সোমবার সকাল থেকে সেই ধোঁয়াশাতেই ঢাকা ছিল ফিরোজ শাহ কোটলার আকাশ। যদিও টেস্ট ম্যাচকে কেন্দ্র করে আগের দিনের মতো হইচই বা নাটক কোনওটাই হয়নি এ দিন।
তবে দুই শিবিরেই দিল্লির দূষণ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত ছিল। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দীনেশ চান্দিমলকে ড্রিঙ্কসের সময় একবার ‘ইনহেলার’ নিতেও দেখা গেল। ঘটনা হচ্ছে, ‘ইনহেলার’ ব্যবহার করতে হলে আইসিসি-র থেকে আগাম অনুমতি নিতে হয়। চান্দিমাল তা ব্যবহার করলেন মানে নিশ্চয়ই তাঁকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
দিনের খেলা শেষে শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন অধিনায়ক এবং এ দিন সেঞ্চুরি করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ বলে গেলেন, ‘‘কালকের মতোই অবস্থা ছিল আজও। হয়তো আরও খারাপ। আমি ঠিক নিশ্চিত নই। কিন্তু কী আর করা যাবে? এ ব্যাপারে তো আম্পায়াররা আর ম্যাচ রেফারি সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা তো ক্রিকেট খেলতে এসেছি।’’
ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে এসে মহম্মদ শামি স্বীকার করেন, দূষণের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার। ‘‘দূষণ নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবা দরকার। যে যে কারণে এগুলো হয়, সেগুলো রুখতে হবে আমাদের। তবে যতটা ওরা দেখাল, ততটাও খারাপ অবস্থাও বোধ হয় ছিল না।’’ তার পরেই অবশ্য যোগ করলেন, ‘‘এটাও হতে পারে যে, আমরা এই ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। অথবা আমাদের এই ধরনের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ওদের চেয়ে বেশি।’’ শামির অবশ্য ম্যাচে নামার আগে থেকেই ঠান্ডা লেগে শরীর খারাপ ছিল। তিনি নিজেই সে কথা জানিয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন: শেষ বেলায় বোলাররা ফেরালেন জয়ের আশা
ম্যাথিউজ আবার বলে গেলেন, দূষণ নিয়ে নিয়ম আনা উচিত আইসিসি-র। ‘‘এটা তো আইসিসি-র এ বার দেখাই উচিত। এর আগে তো এমন অবস্থার মধ্যে পড়িনি আমরা। ভবিষ্যতে আবার এ রকম পরিবেশের মধ্যে কী করা উচিত, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট নিয়ম থাকা উচিত।’’ দেখা যাচ্ছে দিল্লিতেই শুধু এমন সমস্যা হচ্ছে ক্রিকেট ম্যাচের ক্ষেত্রে। গত বছর আরও মারাত্মক দূষণের জন্য রঞ্জি ম্যাচ করা যায়নি। বাতিল করে দিতে হয়েছিল হাফ ম্যারাথনও। নভেম্বরের পর থেকে ফিরোজ শাহ কোটলায় কোনও ম্যাচ হবে কি না, তা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার একটা অংশ নাকি চাইছে না এই সময় আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিতে।
শহরের নামী ক্রীড়া চিকিৎসক ডা. রজত চৌহান এ দিন বলেন, ‘‘এই সময় দিল্লিতে ম্যাচ আয়োজন করাই উচিত নয় বোধহয়। শুধু খেলোয়াড়দের জন্য নয়, দর্শকদের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। বোর্ডের উচিত এ বার থেকে দিল্লিতে ম্যাচ দেওয়ার আগে ভাল করে খোঁজ খবর নিয়ে নেওয়া।’’ ডেভিড বুনের রিপোর্ট পাওয়ার পরে আইসিসি এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ করে কি না, সেটাই দেখার।
ভারতীয় বোর্ডও এই সময় দিল্লিতে ম্যাচ দেওয়ার ব্যাপারটা ভেবে দেখবে। বোর্ডের অস্থায়ী সচিব অমিতাভ চৌধুরি বলেছেন, ‘‘আমরা এই সময় দিল্লিতে ম্যাচ দেব কি না, তা নিয়ে ভেবে দেখব।’’ তিনি অবশ্য এটা জানাতে ভোলেননি যে, সূচি হওয়ার সময় শ্রীলঙ্কা বোর্ড থেকে দিল্লিতে ম্যাচ হওয়া নিয়ে কোনও আপত্তি জানানো হয়নি।
ধোঁয়াশা ছাড়াও এই টেস্টের আর এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রস্তুতি। ইডেনের সবুজ ঘাসের পিচে সম্ভব হলেও যার ছিটেফোঁটাও বিরাট কোহালিরা পাননি অন্য দুই কেন্দ্রে। মহম্মদ শামিও এ দিন বেশ উষ্মা প্রকাশ করে গেলেন, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রস্তুতির জন্য যে রকম উইকেট আমরা চেয়েছিলাম, সেটা আমরা শেষ দুটো টেস্টে পাইনি। তবে এই ধরনের উইকেট আমাদের অন্য ভাবে পরীক্ষা নিয়েছে। আমরা কত পরিশ্রম করতে পারি, লম্বা স্পেল করার জন্য কতটা ফিট, সেগুলো বোঝা যাচ্ছে। সবাই মিলে একশোর ওপর (১৩০) ওভার বল করেছি। এটাও এক ধরনের পরীক্ষা দেওয়া।’’ দেশের মাটিতে বেশি বল করার সুযোগ পেয়েও খুশি শামি। বললেন, ‘‘এখন তো দিনে ২৫-৩০ ওভার বল করার সুযোগ পাচ্ছি। আগে ১২-১৩ ওভারের বেশি পেতামই না। এটা এক দিক থেকে ভালই।’’
কোটলার উইকেটে রিভার্স সুইং পাননি, এই অভিযোগও রয়েছে তাঁর। ম্যাচের এখনও দু’দিন বাকি। তাই ম্যাচের ফলও হয়ে যাবে বলে আশাবাদী শামি।