মহড়া: বিস্ময় স্পিনার ধনঞ্জয়ের জন্য তৈরি ধোনি। ছবি: পিটিআই।
কোনটা বেশি বিস্ময়ে ভরা? শ্রীলঙ্কার বিস্ময় বোলার আকিলা ধনঞ্জয়ের স্পিন চাতুরি নাকি তাঁর দেশের অধিনায়ক ও দল নির্বাচন পদ্ধতি?
প্রথমে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ দলে থাকা সত্ত্বেও ওয়ান ডে অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন উপুল থরঙ্গা। যিনি স্লো ওভার রেটের জন্য দু’টি ম্যাচে নির্বাসিত হয়েছেন। থরঙ্গাকে অধিনায়ক করা তা-ও মানা যায় যে হেতু ম্যাথিউজ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী নন। কিন্তু থরঙ্গা সাসপেন্ড হওয়ার পর কি না ভারতের বিরুদ্ধে তৃতীয় এবং চতুর্থ এক দিনের ম্যাচে অধিনায়ক বেছে নেওয়া হয়েছে চামারা কাপুগেদারা-কে। সেটা নিয়ই চরম বিস্ময় তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ধনঞ্জয়ের দাপটেও আত্মবিশ্বাস ধাক্কা খাবে না বিরাটদের
গত পাঁচ বছরে কাপুগেদারা শ্রীলঙ্কার হয়ে আটটি ম্যাচ খেলেছেন। ছ’টি ইনিংসে করেছেন মোট ৭১ রান। গড় ১১.৮৩। এমন লোককে কী করে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হল? ধনঞ্জয়ের বিস্ময় ফিকে হয়ে গিয়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট এখন উত্তাল নেতৃত্বের বিস্ময় নিয়ে। অথচ, শ্রীলঙ্কার এই দলে অধিনায়কত্ব করার মতো লোক নেই, এমনও নয়।
দীনেশ চান্ডিমলকে দলে ফেরানো হয়েছে। তিনি টেস্ট দলের অধিনায়ক এবং অবধারিত ভাবেই প্রথম একাদশে থাকবেন। কুশল মেন্ডিস আছেন। যিনি ওয়ান ডে ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার সব চেয়ে সফল ব্যাটসম্যান এবং জুনিয়র বিভাগে অধিনায়ক হিসেবে বেশ সফল রেকর্ড রয়েছে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট মহলে অনেকেই মনে করেন, মেন্ডিসই ভবিষ্যতের নেতা। তাঁদের বাদ দিয়ে কেন ব্যর্থ এক ক্রিকেটারকে অধিনায়ক করা হল? কারও কারও মনে হচ্ছে, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের অন্দরমহলে মারাত্মক কিছু গন্ডগোল শুরু হয়েছে।
কাপুগেদারাকে নিয়েও আবার জল্পনা শুরু হয়ে যায় সন্ধের দিকে। তিনি চোট পেয়ে অনিশ্চিত এমন একটা খবর ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ভারতীয় সময় রাত ন’টা নাগাদ এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড। তাদের পক্ষ থেকে তখনও কোনও সরকারি বুলেটিনও দেওয়া হয়নি। ওদিকে, কাপুগেদারা মাঠে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গিয়েছেন, ভারতকে তাঁরা হারানোর ক্ষমতা রাখেন। অসম সাহসী মনোভাব দেখিয়ে এমনও বলে যান যে, ‘‘আমার মনে হয় না, টিম হিসেবে আমরা খুব সমস্যায় পড়েছি। টিমের মধ্যে পরিবেশ একদম ঠিক আছে। আমরা বিশ্বাস করি ভারতকে হারানো যায়।’’ এর পর যোগ করেন, ‘‘আমাদের একটা হার্ডল পেরতে হবে। তা হলেই ফল আসতে শুরু করবে। শেষ ম্যাচে আকিলা (ধনঞ্জয়) দারুণ বল করেছে। ওই ম্যাচটা আমাদের জেতা উচিত ছিল।’’
কাপুগেদারা কখনও শ্রীলঙ্কাকে নেতৃত্ব দেননি। সেই প্রসঙ্গ উঠল। তিনি বললেন, ‘‘আমি ক্লাব দলের অধিনায়কত্ব করেছি। স্কুল দলের নেতৃত্ব দিয়েছি। এটা আমার কাছে বিরাট এক সম্মান।’’ টেস্ট দলের অধিনায়ক চান্ডিমল থাকা সত্ত্বেও গত পাঁচ বছর ধরে কিছুই না করা তিনি ক্যাপ্টেন। এমন অদ্ভুত ব্যাপার কখনও কোনও দেশের ক্রিকেটে ঘটেছে কি না সন্দেহ। কাপুগেদারা যদিও দাবি করে গেলেন, দলের মধ্যে সব কিছু ঠিক আছে।
ভারতীয়দের তরফে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর। বলে গেলেন, পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়ে যাবে দল। ‘‘সিরিজ শুরুর আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, সকলকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুযোগ দিয়ে দেখে নেওয়া হবে। এবং, এই নীতি চলবে এখন,’’ বললেন শ্রীধর। এ দিন বাধ্যতামূলক প্র্যাকটিস ছিল না। এম এস ধোনি তবু এলেন এবং পুরোদস্তুর ব্যাটিং অনুশীলনও করলেন। ধনঞ্জয়ের বোলিং অ্যাকশন, বিশেষ করে তাঁর গুগলির ভিডিও দেখেও হোমওয়ার্ক করেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ম্যাচ জমাতে শ্রীলঙ্কার ভরসা সেই ধনঞ্জয়ের বিস্ময় স্পিনই।