আন্তর্জাতিক যোগে খড়্গপুরের সোয়েল

প্রাথমিক ভাবে শারীরিক অসুস্থতার কারণেই যোগের প্রশিক্ষণ শুরু করে সোয়েল। তার মা তুহিনা বেগম জানান, ছোটবেলায় খাওয়ার ব্যাপারে অরুচি ছিল সোয়েলের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১২
Share:

নায়ক: পুরস্কার হাতে সোয়েল। —নিজস্ব চিত্র।

আন্তর্জাতিকস্তরের যোগ প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পেল খড়্গপুরের ছেলে সোয়েল আহমেদ গাজি। ২৫ থেকে ২৮ অক্টোবর ‘উত্তর প্রদেশ যোগ অ্যাসোসিয়েশন’-এর আয়োজনে ৪২তম ‘ন্যাশনাল যোগ স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৭-’১৮’ আয়োজিত হয় গাজিয়াবাদে। জাতীয় প্রতিযোগিতায় দু’টি বিভাগে প্রথম হয়ে আন্তর্জাতিকস্তরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে খড়্গপুর সিলভার জুবিলি হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সোয়েল।

Advertisement

প্রাথমিক ভাবে শারীরিক অসুস্থতার কারণেই যোগের প্রশিক্ষণ শুরু করে সোয়েল। তার মা তুহিনা বেগম জানান, ছোটবেলায় খাওয়ার ব্যাপারে অরুচি ছিল সোয়েলের। সে কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে সাত বছর বয়সে যোগে ভর্তি করা হয় সে। ‘খড়্গপুর যোগ অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব’-এর প্রশিক্ষক নিমাই দাসের কাছে যোগে হাতেখড়ি সোয়েলের। নিমাইবাবুর মৃত্যুর পর কৌশল্যা এলাকার ‘প্যালেস্ট্রা’ নামে এক সংস্থায় জাতীয় কোচ রণজিৎ দাস চৌধুরীর কাছে যোগ এবং জিমন্যাস্টিক্স শিক্ষার শুরু। সোয়েলের বাবা কামালউদ্দিন গাজি রেল পুলিশের ডগ স্কোয়াডে চাকরি করেন। তিনি রেলের হয়ে ফুটবল খেলতেন। ছোটবেলায় নাচের সঙ্গে জিমন্যাস্টিক্স করতেন তুহিনা বেগম। বাবা-মায়ের ইচ্ছেতেই ৮ বছর বয়স থেকে জেলা ও রাজ্য যোগ প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে শুরু করে সোয়েল। বিধাননগরে এক প্রতিযোগিতায় সোয়েলের যোগ দেখে খুব ভাল লাগে হুগলির কোন্ননগরের জাতীয় যোগ কোচ শ্যামল দত্তের। সোয়েলের বাবা-মায়ের অনুরোধে মাসে দু’দিন করে খড়্গপুরে সোয়েলের বাড়িতে প্রশিক্ষণ দিতে আসেন শ্যামলবাবু। এ ভাবেই কয়েক বছর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ২০১৬’য় প্রথম বার জাতীয়স্তরে যাওয়ার সুযোগ পায় সে। রাঁচিতে জাতীয় যোগ প্রতিযোগিতায় চতুর্থ হয়ে সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার সুযোগও তৈরি হয়। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

এবছর রাজ্য যোগ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে জাতীয়স্তরে প্রতিযোগিতায় যায় সোয়েল। ‘আর্টিস্টিক যোগ’-এ ৮ থেকে ১৭ বছরের বিভাগে প্রথম হয়। আড়াই মিনিট সময়ের মধ্যে গান ও কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে নিজের পছন্দের ১০টি আসন করে দেখাতে হয়। সেখানে ‘গ্রুপ যোগ’-এও যোগ দেয় সোয়েল। ছ’জন প্রতিযোগীকে নিয়ে তৈরি হয় একটি গ্রুপ। তাদেরতে নির্ধারিত ১০টি আসন করে দেখাতে হয়েছে। বিচারকদের মতে প্রথম হয় সোয়েলের গ্রুপ। জাতীয়স্তরে দু’টি বিভাগে প্রথম হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার সুযোগ মিলেছে। ‘যোগ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’ এবং ‘এশিয়ান যোগ ফেডারেশন’-এর আয়োজনে ২১ থেকে ২৪ নভেম্বর কর্নাটকে আয়োজিত হবে ‘ইন্টারন্যাশানাল যোগ ফেস্টিভ্যাল ২০১৭’।

Advertisement

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে খুশি সোয়েল। তার কথায়, “প্রথম বার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগ দেব। নানা দেশ থেকে প্রতিযোগীরা যোগ দেবে। একটু ভয়ও করছে।” সোয়েলের বাবা-মাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রশিক্ষক রণজিৎবাবু। তিনি বলেন, “বাবা-মা যত্নেই সোয়েলের প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে। আশা করি, আন্তর্জাতিক স্তরে ভাল ফল করবে ছেলে।” কামালউদ্দিন গাজি বলেন, “প্রশিক্ষকদের চেষ্টাতেইএত দূর পৌঁছেছে সোয়েল।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement