ভারতীয় স্পিনাররা বল করতে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশা মতোই ভেঙে পড়েছিল ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। ট্রেন্টব্রিজে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা আবার দেখাল স্পিনের বিরুদ্ধে খেলার মানসিকতা, টেকনিক এবং বুদ্ধি খাটানোর ইচ্ছে, কোনওটাই ওদের নেই! ইয়ান বেলের মতো প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানকেও কেমন যেন অসহায় দেখাল!
শনিবারের ম্যাচটায় ক্রিকেটের সব বিভাগেই ভারত টেক্কা দিয়ে গেল ইংল্যান্ডকে। বিশেষ করে ফিল্ডিংয়ে। ব্যাটিং আর বোলিংটাও দুর্দান্ত করল। এই ফরম্যাটে বল হাতে অশ্বিন-জাডেজা যুগলবন্দি দারুণ জমছে। যেটুকু কাজ বাকি থাকছে, সেটা সুরেশ রায়না এসে শেষ করে দিচ্ছে। তিন জনে মিলে ইংল্যান্ড ব্যাটিংকে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে। এই ত্রয়ীর সামনে ইংল্যান্ড এতটাই হতভম্ব যে ফর্মে থাকা জো রুট পর্যন্ত সে দিন রায়নার সোজা ডেলিভারিটা কিনা ফস্কে স্টাম্পড হয়ে বসল! রুটের খেলার ধরন থেকেই স্পষ্ট, ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড ঠান্ডা মাথায় পরিষ্কার করে চিন্তাভাবনাই করতে পারছে না। রুটকে ও ভাবে আউট হতে দেখে আমি অবাকই হয়েছি। ইংল্যান্ডের এই লাইন-আপের এক দিনের ক্রিকেটে অভিজ্ঞতার অভাবটা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
রায়না আবার এই সিরিজে ভারতীয় দলের উপর একটা বিশাল প্রভাব ফেলছে। ক্যাপ্টেন ওর হাতে বল তুলে দিলে উইকেট নিচ্ছে, ব্যাটসম্যানের শট ওর কাছে গেলে রান আউট করছে, অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিচ্ছে। আর ব্যাট হাতে তো একটা সেঞ্চুরি-সহ দুটো ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে দিল! আসলে এই ফরম্যাটে রায়না প্রকৃত ম্যাচ উইনার। আর সেটা জানে বলেই দুরন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছে। এক দিক থেকে দেখলে, রায়নার এই অফুরন্ত আত্মবিশ্বাস কী থেকে আসছে সেটা আমি বুঝছি। ১৯৯২ বিশ্বকাপ জেতার পর একটা লম্বা সময় আমার মধ্যেও এমন আত্মবিশ্বাসের খনি তৈরি হয়েছিল। মনে হত, যে কোনও ওয়ান ডে বা টেস্ট ম্যাচ আমি একার হাতেই জিতিয়ে দিতে পারব। আসলে প্রত্যেক ক্রিকেটারের কেরিয়ারে এমন একটা সময় আসে যখন সব কিছু একেবারে নিখুঁত অর্কেস্ট্রার মতোই ঠিক হয়। সে যা করে সেটাই খেটে যায়। রায়নার জীবনে এটা সেই সময়। এই সুসময়টাকে সম্পূর্ণ ভাবে সদ্ব্যবহার করা উচিত ওর।
আমি জানি অনেকেই মনে করেন যে, রায়না নিজের ন’বছর লম্বা ক্রিকেট কেরিয়ারে বিদেশের মাঠে ব্যাট হাতে প্রত্যাশা পূরণ করায় ব্যর্থ। আমার কাছে কিন্তু সেটা অপ্রাসঙ্গিক। প্রাসঙ্গিক হল এই মুহূর্তে ভারতকে ও জেতাচ্ছে। পাঁচ বছর আগে রায়না কী করেছিল তাতে এখন কী আসে-যায়? গুরুত্বপূর্ণ হল ছেলেটা ক্রমশ ম্যাচ উইনার হয়ে উঠেছে। আমি যে-কোনও পরিস্থিতির ইতিবাচক দিকটা দেখা পছন্দ করি। আমার কাছে ব্যাটসম্যান রায়নার এটাই সবচেয়ে বড় উত্তরণ।
ভারতের অন্য বাঁ-হাতি শিখর ধবনও ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে খুব চেষ্টা করছে। ওর শুরুটা ভালই হচ্ছে। তবে আবার কাট করতে গিয়ে আউট হল। ওকে কিন্তু সতর্ক হতে হবে। কাট করার সময় ওর ব্যাট উঠে গিয়ে শটটা গগনে চলে যাচ্ছে।
আমি অবশ্য মনে করি, ভারত সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা মাঠে নয়, জিতছে ড্রেসিংরুমের মধ্যে। যেখানে রবি শাস্ত্রীর উপস্থিতি গোটা দলকে পাল্টে দিয়েছে। ইংল্যান্ডের সমস্যা হল, রবির মতো অভিজ্ঞ এবং ক্ষুরধার কোনও ক্রিকেট মস্তিষ্ক ওদের ড্রেসিংরুমে নেই। তেমন কেউ থাকলে হয়তো ইংল্যান্ডের এই দশা হত না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এই পর্যায়ে এসে কোচের পক্ষে ক্রিকেটারের টেকনিক পুরোপুরি বদলে দেওয়া কখনওই সম্ভব নয়। কিন্তু মনঃস্তাত্বিক লড়াইয়ের জায়গাটা সে মজবুত করে দিতে পারে। ধোনিদের এই মনঃস্তাত্বিক সাহায্যটাই রবি দিচ্ছে। প্রাক্তন ক্রিকেটর হিসাবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ও মাঠের পরিস্থিতি আগাম আন্দাজ করে নিতে পারছে। ফলে বল বা ব্যাট করতে নামার আগে রবির পরামর্শগুলো ভারতীয় দলের দারুণ কাজে লাগছে।
আমি তো বলব, রবির জন্যই ভারত এমন দাপট দেখাচ্ছে। আমি যা দেখছি, এখান থেকে সিরিজে ভারত শুধুই আরও উন্নতি করবে!