পরাস্ত: এশীয় মঞ্চে পদকের স্বপ্ন অপূর্ণই রইল সিন্ধু ও সাইনার। ফাইল চিত্র
ব্যাডমিন্টনের অন্যতম সেরা প্রতিযোগিতা অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের ১৮ বছরের খরা কাটানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ভারতের দুই সেরা তারকা পি ভি সিন্ধু ও সাইনা নেহওয়ালের। বুধবার সেই লক্ষ্য নিয়েই এই প্রতিযোগিতায় নামছেন তাঁরা।
আঠারো বছর আগে ২০০১-এ সাইনা ও সিন্ধুর গুরু পুল্লেলা গোপীচন্দ যে এই ঐতিহ্যবাহী খেতাব জিতেছিলেন, সেই শেষ। তার পরে আর কোনও ভারতীয় খেলোয়াড় সফল হতে পারেননি ব্যাডমিন্টনের মক্কায়। যাকে অনেকে আবার ব্যাডমিন্টনের উইম্বলডন বলেন।
র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে সারা বিশ্বের সেরা ৩২ খেলোয়াড়ই শুধু প্রতি বছর এই প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ পান। তাই এখানে ছেলে ও মেয়েদের বিভাগে যাঁরা খেতাব জেতেন, তাঁদেরই কার্যত বিশ্বসেরা বলে মনে করা হয়। মেয়েদের সেরা ৩২-এ এ বার যেমন আছেন সাইনা ও সিন্ধু, তেমনই ছেলেদের বিভাগে ভারতের প্রতিনিধি কিদম্বি শ্রীকান্ত ও সমীর বর্মা, বি সাই প্রণীত ও এইচ এস প্রণয়।
অলিম্পিক্স ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোজয়ী সিন্ধু এ বারের অভিযান শুরু করবেন বিশ্বের প্রাক্তন দু’নম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার সুং জি হিউনের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে লন্ডন অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী সাইনা স্কটল্যান্ডের ক্রিস্টি গিলমোরের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে শুরু করবেন। পঞ্চম বাছাই সিন্ধু যেখানে তাঁর প্রথম রাউন্ডের প্রতিপক্ষের চেয়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে ৮-৬-এ এগিয়ে, সেখানে সাইনা গিলমোরের চেয়ে ৬-০ এগিয়ে।
গত বছর সিন্ধুর সঙ্গে তিনবার দেখা হয়েছিল সুং জি-র। তার মধ্যে দু’বার হারেন ভারতীয় তারকা। এ বার তিনি জিততে পারলে দ্বিতীয় রাউন্ডে হয়তো তাঁর সঙ্গে দেখা হবে রাশিয়ার এভগেনিয়া কসেতস্কায়া অথবা চিউং নগান ই-র সঙ্গে। এই বাধা পেরোলে কোয়ার্টার ফাইনালে সিন্ধুর মুখোমুখি হতে পারেন তৃতীয় বাছাই চিনা তারকা চেন ইউফে। তাঁর সঙ্গে সাত বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে সিন্ধু ৪-৩ এগিয়ে থাকলেও ২০১৮-র চিনা ওপেনের হারের স্মৃতি সিন্ধুর কাঁটা হয়ে উঠতে পারে।
গত বারের সেমিফাইনালিস্ট তাই বলেছেন, ‘‘প্রতিটি রাউন্ডই যথেষ্ট কঠিন হবে মনে হচ্ছে। প্রতিটা পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে পরের ম্যাচগুলোর কথা ভাবছি না। প্রথম রাউন্ডে সুং জি-র বিরুদ্ধে খেলতে হবে। এখন শুধু ওই ম্যাচটা নিয়েই ভাবছি।’’ গত মরসুমে যে রকম দুরন্ত ফর্মে ছিলেন সিন্ধু, প্রতিটি বড় প্রতিযোগিতায় রুপো জেতেন, তার পরে এ বার তাঁকে নিয়ে আশায় আছেন অনেকেই।
প্রাক্তন বিশ্বসেরা সাইনাকে ২০১৫-য় খেতাবের দোরগোড়ায় গিয়েও রানার্সের পদক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এই বছরটা সাইনা শুরু করেছেন যথেষ্ট ইতিবাচক ভাবে। জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়া মাস্টার্সে চ্যাম্পিয়ন হন ও জাতীয় ব্যাডমিন্টনে সিন্ধুকে পিছনে ফেলে সেরার শিরোপা জিতে নেন সাইনা।
অষ্টম বাছাই এই ভারতীয় তারকা প্রথম রাউন্ডের বাধা পেরোতে পারলে দ্বিতীয় রাউন্ডে তাঁর সঙ্গে দেখা হতে পারে ডেনমার্কের লাইনে হয়মার্ক জার্সফেল্ট অথবা চিনের কাই ইয়ানইয়ানের। ডেনমার্কের খেলোয়াড়টির সঙ্গে মুখোমুখিতে সাইনা এগিয়ে থাকলেও চিনা তরুণীর বিরুদ্ধে কখনও খেলেননি তিনি। প্রথম দু’রাউন্ডের ম্যাচ জিতলে সাইনার সামনে পড়তে পারেন তাঁর বড় গাঁট হিসেবে পরিচিত বিশ্বের এক নম্বর তাই জু ইং। যিনি টানা ১২ বার হারিয়েছেন ২৯ বছর বয়সি ভারতীয়কে। চিনা তাইপের এই তারকা সাইনার সঙ্গে মুখোমুখিতে ১৪-৫-এ এগিয়ে রয়েছেন।
ভারতের প্রধান কোচ গোপীচন্দ সাইনা, সিন্ধুদের উপর অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। ‘‘সাইনা, সিন্ধুর মতো শ্রীকান্তও যথেষ্ট ভাল ফর্মে আছে। আমার মনে হয় এ বার অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপে আমাদের এই ছেলেমেয়েরা ভাল কিছু করে দেখাবে,’’ বলেছেন গোপী। মেয়েদের বিভাগে তিন বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ক্যারোলিনা মারিন ডান হাঁটুর চোট সারিয়ে বার্মিংহামের কোর্টে ফিরছেন। ভারতীয় তারকাদের পাশাপাশি তাই মারিনের দিকেও নজর থাকবে দেশের ব্যাডমিন্টন প্রেমীদের।