তেজিন্দার পাল তুর। ছবি: সংগৃহীত।
প্রত্যাশা মতোই এশিয়ান গেমসে পুরুষদের শট পাটে সোনা জিতলেন তেজিন্দারপাল সিংহ তুর। ২০.৩৬ মিটার দূরত্বে শট পাট ছুড়ে দেশকে এ বারের গেমস থেকে ১৩তম সোনা এনে দিলেন তিনি। অ্যাথলেটিক্স থেকে এল দ্বিতীয় সোনা এল ভারতের ঝুলিতে।
পুরুষদের শট পাটে তেজিন্দারকে নিয়ে ভাল কিছুর আশা ছিল ক্রীড়াপ্রেমীদের। তিনি হতাশ করলেন না। গত এশিয়ান গেমসের মতো এ বারেও দেশকে সোনা দিলেন। রবিবারের লড়াইয়ের শুরুতে কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন তেজিন্দার। সেরা ফর্মে দেখা যাচ্ছিল না তাঁকে। প্রথম পাঁচটি প্রচেষ্টার তিনটিতেই ফাউল করেন। ষষ্ঠ তথা শেষ প্রচেষ্টায় ২০.৩৬ মিটার দূরত্বে শট পাট ছুড়ে সোনা জিতে নিলেন তিনি। তেজিন্দার দেশকে পদক দিলেও পারলেন না শাহিব সিংহ। একই ইভেন্টে তিনি ১৮.৬২ মিটার দূরত্বে শট পাট ছুড়ে অষ্টম স্থানে শেষ করলেন।
তেজিন্দারের দখলেই রয়েছে পুরুষদের শট পাটের এশীয় রেকর্ড। গত ১৯ জুন ভুবনেশ্বরে তিনি ২১.৭৭ মিটার দূরত্বে শট পাট ছুড়ে এশীয় রেকর্ড গড়েছিলেন। ২০১৮ এশিয়ান গেমসেও তিনি সোনা জিতেছিলেন। সে বার ২০.৭৫ মিটার দূরত্বে শট পাট ছুড়ে গেমস রেকর্ডও করেছিলেন। যা এখনও অটুট। তাঁকে নিয়ে প্রত্যাশা ছিলই।
আশির দশকে তেজিন্দারের বাবা পরমসিংহ তুর দড়ি টানাটানি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। পঞ্জাবে তাঁকে ‘হিরো’ বলে ডাকা হত। রাজ্যের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রচুর পদক জিতেছেন। কিন্তু এই খেলায় কোনও ভবিষ্যৎ না দেখে সব ছেড়ে মোগার খোসাপাণ্ড্য গ্রামে নিজের ১৫ একর জমিতে চাষবাস শুরু করেন। তবে বাবাকে দেখেই খেলার প্রতি ভালবাসা জন্মায় তেজিন্দারের। কিন্তু তিনি বড় কিছু করে ওঠার আগেই তাঁর বাবার ত্বকের ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসা করেও তেমন লাভ হয়নি। তিন বছরের মধ্যে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে হাড়ে। এখন গুরুতর অসুস্থ তিনি। কমনওয়েলথ গেমসের সময় তেজিন্দার প্রায় বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন বাবার জন্য। তাঁকে আটকে ছিলেন বাড়ির সদস্যেরাই। খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। সে দিন পরিবারের সদস্যেরা তেজিন্দারকে না আটকালে এই সোনার দিন দেখা হত না তাঁর।
গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।
গ্রামের বাড়িতে নিজের বিছানায় শুয়ে তেজিন্দারের ফাইনাল দেখেছেন তাঁর বাবা। পরে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি দড়ি টানাটানিতে যে পরিশ্রম করতাম, তার ছ’গুণ পরিশ্রম ও আজ করেছে। বিদেশের মাটিতে ভারতের পতাকা উড়িয়েছে আমার ছেলে। এর থেকে বেশি আর কী চাই। ক্যানসার হওয়ার পর থেকে তেজিন্দার শুধু আমার শরীরের কথাই ভাবত। মনে হয় আজও ওর মাথায় আমার অসুস্থতার কথাই ঘুরছে।’’