বার্তোস-ফাতাই। ডার্বির দুই নতুন মুখ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস, উৎপল সরকার
মরসুমের প্রথম ডার্বিতে বল গড়ানোর আগেই একটা স্কোরলাইন বলে দেওয়া যাচ্ছে! মোহনবাগান-৬ : ইস্টবেঙ্গল-২। যদিও এই স্কোরলাইনে যারা এগিয়ে, তুলনায় বেশি সমস্যায় তারাই!
আসলে রবিবাসরীয় ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম একাদশে সম্ভবত যেখানে দু’জন মাত্র নতুন ফুটবলারের অভিষেক হতে চলেছে, সেখানে সে রকম প্লেয়ারের সংখ্যা মোহনবাগানে হয়তো ছয়।
আজকের ডার্বিতে লাল-হলুদের অ্যাটাকিং লাইনটাই যা নবাগত। র্যান্টি মার্টিন্সের সঙ্গে হয় লিও বার্তোস, নয় ডুডু নামবেন।
সেখানে মোহনবাগানের প্রথম দলে ডিফেন্স-মাঝমাঠ-ফরোয়ার্ড, সব বিভাগেই কারও না কারও এটাই প্রথম কলকাতা ডার্বি! আলাও ফাতাই আদিসা, ধনচন্দ্র সিংহ, সতীশ সিংহ, শেহনাজ সিংহ, জেজে এবং বলবন্ত।
একঝাঁক তরুণ মুখ এবং প্রথম বার ডার্বি খেলা ফুটবলারদের নিয়ে রবিবার নতুন চ্যালেঞ্জ বাগান টিডি সুভাষ ভৌমিকের। তুলনায় আর্মান্দো কোলাসোর টিম বেশ অভিজ্ঞ। ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ এবং মাঝমাঠে যাঁরা আজ ডার্বি খেলবেন প্রত্যেকেই এই মহাটেনশনের ম্যাচের চাপ নিতে অভ্যস্ত। সে জন্যই ডার্বির আগের দিন লাল-হলুদের বিপক্ষ শিবিরে বসে সুভাষকে বলতে শোনা গেল, “আমার টিমের অনেকেরই রবিবারই ডার্বিতে আবির্ভাব ঘটবে। ইস্টবেঙ্গলে বরং ডার্বি-অভিজ্ঞ ফুটবলারই বেশি। এটা ওদের প্লাস পয়েন্ট। আবার উল্টোটাও তো হয়।”
চৌম্বকে তাতে বলাই যায়, রবিবারের লড়াই লাল-হলুদের অভিজ্ঞতা বনাম সবুজ-মেরুনের তারুণ্যের।
র্যান্টিকে আটকানোর দায়িত্ব থাকবে যাঁর উপর, সেই ফাতাইয়ের প্রথমবার শুধু ডার্বিই নয়, সবুজ-মেরুন জার্সিতেই অভিষেক হতে চলেছে। যদিও কলকাতায় পা রাখার পর ফাতাইয়ের একটিও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ না খেলা ভাবাচ্ছে বাগান টিডিকে। ডার্বির চাপ তিনি কতটা নিতে পারবেন, সেটাই এই মুহূর্তে বড় প্রশ্ন মোহনবাগান শিবিরে! শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে সুভাষ বললেন, “ডার্বির আগে লিগে ফাতাই অন্তত একটা ম্যাচ খেললে ভাল হত।”
জেজে এবং বলবন্ত সিংহ দুই স্ট্রাইকারই প্রথম বার কলকাতায় খেলতে এসেছেন। মিজোরামের জেজে এসেছেন ডেম্পো থেকে। আর পঞ্জাব-তনয় বলবন্ত গত মরসুমে চার্চিলের জার্সি গায়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন। আই লিগে ১০ গোল রয়েছে তাঁর। ডার্বির মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে মুখিয়ে রয়েছেন দুই ফুটবলারই। জেজে যেমন শনিবার প্র্যাকটিস সেরে বাড়ি ফেরার আগে বলে গেলেন, “গোয়ার ডার্বিতে এ রকম উত্তেজনা নেই। এখানে একেবারে অন্য পরিবেশ। জীবনের প্রথম কলকাতা ডার্বিতে গোল করে দলকে জিতিয়ে স্মরণীয় করে রাখতে চাই।” বলবন্ত আবার বলে দিয়েছেন, “ময়দানের ডার্বির কথা অনেক শুনেছি। আলাদা কোনও চাপ নেই। নিজের সেরাটা দিতে চাই।”
দুই সাইড ব্যাক ধনচন্দ্র এবং সতীশ প্রথম বার ডার্বি খেলতে নামার আগে ভেতরে ভেতরে যতটা উত্তেজিত, ততটাই উদ্বেগে রয়েছেন। গত দু’বছর ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে কলকাতায় খেলার সুবাদে এখানকার বড় ম্যাচের উত্তেজনা সম্পর্কে ধনচন্দ্র ওয়াকিবহাল। তবে বললেন, “অন্য ম্যাচের তুলনায় ডার্বি একেবারে আলাদা। একটা বাড়তি চাপ তো থাকবেই।” কুড়ি বছরের সতীশের মতো বছর একুশের শেহনাজও ডার্বি খেলতে পারার সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া। বাগানের আইকন ফুটবলার পিয়ের বোয়া হয়তো পরিবর্তে নামলে তাঁরও এটা অভিষেক ডার্বি হবে।
এ বারের কলকাতা লিগে এখনও পর্যন্ত বিরাট নজর কাড়তে পারেননি র্যান্টি। তবে চাইছেন ডার্বিতে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে জেতানোর পাশাপাশি মহানায়ক হয়ে ফিরে আসতে। শুক্রবারই শহরে এসে পৌঁছেছেন ডুডু। সই করতে যাওয়ার আগে বলছিলেন, “ডার্বির জন্যই আমার এত তাড়াতাড়ি কলকাতায় আসা।” বার্তোসও চাইছেন, ডার্বিতে গোল করে অন্যদের ছাপিয়ে যেতে।
এখন দেখার অভিষেকের ম্যাচ শেষে কে মহানায়ক হন, কে খলনায়ক!