উচ্ছ্বাস: চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নিয়ে স্লোয়ান স্টিফেন্স। ছবি: এএফপি।
চ্যাম্পিয়নের চেকটা হাতে নিয়ে যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। অঙ্কটা দেখে চোখ প্রায় কপালে উঠে গেল স্লোয়ান স্টিফেন্স-এর। যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের নতুন চ্যাম্পিয়নের। শনিবার ভারতীয় সময় গভীর রাতে সতীর্থ ম্যাডিসন কিইজ-কে ৬-৩, ৬-০ হারিয়ে যিনি হইচই ফেলে দিয়েছেন।
তবে টেনিস সার্কিটের নয়া তারকার বিধ্বংসী টেনিসের থেকেও বেশি করে উঠে আসছে তাঁর সারল্যটাই। এ রকম মোটা অঙ্কের চেক পাওয়ার কথা শুনে যিনি বিস্ময়ে পাশে দাঁড়ানো বন্ধু ম্যাডিসনকে প্রায় জড়িয়েই ধরেছিলেন আনন্দে। সাংবাদিক বৈঠকে এক সংবাদিক এই খেতাব তাঁকে আরও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে উৎসাহ দেবে কি না প্রশ্ন করতেই স্লোয়ান বলে দেন, ‘‘নিশ্চয়ই। যে চেকটা ওই ভদ্রমহিলা আমার হাতে তুলে দিলেন সেটা দেখেছেন? এটা যদি টেনিস খেলতে উৎসাহ না দেয় তা হলে কি দেবে জানি না।’’
আসলে দশ বছরের কেরিয়ারে স্লোয়ান সব মিলিয়ে এত দিন জিতেছিলেন ৪.৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৯ কোটি টাকা)। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জিতেই তিনি পেয়েছেন ৩.৭ মিলিয়ন ডলার (প্রায় চব্বিশ কোটি টাকা)। তাই গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পরে তাঁর বিস্মিত হওয়াটা আশ্চর্যের নয়।
আশ্চর্য হয়ে গিয়ে গিয়েছে টেনিস বিশ্বও। ২৪ বছর বয়সি স্লোয়ান-এর অবিশ্বাস্য উত্থান দেখে। ছ’সপ্তাহ আগেও স্লোয়ানের বিশ্ব র্যাঙ্কিং ছিল ৯৫৭। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে তিনি যখন নামেন, তাঁর বিশ্ব র্যাঙ্কিং দাঁড়ায় ৮৩। বাঁ-পায়ে চোটের জন্য ১১ মাস কোর্টের বাইরে ছিলেন স্লোয়ান। তাই র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে গিয়েছিলেন। চোট সারিয়ে ফেরেন এ বছর উইম্বলডনে। ‘‘জানুয়ারিতে আমার পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তখন যদি কেউ আমায় বলত যে আমি যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জিতব, তা হলে জবাবে আমি বলতাম, ‘অসম্ভব’,’’ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন স্লোয়ান।
অসম্ভব মনে হবে স্লোয়ানের গড়া রেকর্ড দেখলেও। প্রায় ১৫ বছর পরে উইলিয়ামস বোনরা ছাড়া অন্য কোনও মার্কিন খেলোয়ার হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার নজির গড়লেন স্লোয়ান। তার উপরে ফাইনালে তাঁর ৬-০ সেট জেতার নজির তো আছেই। যা এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের মেয়েদের সিঙ্গলসের ফাইনালে ১৯৭৬-এর পরে আর দেখা যায়নি। ঠিক কতটা বিধ্বংসী ছিলেন স্লোয়ান সেটা ফাইনালে তাঁর পরিসংখ্যান দেখলে আরও স্পষ্ট হবে। ৬১ মিনিটের লড়াইয়ে মাত্র ছ’টি আনফোর্সড এরর করেছেন তিনি। যেটা শুনতেই স্লোয়ান মজা করে বলে ওঠেন, ‘‘তাই নাকি! এ রকম দুরন্ত ব্যাপার আমার সঙ্গে কখনও হয়নি। সত্যি মনে রাখার মতো একটা পরিসংখ্যান বটে। আপনারা ছবি তুলে রাখুন আমার।’’
সাঁতারু মা আর আমেরিকান ফুটবলার বাবার মেয়ে স্লোয়ান বন্ধুর জন্যও খুব খুশি। যাঁর বয়ফ্রেন্ড আবার মেজর লিগ সকার ফুটবল তারকা জোজি আলটিজোর। এ ভাবে ম্যাডিসন কিইজ-কে উড়িয়ে দেওয়ার পরে তাঁর বন্ধুর জন্য খারাপ লাগছে কি না প্রশ্ন করতেই তাই তাঁর চটপট উত্তর, ‘‘খারাপ লাগবে কেন ওর জন্য? ম্যাডিসনও তো ফাইনালে উঠেছিল। আর ও যে চেকটা পাচ্ছে সেটা দেখেছেন? আমি নিশ্চিত ও খুব একটা দুঃখ পাবে না।’’