বলের গতি অনেক বেড়েছে, বলছেন মাশরফি

মুস্তাফিজুরের অপেক্ষায় সাসেক্স থেকে সাতক্ষীরা

কে বলবে, এ ভারতের কোনও গ্রামের দৃশ্য নয়? রবিবার রাতে আইপিএল ফাইনালে যেমন মজে ছিল সারা ভারত, তেমনই উৎসাহের অন্ত ছিল না সেই ভিনদেশি গ্রামেও। সাতক্ষীরা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের উৎসাহী ছেলেপুলেরা জোগাড়-যন্ত্র করে একটা সাদা পর্দা আর একটা টিভি প্রোজেক্টরও বসিয়ে ফেলেন গ্রামের মাঠে।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৩:৫৮
Share:

কে বলবে, এ ভারতের কোনও গ্রামের দৃশ্য নয়?

Advertisement

রবিবার রাতে আইপিএল ফাইনালে যেমন মজে ছিল সারা ভারত, তেমনই উৎসাহের অন্ত ছিল না সেই ভিনদেশি গ্রামেও।

সাতক্ষীরা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের উৎসাহী ছেলেপুলেরা জোগাড়-যন্ত্র করে একটা সাদা পর্দা আর একটা টিভি প্রোজেক্টরও বসিয়ে ফেলেন গ্রামের মাঠে। রাতে আইপিএল ফাইনাল দেখবেন বলে। রাতে বড় পর্দার সামনে বসেও পড়লেন সাত-আটশো গ্রামবাসী। ম্যাচ শেষে শুরু হয়ে যায় উৎসব।

Advertisement

কিন্তু প্রতিবেশি দেশের ওই গ্রামে কেনই বা এত উৎসাহ আইপিএল ফাইনাল নিয়ে?

আইপিএলের সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান যে ওই গ্রামেরই ছেলে।

কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া এখন উৎসবে মাতোয়ারা। সারা গ্রাম মেতে রয়েছে তাঁদের প্রিয় মুস্তাফিজের সাফল্যে। সামনে আরও বড় উৎসব। ঘরের ছেলের জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে তেঁতুলিয়া। সোমবারই ঢাকা পৌঁছলেন তাঁদের নায়ক। সেখানেও তাঁকে নিয়ে হইচই। ঢাকায় ফোন করে জানা গেল, মুস্তাফিজুর সেখানে পৌঁছে বাংলাদেশ দলের ফিজিওর সঙ্গে সাম্প্রতিক চোট নিয়ে আলোচনায় বসেন।

এ দিনই আবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ছ’উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ান ডে আর টি- টোয়েন্টি অধিনায়ক মাশরফি মর্তুজা। ঢাকা তিনি ফোনে বলেন, ‘‘এটা অসাধারণ কৃতিত্ব মুস্তাফিজুরের। ছেলেটা দিন দিন উন্নতি করছে। বিধ্বংসী কাটার, ইয়র্কার তো ওর আছেই। মনে হচ্ছে ওর বলের গতিও দিন দিন বাড়ছে।’’ এখন ফিজের সামনে কাউন্টি ক্রিকেট। যেখানে তাঁর সাসেক্সের হয়ে মাঠে নামার কথা। তবে আগের ম্যাচে চোট পাওয়ার ফলে মুস্তাফিজুর কাউন্টি খেলতে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বাংলাদেশে জোর আলোচনা চলছে। সাসেক্স জানিয়েছে, তারা মুস্তাফিজুরের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি। ঢাকায় ফোন করে জানা গেল, মনে করা হচ্ছে, ফিজিওর সঙ্গে কাউন্টি খেলতে যাওয়া নিয়েই এ দিন আলোচনায় বসেছিলেন মুস্তাফিজুর।

রাজধানীতে আরও কিছু কাজ মিটিয়ে হয়তো মঙ্গলবারই ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবেন। আর তখনই শুরু হবে আসল উৎসব। সেই মুহূর্তের দিকেই মুখিয়ে রয়েছ মুস্তাফিজের গ্রাম।

সোমবার সন্ধ্যায় মুস্তাফিজুরের সেজো ভাই মুখলেছুর রহমান পল্টু যখন ফোনে এই খবরগুলো দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর গলায় উত্তেজনার সুর স্পষ্ট। বলেন, ‘‘ভাই তো আজই ঢাকায় এসে গিয়েছে। কাল হয়তো ওখান থেকে যশোরে আসবে প্লেনে। আমরা গাড়ি নিয়ে যাব যশোরে ওকে আনতে।’’ উৎসব কি সেখান থেকেই শুরু হয়ে যাবে? পল্টু বললেন, ‘‘না, না। গ্রামে আসার পরই যা হওয়ার হবে। এয়ারপোর্টে বেশি লোক যাচ্ছি না।’’

মুস্তাফিজের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় যতটা না খুশি তেঁতুলিয়া, তার চেয়েও বেশি আনন্দ তারা পেয়েছে তাদের গ্রামের ছেলে সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হওয়ায়। পল্টু বললেন, ‘‘আজও তো সারা দিন ধরে বাড়িতে শ-দেড়েক আত্মীয়-বন্ধু-প্রতিবেশীর ভিড়। সবাই অভিনন্দন জানাতে এসেছেন আব্বা-আম্মিকে। মুস্তাফিজ এলে আরও লোক আসবে হয়তো।’’

আগের ম্যাচে হ্যামস্ট্রিং চোটের জন্য খেলতে না পারায় রবিবারও খেলতে পারবেন কি না, তা ঠিক ছিল না। পল্টু বলেন, ‘‘রবিবারই দুপুরে ভাই ফোন করে জানায় ও খেলছে। সারা গ্রাম সেই খবরে চাঙ্গা হয়ে ওঠে আর মাঠে বড় পর্দা লাগানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।’’

মঙ্গলবার ছেলে ঘরে ফিরবেন কি না নিশ্চিত নন বাবা আবুল কাশেম। তবে মা মাহমুদা খাতুন ঠিক করে নিয়েছেন, কাল থেকে ছেলের প্রিয় দেশি মুরগীর ঝোল আর খিচুড়ি রান্নার জোগাড় রাখবেন। যে মুহূর্তে ছেলের আসার খবর পাবেন, রান্না শুরু করে দেবেন।

আবুল কাশেম তেঁতুলিয়া থেকে ফোনে বললেন, ‘‘ওর মা তো ছেলের জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। এত দিন ছেলেকে ছেড়ে রয়েছে তো। ওকে বোঝাচ্ছি, মুস্তাফিজুর এখন আর শুধু আমাদের ছেলে নয়, সারা বাংলাদেশের। এমনকী দেশের বাইরেও ওকে সবাই ভালবাসে। তাই এখন ওকে প্রায়ই এ রকম অনেক দিন না দেখে থাকতে হবে আমাদের। তবু মায়ের মন তো, মানে না। ছেলের প্রিয় খাবার রান্নার জন্য ছটফট করছে। ও তো চার ভাই আর দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। তাই সবার বড় আদরের।’’ আর কতদিনই বা থাকবেন মায়ের কাছে। কয়েকদিন পরেই হয়তো ফের বিলেত পাড়ি দেবেন কাউন্টিতে খেলতে। মা মাহমুদা খাতুন রবিবার সারা রাত উত্তেজনায় ঘুমোতে পারেননি। তাই এ দিন তাঁদের বাড়িতে যখন ফোন করা হল, তখন তিনি ঘুমোচ্ছিলেন। তবে সকালে বেঙ্গালুরু থেকে ফোন করে আম্মির সঙ্গে ঝাড়া দু’ঘণ্টা কথা বলেছেন মুস্তাফিজুর। সেখানেই কথা হয়ে গিয়েছে তাঁর বাড়ি ফেরার দিনের মেনু নিয়ে। আইপিএলে খেলতে আসার আগে আব্বা-আম্মিকে গাড়ি কিনে দিয়ে এসেছিলেন মুস্তাফিজ। সেই গাড়ি নিয়েই যশোর থেকে মুস্তাফিজুরকে আনতে যাবেন তাঁর ভাইয়েরা।

তার পর যা হবে, তা তেঁতুলিয়া বোধহয় কোনও দিনই দেখেনি। মুস্তাফিজুরও না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement