টিম ওয়েলস হারাতে পারে ‘ওয়ান ম্যান’ পর্তুগালকে

মনে হচ্ছে, ফ্রান্স-জার্মানি সেমিফাইনাল থেকেই বেরিয়ে আসবে ইউরো ২০১৬-র চ্যাম্পিয়ন। ওটাই কার্যত ফাইনাল ম্যাচ। যদিও দু’টো দল একে অন্যের ঠিক উল্টো ভাবে শেষ চারে পৌঁছেছে। ফ্রান্স শল্য চিকিৎসকের পেশাদারিত্বে নির্মম ভাবে আইসল্যান্ডের স্বপ্নে ছুরি চালিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে। যাদের কাছে কিনা আমার ইংল্যান্ড হেরে গিয়েছে এই টুর্নামেন্টে।

Advertisement

পিটার শিলটন

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৭
Share:

রোনাল্ডোর শেষ চারের প্রস্তুতি। ছবি: এএফপি

মনে হচ্ছে, ফ্রান্স-জার্মানি সেমিফাইনাল থেকেই বেরিয়ে আসবে ইউরো ২০১৬-র চ্যাম্পিয়ন। ওটাই কার্যত ফাইনাল ম্যাচ। যদিও দু’টো দল একে অন্যের ঠিক উল্টো ভাবে শেষ চারে পৌঁছেছে। ফ্রান্স শল্য চিকিৎসকের পেশাদারিত্বে নির্মম ভাবে আইসল্যান্ডের স্বপ্নে ছুরি চালিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে। যাদের কাছে কিনা আমার ইংল্যান্ড হেরে গিয়েছে এই টুর্নামেন্টে। ফলে ফ্রান্সের রেজাল্ট ইংলিশদের ক্ষতে যেন নুনের ছিটে! অন্য দিকে জার্মানি নাটকীয় পেনাল্টি শ্যুট-আউটে কোনওক্রমে ইতালির বাধা টপকেছে। যে ম্যাচটা কেবল ভুরি-ভুরি হলুদ কার্ডেই বিদ্ধ ছিল না, পুরো খেলাটা যেন দু’টো ম্যাচের সময় নিয়ে শেষ হয়েছে!

Advertisement

এ বারের ইউরোয় আইসল্যান্ডের পারফরম্যান্সের প্রতি সমস্ত শ্রদ্ধা রেখেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, জার্মানির তুলনায় ফ্রান্সের কোয়ার্টার ফাইনাল প্রতিপক্ষ সহজ ছিল। ইতালির বিরুদ্ধে জার্মানদের খেলা যতক্ষণ না পর্যন্ত অ-জার্মানোচিত ভুলে জেরোম বোয়াতেং বোকার মতো পেনাল্টি পাইয়ে দিল বিপক্ষকে, ততক্ষণই দারুণ দেখিয়েছে। ওই পর্যন্ত জার্মানি ম্যাচটাকে ট্যাকটিক্যালি শাসন করে যাচ্ছিল। তার পরের সময়টায় ওদের খেলাটা যেমন হল সেটা সম্ভবত চাপে পড়ে। যেটা আবার শেষমেশ জার্মানদের মনোরঞ্জক কিন্তু একইসঙ্গে চরিত্রবিরোধী স্নায়ুর লড়াইওয়ালা শ্যুট-আউটে শেষ হল ওদেরই অনুকূলে।

যার তুলনায় ফ্রান্সের শেষ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আয়ারল্যান্ড আর আইসল্যান্ড। আমি দেখতে মুখিয়ে আছি, এ বার ওরা সেমিফাইনালে শক্তপোক্ত শরীরের আর কড়া ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত জার্মানির বিরুদ্ধে কেমন খেলে! যারা ফাইনালের দিকে গর্জন তোলার জন্য একেবারে সঠিক পরিস্থিতিতে আছে। কাগজে পড়লাম, উনিশশো আটান্নর পরে কোনও বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে জার্মানিকে হারাতে পারেনি ফ্রান্স। কিন্তু নিছক পরিসংখ্যানকে আমি খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ। এই মুহূর্তে যা অবস্থা তাতে এই ম্যাচের বিজয়ী কারা হবে ভবিষ্যদ্বাণী করাটা কঠিন।

Advertisement

জার্মানি সম্ভবত ওদের প্রথম দলের কয়েকজন ফুটবলারকে সেমিফাইনালে পাবে না। যাদের মধ্যে নাকি মারিও গোমেজ, স্যামি খেদিরা ছাড়াও বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টাইগারও আছে। আর সেটা সত্যি হলে ওদের জন্য বিরাট ভয়ের কারণ থাকবে। যদিও টুর্নামেন্টের শুরুতে আমার বলা কথাটাই আবার এখানে বলব— জার্মানি এমন একটা দল যার জার্সি গায়ে কারা মাঠে নামল সেটা বড় কোনও ব্যাপার নয়। ওরা বড় টুর্নামেন্ট জেতার একটা না একটা রাস্তা ঠিক বার করে নেয়।

অন্য সেমিফাইনালের দু’দলের মধ্যে ওয়েলস সবাইকে অবাক করে দিয়েছে ওদের পারফরম্যান্সে। আমি যার পুরো কৃতিত্ব দেব ওয়েলস ম্যানেজার ক্রিস কোলম্যানকে। অসাধারণ জমাট ডিফেন্স করছে। অনবদ্য আবেগ নিয়ে খেলছে। আর সেই রায়ান গিগসের খেলার সময় থেকে ওয়েলস বলতে যে একটা ‘ওয়ান-ম্যান টিম বোঝাত, সেটাকেও ওরা মনে হয় অনেক পিছনে ফেলে দিকে পেরেছে। বিশেষ করে এ বারের ইউরোয়। গত বেশ কিছু বছর ধরে ওয়েলস দলে ভাল ভাল ফুটবলার খেলছে। কিন্তু কোনও দিন ওরা বড় সাফল্য পায়নি। আজ গ্যারেথ বেল, অ্যারন র‌্যামসেদের সৌজন্যে ওয়েলসকে প্রতি ম্যাচে আগের চেয়ে উন্নত দেখাচ্ছে।

এই ইউরোয় ওয়েলস হাফটাইম বা খেলা শেষের ঠিক আগে, মানে বিরতির আশপাশে গোল করার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা দেখিয়েছে। কিন্তু সেমিফাইনালে র‌্যামসের মতো ফুটবলারকে ওরা পাচ্ছে না বলে ওয়েলসকে আমার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের সামনে লেস্টার সিটি মনে হচ্ছে! আন্ডারডগ কিন্তু যে কোনও সময় অঘটন ঘটিয়ে দিতে লেস্টারের মতোই ওয়েলস দুর্দান্ত ডিফেন্স করে, প্রতিটা বলের পিছনে নাগাড়ে তাড়া করে আর নিজেরা বেশি উপরে না উঠে খেলবে।

পর্তুগালকে বরং খানিকটা ‘ওয়ান-ম্যান টিম’ দেখাচ্ছে। তবে ওদের মাঝমাঠে স্যাঞ্চেজের মতো নজরকাড়া ফুটবলার থাকবে। এই টুর্নামেন্টে ওরা গোটাকয়েক ম্যাচ কোনওক্রমে জিতেছে, যেগুলো ওদের সহজে জেতা উচিত ছিল। পর্তুগাল ফুটবলারদের হঠাৎ হঠাৎ পেটের ভেতর গুড়গুড়ুনি ওঠা, যেটা মাঠে বোঝাও যায়। আর তার ফলে ওদের ভুলভাল করে ফেলার ফায়দা যদি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং সংঘবদ্ধ ওয়েলস টিম তুলতে পারে, তা হলে কিন্তু রোনাল্ডোদের কপালে দুঃখ আছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement