বিরাট কোহলির হাতে ব্যাটটাকে আজকাল যোদ্ধার হাতে তরবারির মতো লাগছে রবি শাস্ত্রীর!
ভারতের টিম ডিরেক্টর একই সঙ্গে জানাচ্ছেন, কোহলির সেই তলোয়ার চালানোর মধ্যে কিংবদন্তি ভিভিয়ান রিচার্ডসের সংহার মূর্তিটাই দেখতে পান তিনি। শাস্ত্রীর কথায়, ‘‘বিরাটের কিছু কিছু শট খেলা দেখে আমার বারবার ভিভের কথা মনে হয়। ভিভের মতোই ক্রিকেটের সব ফরম্যাটকে দাপটে শাসন করতে পারে বিরাট।’’
সদ্য সমাপ্ত অস্ট্রেলিয়া সিরিজে পরপর দু’টি এক দিনের ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন বিরাট। টি-টোয়েন্টি সিরিজের তিন ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি। বিরাটের সেই ধুন্ধুমার ইনিংসগুলোর দিকে ফিরে তাকিয়ে শাস্ত্রী এ দিন বলেছেন, ‘‘আজকাল ওর হাতে ব্যাটটা যোদ্ধার হাতে তরোয়ালের মতো লাগে আমার। যা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে!’’
বিরাটের সঙ্গে ক্যারিবিয়ান মহাতারকার তুলনাটা অবশ্য নতুন নয়। ভিভ রিচার্ডস নিজেই এর আগে বলেছিলেন, বিরাটের খেলায় তিনি নিজের ছায়া দেখতে পান। যে প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত বিরাট। ভারতের টেস্ট অধিনায়ক নিজে তুলনাটাকে ‘‘স্বপ্নের মতো’’ বলে থাকেন।
তবে এই মুহূর্তে ভারতীয় টপ অর্ডারের দুর্ধর্ষ ফর্মটাকে ঘোর বাস্তব বলছেন শাস্ত্রী। আর সেটাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখাচ্ছে!
ভারতীয় টিম ডিরেক্টরের বিশ্বাস, রোহিত শর্মা, শিখর ধবন আর কোহলির ত্র্যহস্পর্শে অস্ট্রেলিয়াকে যে ভাবে তাদের ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে দুমড়ে দেওয়া গিয়েছে, আসন্ন বিশ্বকাপে বাদবাকি ক্রিকেট বিশ্বকেও ঠিক সেই ভাবেই শাসন করা যাবে। বলেছেন, ‘‘টি-টোয়েন্টি হল লটারি। তবে আমরা শুরুটা কী ভাবে করি তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। এটুকু বলব, বিশ্বের যে কোনও মাঠে যে কোনও টিমকে হারানোর ক্ষমতা আমাদের আছে।’’
শাস্ত্রী জানিয়েছেন, টপ অর্ডারের তিন ফলাকে নিজের মতো ব্যাটিং করার স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শিখরকে প্রথম বল থেকেই চালিয়ে খেলার লাইসেন্স দেওয়া আছে। ব্যাটে-বলে হওয়া শুরু হলে ওকে থামানো ভীষণ কঠিন।’’
রোহিত শর্মা সম্পর্কে শাস্ত্রীর তিন বিশেষণ— ‘‘জাত ক্রিকেটার, অতুলনীয়, বিস্ফোরক!’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘ওর ভয়ডরহীন ভাবটাই বিপক্ষের শিরশিরানি ধরিয়ে দিতে যথেষ্ট।’’
আর বিরাট কোহলি? ‘‘ও বিপক্ষের আক্রমণকে প্রথমে ফালাফালা করে। তার পর কুচিয়ে কাটে ব্যাটটাকে তলোয়ারের মতো ব্যবহার করে।’’
অথচ এই বিরাটই ২০১৪-য় ইংল্যান্ডের মাটিতে দুঃস্বপ্নের একটা সিরিজে শুধুই ব্যর্থ হয়েছিলেন। যার জেরে তাঁর বাগদত্তা অনুষ্কা শর্মাকেও কাঠগড়ায় তুলতে পিছপা হননি নিন্দুকেরা। পরে বিরাট জানান, সেই দুঃস্বপ্ন থেকে তাঁকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করায় শাস্ত্রীর কাছে তিনি চিরকৃতজ্ঞ। অফ স্টাম্পের বাইরের সব বলে খোঁচা মারার প্রবণতা কাটাতে শাস্ত্রী তাঁকে অফ-মিডল গার্ড নিয়ে ক্রিজের একটু বাইরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। সঙ্গে বুঝিয়েছিলেন দু’পায়ের ফাঁকটা ঠিক কতটা হলে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হবে। এ দিন সে প্রসঙ্গ উঠলে শাস্ত্রী বলেছেন, ‘‘এত বড় করে দেখার কিছু নেই। ছোটখাটো কয়েকটা বিষয় ছিল। আসল হল বিরাট পরামর্শগুলো কাজে লাগিয়েছে।’’ তবে ত্রয়ীর প্রশংসা করলেও শাস্ত্রী সাফ বলছেন, ভারতীয় টিমের সাফল্য স্রেফ এই তিন জনের উপর নির্ভর করে নেই। ‘‘আসল হল এই দলের প্রত্যেকে একে অপরের জন্য খেলে, একে অপরের সাফল্য চায়। সঙ্গে গত এক বছরে ব্যাটিংয়ের পাশে বোলিং আর ফিল্ডিংয়েও দারুণ উন্নতি করেছি আমরা। বিশেষ করে ফিল্ডিংয়ে,’’ বলছেন শাস্ত্রী। যাঁর মতে, সুরেশ রায়না আর যুবরাজ সিংহের দলে ফেরাটাও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাহায্য করবে। বলেছেন, ‘‘রায়না দারুণ ফিনিশার। তবে আমি বেশি খুশি যুবির জন্য। শেষ ম্যাচের ওই চার আর ছয়টা ওর আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া যুবি থাকা মানে বোলিংয়েও বৈচিত্র বাড়া।’’
টি-টোয়েন্টি সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ক্লিন সুইপ করার আগে ধোনিকে নিয়ে সমালোচনার যে ঝড় উঠেছিল তাতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ শাস্ত্রী। টিম ডিরেক্টরের বক্তব্য, ‘‘একটাই কথা বলব, কিংবদন্তিদের ঘাঁটিও না। আবার বলছি, ঘাঁটিও না। বরং অভিধানে একটা শব্দের মানে দেখে নাও— সম্মান।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনির অবদান বেশি ক্রিকেটারের নেই!’’