স্তম্ভিত ক্রীড়ামন্ত্রী ব্যবস্থা নিতে চান

আইওএ কুর্সিতে কলমডীর ফেরা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

ফের সুরেশ কলমডী। ফের বিতর্ক। ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থায় প্রত্যাবর্তন ঘটল কমনওয়েলথ গেমস দুর্নীতির মুখ্য চরিত্র কলমডীর। আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তবে এ বার সাম্মানিক। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামছে কোথায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫৪
Share:

ফের সুরেশ কলমডী। ফের বিতর্ক।

Advertisement

ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থায় প্রত্যাবর্তন ঘটল কমনওয়েলথ গেমস দুর্নীতির মুখ্য চরিত্র কলমডীর। আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তবে এ বার সাম্মানিক। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামছে কোথায়।

চেন্নাইয়ে মঙ্গলবার আইওএ-র বার্ষিক সাধারণ সভায় দুর্নীতির দায়ে জেলে যাওয়া কলমডীকে সংস্থার আজীবন প্রেসিডেন্ট করল আইওএ। আইওএ-র সদস্যদের সর্বসম্মত ভাবে নেওয়া এই সিদ্ধান্তে তোলপাড় দেশের ক্রীড়ামহলে। বছর ছয়েক আগেই কমনওয়েলথ গেমসে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির পিছনে যাঁকে প্রধান মাথা বলা হচ্ছিল, তিনি কী ভাবে আইওএ-র এত বড় একটা পদ পান, প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

শুধু কলমডীই নন, এই বৈঠকেই আইওএ আজীবন প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে আর এক বিতর্কিত চরিত্র, সংস্থার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অভয়সিংহ চৌটালাকেও। যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় চার বছর আগে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি সাসপেন্ড করে দিয়েছিল আইওএ-কে।

আইওএ প্রেসিডেন্ট নারায়ণ রামচন্দ্রনকে রাতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, ‘‘এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। সংস্থার সব সদস্যই এ ব্যাপারে এক মত। এর বাইরে কিছু বলার নেই আমার।’’ তবে আইওএ প্রেসিডেন্ট যাই বলুন, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী এই খবর শুনে ‘শকড্’। তড়িঘড়ি নিজের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তিনি বলেছেন, ‘‘ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। কী ভাবে আইওএ এই প্রস্তাব বৈঠকে পাশ করল? দুজনের বিরুদ্ধেই তো ফৌজদারি আর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।’’ সঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘তার উপর অভয়সিংহ চৌটালা আর ললিত ভানোট ক্ষমতায় আসার পরেই তো আইওসি সাসপেন্ড করে দিয়েছিল আইওএ-কে। তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার পর সেই সাসপেনশন ওঠে।’’

১৯৯৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত কলমডী আইওএ-র প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। যে সময়ে বিরাট দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর দশ মাস জেল হয়। পরে অবশ্য তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। তবে কলঙ্কের ছাপ তাতে মোছেনি। আইওএ-র সিদ্ধান্ত জানাজানি হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভাবে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে তাতে সেটা আরও স্পষ্ট। প্রশ্ন উঠছে যদি আইওএ-র সদস্যরা এ রকম জেল খেটে আসা দুর্নীতিতে নাম জড়ানো কাউকে সমর্থন করেন, সেটা তো দুর্নীতিকে সমর্থন করাই হল। এই যদি ভারতের খেলাধুলোর অন্যতম মুখ্য একটা সংস্থার ছবি হয়, তা হলে দেশের বাইরে কী বার্তা যাবে? তা ছাড়া ৭২ বছরের কলমডী এখন অসুস্থ। তাঁকে এ ভাবে সাম্মানিক পদ দিয়ে আইওএ-র কী লাভ হবে, প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

কলমডী-কিস্সা

১৯৮০: মহারাষ্ট্র অ্যাথলেটিক্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্রীড়া জগতে প্রবেশ।

১৯৮৯: অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট।

১৯৯৬: ইন্ডিয়ান অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইওএ)-র প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত।

২০০৩: হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত অ্যাফ্রো-এশিয়ান গেমসের চেয়ারম্যান।

২০০৮: পুণেতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় যুব কমনওয়েলথ গেমসের চেয়ারম্যান।

২০১০: দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসের চেয়ারম্যান। এক বছর পরেই দুর্নীতি, ফৌজদারি ষড়যন্ত্র ও আর্থিক তছরুপের দায়ে গ্রেফতার সিবিআইয়ের হাতে।

২০১১: ভারতে ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রি-তে দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযুক্ত কলমডি ও তাঁর পরিবার।

২০১২: দেশের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে বলে লন্ডন অলিম্পিক্সে যোগ দিতে পারেননি।

২০১৬: ইন্ডিয়ান অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের লাইফ প্রেসিডেন্ট পদে পুনরায় আবির্ভাব।

কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীও বিশদে জানতে চান ব্যাপারটা কী ভাবে হল। তার পর তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা আইওএ-র কাছে এ ব্যাপারে বিশদে জানতে চেয়ে রিপোর্ট চেয়েছি। সব খতিয়ে দেখে আমরা ব্যবস্থা নেব। দুর্নীতিতে নাম জড়ানো কেউ যাতে দেশের খেলাধুলোর সঙ্গে না থাকতে পারে সেটা আমরা দেখব।’’

আইওএ ভাইস প্রেসিডেন্ট তারলোচন সিংহ অবশ্য এই সিদ্ধান্তে সমস্যা কোথায় বুঝে উঠতে পারছেন না। তিনি বলছেন, ‘‘আইওএ যদি মনে করে কাউকে আজীবন প্রেসিডেন্ট করবে তা হলে কারও অনুমতির দরকার হয় না। আইওএ-র জেনারেল বডির এই ক্ষমতাটা আছে। তা ছাড়া সব প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকেই তো আজীবন প্রেসিডেন্ট বা পৃষ্ঠপোষক করা হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, এটা সাম্মানিক পদ। কোনও ক্ষমতা নেই এই পদের। ‘‘আজীবন প্রেসিডেন্ট তো একটা সাম্মানিক পদ। কোনও অফিস, ক্ষমতা নেই। আইওএ-র দৈনন্দিন কাজে আজীবন প্রেসিডেন্টের কোনও ভূমিকা নেই। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা কোথায় হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement