ভৌমিক?

উত্তর জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত। লিগের ধুন্ধুমার উত্তেজক পরিসমাপ্তি ঘটবে তো তখনই। যা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও!

স্পনসরদের ডাকে এবং আটলেটিকো দে কলকাতার প্রচারে আজ যুবভারতীতে উপস্থিত থাকবেন সৌরভ। বলছিলেন, “আমার মনে পড়ছে না কখনও কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন কে হবে, সেটা নির্ধারনের এ রকম ম্যাচে উপস্থিত থেকেছি বলে!”

কলকাতা লিগের একশো ষোলো বছরের ইতিহাসে এ রকম অভূতপূর্ব পরিস্থিতি কখনও হয়নি বলছেন পরিসংখ্যানবিদরা। পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে লিগ খেতাবের জন্য দু’একবার তিন-চার দলের মধ্যে তুল্যমূল্য লড়াই হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত তা চলে গিয়েছিল হয় ইস্টবেঙ্গল নয় মোহনবাগানে।

কিন্তু এ বারের ত্রিমুখী যুদ্ধের মজা হল, মোহনবাগান এখানে একেবারেই দর্শক। ইস্টবেঙ্গল-টালিগঞ্জের মধ্যে কেউ যদি জিতে যায় তা হলে বাগানকে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে চার বছরের ট্রফি খরাও কাটবে না গঙ্গাপারের ক্লাবে। আর ম্যাচ যদি ড্র হয় তা হলে তো কেল্লাফতে। পাঁচ ম্যাচের লাইফ লাইনের পয়েন্ট সংগ্রহ করেও তাই হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হবে সুভাষ ভৌমিককে। নিউ আলিপুরের বাড়িতে বসে টিভির পর্দায় চোখ রেখে গুনতে হবে প্রহর।

কম দলের লিগ হলে এমনিতেই উত্তেজনা বেশি থাকে। কমতে কমতে কলকাতা লিগ এখন এগারো দলের। তার উপর ডাবল লিগের নিয়ম বদলে হয়েছে সিঙ্গল লিগ। ফলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াই হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয়।

ইতিহাস কখনও ব্যর্থদের মনে রাখে না। খেলার মাঠে তো নয়ই। ২০০৯-এ ছোট দল হিসাবে ইউনাইটেড স্পোর্টস একেবার টালিগঞ্জের মতোই পৌঁছে গিয়েছিল লিগ জয়ের চৌকাঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পারেনি। মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছিল সে বার। কেউ মনে রাখেনি ইউনাইটেডকে।

টলিউড তারকা, সাংসদ দেবকে এনে এ দিন ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন টালিগঞ্জ কর্তারা। একাত্মতা বাড়াতে করা হয়েছে দু’দিনের আবাসিক শিবিরও। সেখানে কোকো-বাবু মণ্ডলদের দেখানো হয়েছে ১৯১১-য় বাগানের আই এফ এ শিল্ড জয়ের ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে তৈরি ছবিও। কিন্তু আজ যুবভারতীতে সে সব কতটা কাজে দেবে লাল-হলুদ শব্দব্রহ্মের সামনে পড়লে? গ্যালারিতে মশাল জ্বলে উঠলে? আসলে জেতার রসায়নটা তো লুকিয়ে রয়েছে দেশের সব ট্রফি জেতা কোচ সুব্রত ভট্টাচার্যের ফুটবল মস্তিষ্কের উপর। জিতলে তিনি এবং তাঁর টালিগঞ্জের ঠিকানা হবে ইতিহাসের পাতা। না হলে স্থান হবে আস্তাকুঁড়ে।

কিন্তু উল্টো দিকেও তো রয়েছেন আর এক ধুরন্ধরআর্মান্দো কোলাসো। দেশের সব ট্রফি তিনিও বহুবার মুঠোয় ধরেছেন। তাঁর সামনেও ইতিহাসের কাছাকাছি আসার সুযোগ এ বার।

৭০ থেকে ৭৬ টানা ছ’বার কলকাতা লিগ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই স্বর্ণযুগের একেবারে কাছে আসার পথে ডুডু-র্যান্টি-অবিনাশ-প্রহ্লাদরা জিতেছেন নাগাড়ে পাঁচ ম্যাচ। আজ লিগ চ্যাম্পিয়ন হলে যে টানা পাঁচ বার খেতাব ঢুকবে ইস্টবেঙ্গলের পকেটে!

লাল-হলুদ কোচ আর্মান্দো বাইরে লিগ নিয়ে যে উন্নাসিক মনোভাব দেখাচ্ছেন, সেটা অবশ্যই আরোপিত বলে মনে হচ্ছে ড্রেসিংরুমের আবহাওয়া দেখে। তিনিও বুঝে গিয়েছেন, ক্লাবের বাইরে হঠাৎ তৈরি কালো মেঘ আর গুমোট কাটাতে পারে একমাত্র লিগ খেতাবই। আসলে কলকাতা লিগ জিততে অভ্যস্ত ইস্টবেঙ্গলের সামনে এটাই যে এখন একমাত্র মোটিভেশন।

লিগ টেবলে কে কোথায়

• মোহনবাগান ১০ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট

• ইস্টবেঙ্গল ৯ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট

• টালিগঞ্জ ৯ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট

চ্যাম্পিয়নের অঙ্ক

• ইস্টবেঙ্গল-টালিগঞ্জ ম্যাচ ড্র হলে মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন।

• ইস্টবেঙ্গল-টালিগঞ্জ ম্যাচে যে জিতবে সেই দল চ্যাম্পিয়ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement