স্মরণ: খেলার মধ্যেই সালাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য স্টেডিয়ামে। গেটি ইমেজেস
কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। এখনও হদিশ নেই এমিলিয়ানো সালার। ধরেই নেওয়া হচ্ছে, ইংলিশ চ্যানেলে তলিয়ে গিয়েছে বিমান। যে বিমানে যাত্রী হিসেবে কার্ডিফ সিটিতে সই করা বছর ছাব্বিশের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার আসছিলেন ফ্রান্স থেকে। হতোদ্যম উদ্ধারকারীরা থামিয়েছেন অনুসন্ধানের অসম যুদ্ধ। যদিও লিয়োনেল মেসি, দিয়েগো মারাদোনাদের মতো অসংখ্য ফুটবলপ্রেমীও চান খোঁজার চেষ্টা চলুক। বিশেষ তহবিলও তৈরি হয়েছে উদ্ধারকার্যের খরচ তুলতে।
আশার এ হেন আকুতির মধ্যেও সকলে মেনে নিচ্ছেন, সব শেষ। এমনকি আর্জেন্টিনার সান্তা ফে-তে সালার পরিবারও ধরে নিচ্ছে, তাঁর জীবিত থাকার সম্ভাবনা কার্যত নেই। সেই বেদনাময় উপলব্ধি স্পষ্ট হল মঙ্গলবার এমিরেটস স্টেডিয়ামে। নামেই প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ। আর্সেনাল ২-১ হারাল কার্ডিফ সিটিকে। পিয়ের এমেরিক আবুমেয়ং, আলেকজান্দ্রে ল্যাকাজ়েত গোল করলেন। সংযুক্ত সময়ে পেনাল্টি থেকে ১-২ করে কার্ডিফ সিটি। ২৪ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে চেলসিকে ধরে ফেলল আর্সেনাল।
ইপিএলের লন্ডন ডার্বি নিয়ে যেন আগ্রহ নেই ফুটবলপ্রেমীদের। না থেকেও সালা যেন থাকলেন ম্যাচে! সম্মান জানাতে কার্ডিফ সিটি সালার নাম রেখেছিল খেলোয়াড় তালিকায়। মেসির দেশের এক অখ্যাত ফুটবলারের জন্য এমিরেটসের গ্যালারি ভরে গেল প্ল্যাকার্ডে। যার এক-একটার আবেগ হয়ে উঠল আক্ষরিক কবিতা! ‘‘কখনও আমরা তোমাকে দেখিনি/ দেখিনি তোমাকে গোল করতেও/ কিন্তু প্রিয় এমিলিয়ানো, তুমি আমাদের সুন্দর নীল সেই পাখি/ চিরকাল তোমাকে ভালবাসব।’’
এমন নয়, এটা শুধু এমিরেটসে খেলা দেখতে আসা কার্ডিফ ভক্তদের আর্তি। শামিল হয়েছেন আর্সেনালের সমর্থকেরাও। ফুলে-ফুলে ভরে গেল স্টেডিয়াম। খেলার শুরুতেই দু’দলের অধিনায়ক সালার স্মৃতিতে রঙিন ফুলের তোড়া রাখলেন মাঠের সবুজে। ভেঙে পড়তে দেখা গেল কার্ডিফ সিটি ম্যানেজার নিল ওয়ারনককে। তাঁর উদ্যোগেই সালা সই করেছিলেন কার্ডিফে। ‘‘এত কষ্ট নিয়ে সপ্তাহটা কাটালাম যে বলার নয়,’’ বললেন নিল। খেলার শুরুতে পালিত হল নীরবতাও। এর মধ্যেই কার্ডিফ সিটির ডিফেন্ডার সল বাম্মা সবাইকে চমকে দিয়ে জানিয়ে গেলেন, সালার ঘটনায় ক্লাবের অনেক ফুটবলার এখন বিমানে উঠতেই ভয় পাচ্ছেন।
কিন্তু আতঙ্ক ছাপিয়ে থাকল বেদনা। সান্তা ফে-র ট্রাক ড্রাইভারের ফুটবলার-পুত্রের শোকে জয়ের উৎসবই করল না আর্সেনাল। তাদের অধিনায়ক লোহঁ কুসেনির মনে পড়ল, ২০১৫ সালে প্যারিসে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পরে ফ্রান্স-ইংল্যান্ড ম্যাচের থমথমে রাতের কথা, ‘‘ভাবিইনি যন্ত্রণার সেই সন্ধিক্ষণে ফিরে আসতে হবে কখনও।’’