সুব্রত ভট্টাচার্যকে সম্মানিত করছেন চুনী গোস্বামী। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
যে সবুজ লনে নয় বছর আগে এক দল উগ্র সমর্থকের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন তিনি, সেখানেই তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল জনস্রোত। সংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছে দেওয়ার ‘কার্পেট’ হয়ে।
যাঁর কাছে প্রায় তিন বছর আগে ক্লাব নির্বাচনে হেরে তাঁবুতে আসা বন্ধ করেছিলেন, সেই ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন মঞ্চেই।
তাঁকে যখন মঞ্চে ডাকা হল, তখন যে শব্দব্রহ্ম উঠল, ছাব্বিশ বছর আগে তা উঠত গ্যালারিতে। এখনও কী আকুতি! এখনও কী উচ্ছ্বাস! সেলফি তোলার হুড়োহুড়ি।
ঘরের ছেলেকে ঘরে ফেরানোর আবহ কি এ রকমই হয়! শাসক গোষ্ঠী হাত বাড়িয়েছিল, সুব্রত ভট্টাচার্য তা যেন আরও শক্ত করলেন তাঁর বক্তৃতায়। ‘‘চুনী গোস্বামী আমাকে এনেছিলেন ক্লাবে। গজু বসু সই করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর কখনও ক্লাব ছাড়িনি। সুখে দুঃখে থেকেছি। তর্ক, বিবাদ তো হয়ই। সেটা মনে রাখতে নেই। এখন যাঁরা ক্লাব চালাচ্ছেন যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে চালাচ্ছেন। হার-জিৎ তো আছেই।’’ দশ মিনিটের বক্তৃতায় বিতর্কের কোনও নামগন্ধ নেই। নিজের ক্লাবের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘মোহনবাগান রত্ন’ নেওয়ার পর সবুজ-মেরুনের সুব্রতকে অন্য রকম মনে হচ্ছিল। ৬৪-তে পা দেওয়া সুব্রত অবশ্য শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় পরে এসেছিলেন হলুদ জামা। বাগানের ‘বাবলু’ এর পর আরও নস্ট্যালজিক। ‘‘আমি ক্লাবের জন্য কী করেছি জানি না। তবে আমাকে যখন রত্ন হিসেবে বাছা হয়েছে, মনে হয় কিছু করেছি। ভাল লাগছে।’’
যিনি কথা বললেই আগুন জ্বলে, ওঠে বিতর্কের ঢেউ, সেই সুব্রত যখন শান্ত ভাবে এ সব বলছিলেন, তখন বর্তমান ক্লাব কমিটির কর্তাদের মুখ গুলো চিকচিক করছিল। সামনে যে নির্বাচন! মঞ্চে বসে থাকা অন্য দুই ‘ঘরের ছেলে’ চুনী এবং সত্যজিৎ এলেন একসঙ্গে ছবি তুলতে। বহু দিন পর হাসিমুখে স্বস্তি ও আনন্দ মিশিয়ে সুব্রত দাঁড়িয়ে গেলেন তাঁদের মাঝে। এ বারের মোহনবাগান দিবসে তিনিই যে মধ্যমণি।
সুব্রত যদি একশো আঠাশ বছরের ক্লাবে এ দিন ‘মণি’ হন, তা হলে ‘মাণিক্য’ ছিলেন ঝুলন গোস্বামী। মাত্র ৯ রানে লর্ডসে বিশ্বকাপ খুইয়ে আসার পর বাংলার এই তারকা মেয়ের মনে এখনও আফসোস। তিনিও যে রিও-র দীপা কর্মকারের মতোই বাঙালির মননে ট্র্যাজিক নায়িকা হিসাবে গেঁথে গিয়েছেন, সেটা মালুম হল এ দিন। ঝুলনকে ঘিরেও উদ্বেল হলেন উপস্থিত দর্শক। যাঁদের মধ্যে অনেকেই মহিলা। সুব্রত চুপ থাকলেও বাগান কর্তাদের কিন্তু বেশ অস্বস্তিতে ফেললেন চাকদহের মেয়ে। ‘‘এ রকম সোনার সুযোগ হাতছাড়া করার পরও আপনারা আমাকে সম্মানিত করেছেন, এটা ভাল লাগছে। কিন্তু মোহনবাগান যদি ছেলেদের মতো মেয়েদের ক্রিকেটেরও একটা টিম তৈরি করে, তা হলে আমি আরও খুশি হব।’’ আর সেই প্রসঙ্গ লুফে নিয়ে ঝুলনের হাতে পুরস্কার দিতে আসা ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলে দিলেন, ‘‘মেয়েদের লিগ চালু হলে রাজ্য সরকার সব রকম সাহায্য করবে।’’
এ দিন জীবনকৃতী পুরস্কার তুলে দেওয়া হল প্রাক্তন ক্রিকেটার শ্যামসুন্দর মিত্রকে। বর্ষসেরা ফুটবলার ও ক্রিকেটার হলেন যথাক্রমে বলবন্ত সিংহ এবং দেবব্রত দাস। সংবর্ধনা জানানো হল দুই পর্বতারোহী শেখ সাহাবুদ্দিন ও কুন্তল কাঁড়ারকে। এভারেস্টে ওঁরা উড়িয়েছিলেন সবুজ-মেরুন পতাকা। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বাগানের দেওয়া এক লাখ টাকা নিতে হাজির মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
তবে ছিমছাম অনুষ্ঠানে একটা অপূর্ণতা থেকেই গেল। টিমের এই মরসুমের জার্সি উদ্বোধনের রেওয়াজটা ছেঁটে ফেলা হল। আসেননি কোনও ফুটবলারও।