জয়োল্লাস: বিজয়ী অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ছবি: রয়টার্স।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের বয়স তখন ২৪ ওভার পেরিয়ে গিয়েছে। এ বি ডি’ভিলিয়ার্স রান আউট হতেই মনে হল ম্যাচটা ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বিরাটদের আর কেউ রখতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত তা-ই হল।
রবিবারের এই জয়ের পরে বলতেই হবে, ভারতকে চ্যাম্পিয়নদের মতোই লাগছে। সেমিফাইনালেও এই ফর্মে থাকলে বাংলাদেশকে (সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী) হারিয়ে বিরাটদের ফাইনালে ওঠার রাস্তা খুব একটা কঠিন হবে না। আর বিরাটদের এই ফর্ম দেখে মাশরফি মর্তুজারা নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তায় পড়বে।
দল বাছাই, ক্যাপ্টেনসি থেকে হোমওয়ার্ক, পারফরম্যান্স— সবেতেই এ দিন ভারত নিখুঁত ছিল। টুর্নামেন্টে এই প্রথম বিরাটের দলকে দেখে এত ভাল লাগল। চ্যাম্পিয়নের মতোই খেলা শুরু করল ওরা।
যেমন বোলার পরিবর্তন, তেমনই বোলারের সঙ্গে কো-অর্ডিনেট করে ফিল্ডিং সাজানো। হার্দিক পাণ্ড্য যখন একটা ওভারে মার খেল, দশ রান দিল, তার পরই ওকে সরিয়ে রবীন্দ্র জাডেজাকে এনে রানটা ফের আটকে দিল। আবার অশ্বিন এক ওভারে দশ রান দিতেই ওকে বদলে হার্দিককে আনা হল। ফের হার্দিক এক ওভারে ১২ রান দিতেই আনা হয় যশপ্রীত বুমরাকে। বিরাট বোধহয় ঠিক করেই রেখেছিল, কোনও বোলারকে টানা মার খেতে দেবে না।
ভুবনেশ্বর দুর্দান্ত সুইং করাচ্ছিল। ওর বলের সিম পজিশন ছিল নিখুঁত। এক সময় দেখা গেল ওর সঙ্গে কথা বলে বিরাট প্রথম স্লিপ থেকে দ্বিতীয় স্লিপে সরে গেল। আর তার পরেই মর্নি মর্কেল দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ আউট। ক্যাপ্টেনের ভাবনাচিন্তা যে একেবারে ঠিকঠাক, এ তারই প্রমাণ। এটাই হল কোয়ালিটি ক্যাপ্টেন্সি।
আরও পড়ুন: বার্মিংহাম আমাদের প্রিয়: কোহালি
শুরু থেকেই হাসিম আমলাকে একদম মারার জায়গা না দেওয়াই বুদ্ধিমানের মতো কাজ হয়েছে। বোঝা গেল যে, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং নিয়ে বিরাটদের হোমওয়ার্কটা বেশ ভাল হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের সবারই এক অবস্থা। এত আঁটসাঁট বোলিং করেছে বুমরারা যে, এবিডি ছাড়া কারও স্ট্রাইক রেটই একশো ছুঁতে পারেনি। এবি-র ১৩৩-এর পর সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট ৭৩। আমলার আউটের পরই বোঝা গেল, কেন ইংল্যান্ডের এই কন্ডিশনে অশ্বিনকে এর পরের ম্যাচেও খেলানো উচিত।
ভারতের ব্যাটিং নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। বিরাটের জন্য প্ল্যান ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। কাগিসো রাবাডা বারবার অফ স্টাম্পের বাইরে খেলানোর চেষ্টা করছিল ওকে। কিন্তু বিরাটের মনঃসংযোগ যে জায়গায় ছিল, তাতে ওকে টলানো যায়নি। ও শুরু থেকেই নিশ্চিত হয়ে শট খেলছিল। টার্গেটের চাপটা ছিল না বলেই সেটা আরও ভাল ভাবে করতে পেরেছে। ফেলুকায়োকে ‘অন দ্য রাইজ’ মিড অফের উপর দিয়ে যে ওভার বাউন্ডারিটা মারল, সেটাই ছিল বিরাটের সেরা শট। ভারত অধিনায়ক যদি এই ফর্মে থাকে আর অফ স্টাম্পের বাইরের বলগুলোতে যদি এ রকমই যত্নবান হয়, তা হলে ওকে রোখা মুশকিল হবে। আর শিখর ধবন তো ব্যাটিং উপভোগ করতে শুরু করেছে, যা দলের পক্ষে খুবই ভাল। তবে রোহিত শর্মা যে শটে কট বিহাইন্ড হল, সেই শটটা ওর মারার কথা ৪৫-৪৬ নম্বর ওভারে। কম রানের টার্গেট যেখানে, সেখানে কেন শুরুতেই এই শট মারতে গেল, সেটাই প্রশ্ন। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের জন্যই বোধহয় ও এটা করে ফেলল।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একই দল নামা উচিত। উমেশকে বসে থাকতে হলেও উপায় নেই। কেদারকে বসানো উচিত না। কারণ, অশ্বিন, জাডেজা কেউই ব্যাটসম্যান হিসেবে পুরোপুরি ভরসা করার মতো নয়।
আর বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নই। গত কয়েক ম্যাচে তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ভাল ব্যাটিং করেছে ঠিকই। ভারতের বিরুদ্ধেও ওরা হয়তো লড়বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিততে পারবে না। তা হলে তো সবচেয়ে বড় অঘটন ওটাই।