sourav ganguly

ক্রিকেট-স্বাস্থ্য দেখতে গিয়ে নিজের শরীরের খেয়াল রাখেননি সৌরভ

সম্ভবত সময়াভাবে নিজের দিকেই সেভাবে খেয়াল রাখেননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অন্তত তেমনই মনে করছেন চিকিৎসক এবং তাঁর হিতৈষীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ১১:২২
Share:

হাসপাতাল সূত্রের বক্তব্য, লিপিড প্রোফাইলের মতো পরীক্ষাগুলি নিয়মিত করালে তিনি হয়ত হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া এড়াতেও পারতেন। ফাইল চিত্র।

দেশের ক্রিকেট এবং ক্রিকেট-প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে থেকে খুঁটিনাটি সবদিকে কড়া নজর তাঁর। কিন্তু নিজের শরীরের দিকেই সেভাবে খেয়াল রাখেননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সম্ভবত সময়াভাবেই পারেননি। অন্তত তেমনই মনে করছেন চিকিৎসক এবং তাঁর হিতৈষীরা। বস্তুত, সৌরভের মতো সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধারাবাহিক ভাবে পারফর্ম-করা খেলোয়াড়ের হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার পক্ষে ৪৮ বছর বয়সটা কমই। সেইজন্যই অপ্রত্যাশিত। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সৌরভকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বলেছেন, ‘‘এইটুকু বাচ্চা ছেলে! ওর কেন এ রকম হবে! আমি অভিষেক ডালমিয়াকে বলেছি, তোমরা বড় খেলার আগে ক্রিকেটারদের ঠিকঠাক স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাও।’’

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে যা ইঙ্গিত, তাতে এ কথা বলা অসমীচীন হবে না যে, এই প্রথম হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন না সৌরভ। আগেও একবার মৃদু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন তিনি। কিন্তু তখন বা তার পরেও সেটা বুঝতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, ইঞ্জেকশন ইত্যাদিকে শোয়েব আখতারের চেয়েও ভয় পাওয়ায় সৌরভ দীর্ঘদিন নিজের কোনও শারীরিক পরীক্ষাও করাননি। তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, শেষবার তাঁর খুঁটিনাটি শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল ২০০২-’০৩ সালে। যখন তিনি শেষবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আগের ঘটনাটি বুঝতে না পারার এটিও একটি বড় কারণ হয়ে থাকতে পারে। হাসপাতাল সূত্রের বক্তব্য, লিপিড প্রোফাইলের মতো পরীক্ষাগুলি নিয়মিত করালে তিনি হয়ত হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া এড়াতেও পারতেন।

এমনিতেই সৌরভের পরিবারে হৃদ্‌যন্ত্রের গোলমালের ইতিহাস রয়েছে। তাঁর বাবা চণ্ডী গঙ্গোপাধ্যায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েই প্রয়াত হয়েছিলেন। কমবয়সে তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, পারিবারিক সেই ইতিহাসের কারণেই সৌরভের আরও সতর্ক হওয়া এবং নিজের শরীরের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন ছিল। চিকিৎসকদের মতে, চল্লিশের ওপর বয়স হয়ে গেলেই শরীর সম্পর্কে বাড়তি সাবধানতা প্রয়োজন। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর রুটিন কিছু পরীক্ষা করানো উচিত। কিন্তু ৪৮ বছরের সৌরভ তেমনকিছু করাননি। অতিরিক্ত কাজের চাপে সম্ভবত সেই সময় তিনি বার করে উঠতে পারেননি। কিন্তু চিকিৎসকরা মনে করছেন, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিজের জন্য সৌরভের ওই সময়টা বার করে নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সাবধান এবং যত্নবান হওয়া উচিত ছিল। শহরের এক নামী হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের মতে, ‘‘নিয়মিত পরীক্ষা করালে শরীর সঙ্কেত দেবেই। আমরা অনেকেই আপাতদৃষ্টিতে ভাল থাকার কারণে সেই পরীক্ষাগুলোর তোয়াক্কা করি না। সেখানেই গোলমাল হয়ে যায়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: শ্বাসকষ্ট নেই, রাতে ঘুমিয়েছেন, আপাতত ভাল আছেন সৌরভ

হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিভিন্ন পরীক্ষায় সৌরভের লিপিড প্রোফাইলে যা ধরা পড়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। যদিও আপাতত একটি ধমনীতে স্টেন্ট বসানোয় তিনি বিপন্মুক্ত। সোমবার আরও দু’টি স্টেন্ট তাঁর শরীরে বসানো হবে কি না, তা নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড রবিবার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু হাসপাতালে আসার পর সৌরভকে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাঁর কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়তি। বাড়তির দিকে রয়েছে থাইরয়েডও।

আরও পড়ুন: সৌরভ: কী হয়েছিল, কেন হয়েছিল

তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা রয়েছে জানার পর সৌরভ খানিকটা হলেও মুষড়ে পড়েছেন বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য। কারণ, নিজেকে ফিট রাখার জন্য সৌরভ দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ মিনিট ট্রেডমিলে দৌড়োতেন। ফলে তাঁর হৃদ্‌রোগ হতে পারে, এটাই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা। তবে একই সঙ্গে তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, সৌরভের ‘ফিটনেস রেজিম’ ততটা বিজ্ঞানভিত্তিক ছিল না। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ট্রেডমিল ব্যবহার করলেও সৌরভ হার্ট মনিটর ব্যবহার করতেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ট্রেডমিল অথবা অন্য যে কোনও হৃদ্‌যন্ত্র সম্পর্কিত শারীরিক কসরত করার আগে বিশ্রামের সময় হৃদ্‌পিণ্ডের গতি এবং কতটা গতিতে তাকে নিয়ে যাওয়া উচিত, তার অঙ্ক কষতে হয়। তার পরে সেই অনুযায়ী পরিশ্রম শুরু করতে হয়। সৌরভ সেটা করেছিলেন কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।

দ্বিতীয়ত, সৌরভ ওয়েট ট্রেনিংয়ের অঙ্গ হিসাবে বেঞ্চ প্রেস করতেন বলে খবর। বেঞ্চ প্রেস হৃদ্‌যন্ত্রে চাপ দেয়। সেই বিষয়ে সৌরভ ওয়াকিবহাল ছিলেন কি না, তা-ও জানা যাচ্ছে না। বস্তুত, যে কোনও শারীরিক কসরতই, এমনকি যোগাভ্যাসও বৈজ্ঞানিক ভাবে করা নিয়ম। যেমন শলভাসন হৃদ্‌যন্ত্রের উফর চাপ তৈরি করতে পারে বলে যোগীরা অর্ধ শলভাসন করার পরামর্শ দেন। সৌরভ একটা সময়ে নিয়মিত বিশ্বক্রিকেট শাসন করেছেন। ফলে তাঁকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফিটনেস পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিজ্ঞানভিত্তিক শারীরিক কসরত করারই কথা।

তবে স্বস্তির বিষয়, সৌরভের শারীরিক অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল। তাঁর করোনা রিপোর্টও নেগেটিভ এসেছে। রক্তচাপ এবং নাড়ির গতিও স্বাভাবিক। কয়েকদিন হাসপাতালে থেকে তিনি বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন। তার পর আরও কয়েক সপ্তাহ তাঁকে বিশ্রামে থাকতে হবে। চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের আশা, তার পর নিজের শরীর নিয়ে সতর্ক হবেন সৌরভ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement