ম্যাচের বল দলকে দিলেন মাহি

ধোনি নিজে কখনওই ঢাকঢোল পিটিয়ে কিছু করেন না। বিয়ে করেছেন, সতীর্থরা জানতে পারেননি। চার বছর আগে টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন, কেউ ঘুণাক্ষরেও আগে থেকে টের পাননি।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০৪:১২
Share:

শিরোনামে: এই সেই মুহূর্ত। আম্পায়ারের থেকে বল নিচ্ছেন ধোনি। টুইটার

হেডিংলেতে শেষ এক দিনের ম্যাচের একটি ভিডিয়ো ক্লিপ। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ম্যাচ এবং সিরিজ হারের শেষে আম্পায়ারের কাছ থেকে বলটি চেয়ে নিচ্ছেন তিনি।

Advertisement

আর সেই ভিডিয়ো নিয়েই সারা দিন ধরে উত্তাল গোটা দেশ। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কি তা হলে সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকেও এ বার অবসর নিচ্ছেন? পুরোপুরি ভারতীয় ক্রিকেট থেকে সন্ন্যাস নিয়ে নেবেন? শুধু আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হলুদ জার্সিতে দেখা যাবে তাঁকে?

এমনিতে ম্যাচ শেষে স্টাম্প সংগ্রহ করে রাখাটা ধোনির অনেক দিনের অভ্যেস। কিন্তু এখানে প্রশ্ন উঠেছে, হারা ম্যাচের বল স‌ংগ্রহ করে রাখবেন কেন তিনি? বুধবার রাত পর্যন্ত সরকারি ভাবে কেউ এ নিয়ে কোনও বক্তব্য না দেওয়ায় আরও বেশি করে জল্পনা হতে থাকে। ধোনি নিজে কখনওই ঢাকঢোল পিটিয়ে কিছু করেন না। বিয়ে করেছেন, সতীর্থরা জানতে পারেননি। চার বছর আগে টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন, কেউ ঘুণাক্ষরেও আগে থেকে টের পাননি।

Advertisement

তখনও তিনিই ছিলেন অধিনায়ক। মেলবোর্নে সে দিন ম্যাচের পরে প্রেজেন্টেশনে এসেও ধোনি জানাননি যে, তিনি টেস্ট থেকে অবসর নিচ্ছেন। ড্রেসিংরুমে ঢুকে সতীর্থদের জানান, আধ ঘণ্টা পরে তাঁর অবসরের সিদ্ধান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেয় বোর্ড। অতীতের সেই সব উদাহরণ থেকেই টুইটারে ছেয়ে যায় ধোনি-ভক্তদের প্রার্থনা— মাহি আমাদের ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি চলে যেয়ো না। এখনও তুমি চ্যাম্পিয়ন!

খোঁজখবর নিয়ে বুধবার রাতের দিকে যা জানা গিয়েছে, তাতে অবশ্য আশ্বস্ত বোধ করতে পারেন ধোনি ভক্তরা। হেডিংলেতে হারের পরে চরম কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নিয়ে ফেলেননি ধোনি। এ ব্যাপারে একাধিক সূত্র থেকে ইঙ্গিত মিলেছে। চার বছর আগে মেলবোর্ন টেস্টের পরে ড্রেসিংরুমে ঢুকে টেস্ট থেকে অবসরের কথা জানিয়ে সতীর্থদের অবাক করে দিয়েছিলেন ধোনি। হেডিংলেতে সে রকম কিছু করেননি। আরও জানা গিয়েছে, ম্যাচের বলটি আম্পায়ারের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে তিনি নিজের কাছেও রাখেননি। দলের হাতে তুলে দিয়েছেন। অবসরের জল্পনা-কল্পনা তাই আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

রহস্য বরং থাকতে পারে, বলটি আম্পায়ারের থেকে নিয়ে দলের হাতে তুলে দেওয়ার কারণ কী? যে ভিডিয়োটি টুইটারে ঘুরছে, সেখানে দেখা গিয়েছে ধোনি আম্পায়ারের থেকে বলটি চাইছেন। আর তাঁর পাশে তখন বিরাট কোহালি। ম্যাচ জিতে আগে আগে হাঁটছেন ইংল্যান্ডের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান জো রুট এবং অইন মর্গ্যান। দেখা গিয়েছে, ধোনি বলটি চাওয়ামাত্র কোহালি মুখ ঘুরিয়ে সে দিকেই তাকিয়ে আছেন।

কারও কারও মত, ম্যাচের বলটি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার জন্যই হয়তো তা চেয়ে নিয়েছিলেন ধোনি। সুইং করল কী করল না, কুলদীপ যাদবরা পরে বল করার সময় স্পিন বেশি করল না কেন? উপমহাদেশে ব্যবহৃত বল আর ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবহৃত বল এক রকম নয়। বিশেষ করে সফরের প্রথম দিকে অন্য ধরনের এই বলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সমস্যা হয় বোলারদের। ওয়ান ডে সিরিজের পরে ধোনি এ বার আলাদা হয়ে গেলেন দল থেকে। জানা গিয়েছে, ধোনি ইংল্যান্ড থেকে সকালেই বেরিয়ে পড়েছেন। দেশে ফেরার পরে আজ, বৃহস্পতিবার একটি বিয়ের নেমন্তন্ন রক্ষা করতেও যাবেন তিনি।

তার আগে অবসরের উদ্বেগ নয়, হয়তো ওয়ান ডে হারের ময়নাতদন্ত করার অস্ত্রই উপহার দিয়ে গেলেন বিরাটদের। টেস্ট খেলার প্রস্তুতি নিতে এ দিনই হেডিংলে থেকে ট্রেনে চেপে অভিনব যাত্রায় সকলে মিলে লন্ডন পৌঁছলেন কোহালিরা।

আসলে জল্পনা ফুলেফেঁপে ওঠার কারণ, ধোনির ফর্ম। ইংল্যান্ডে এ বার একেবারেই স্বভাবসিদ্ধ মেজাজে দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। লর্ডসে দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে ৫৯ বলে ৩৭ করায় এমনকি, ভারতীয় দর্শকদেরই বিদ্রুপের শিকার হতে হয় তাঁকে। শেষ এক দিনের ম্যাচেও দলের কঠিন সময়ে তাঁর ৬৬ বলে ৪২ রানের মন্থর ইনিংসও সমালোচিত হচ্ছে।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় টিভি-তে বলেছেন, ধোনিকে একেবারেই স্বাভাবিক ছন্দে দেখা যাচ্ছে না। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক এমনও বলেন যে, সময় হয়েছে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কাকে খেলাব? ধোনি না দীনেশ কার্তিক? কমেন্ট্রি বক্স যতই বিরূপ হয়ে পড়ুক, দল কিন্তু এখনও মাহির পাশে। এমনিতেই ধোনির প্রতি নজিরবিহীন শ্রদ্ধা রয়েছে এখনকার অধিনায়ক কোহালির। তার উপর প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মতো দল এখনও বিশ্বাস করতে নারাজ যে, তাঁদের প্রিয় মাহি ফুরিয়ে গিয়েছেন।

দু’টো বিশ্বকাপ, একটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং তিন বার আইপিএল জেতা মহানায়ক হেডিংলেতে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন, সারা দিন ধরে চলা জল্পনা এখনই সত্যি হওয়া কঠিন। হেডিংলেতে আম্পায়ারের কাছ থেকে বল চেয়ে নিয়ে মাঠ ছাড়াটা তাই সত্যিই শেষ দৃশ্য হলে ‘বোল্ড’ হয়ে যেতে পারেন সতীর্থরাও। তখন হয়তো বলতে হবে, চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবের চেয়েও রহস্যময় ‘বোলারের’ নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement