ব্যাডমিন্টন ছিল তাঁর প্রথম ভালবাসা। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় উপায় থাকে না। যে কারণে ছোট থেকেই ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। কিন্তু প্রথম ভালবাসা কে কি দূরে সরিয়ে রাখা যায়!
শ্রীকান্তও পারেননি। তাই মাস গেলে মোটা মাইনের নিশ্চিত উপার্জন ছেড়ে ৩২ বছর বয়সে র্যাকেট হাতে তুলে নিয়েছিলেন শুধুমাত্র স্বপ্ন পূরণের জন্য।
একসময় উপযুক্ত অভিভাবক বা মেন্টর-এর অভাবে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হতে পারেননি শ্রীকান্ত। তাই স্বপ্ন দেখেছিলেন যোগ্য কোচ হয়ে উঠবেন। বিনা পয়সায় কোচিং করিয়ে গরিব ঘর থেকে মুক্ত তুলে আনবেন বিশ্বের দরবারে।
তিনি শ্রীকান্ত ভাদ। ভারতের প্রথম ব্যাডমিন্টন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন (বিডব্লিউএফ) সার্টিফিকেট-প্রাপ্ত কোচ। বহু খেলোয়াড়ের ভাগ্য বদলেছেন তিনি। ঠানের বাসিন্দা তিনি।
তাঁকে নিয়ে একটি বায়োপিক বানানোর কথাবার্তাও চলছে। যা পরিচালনা করবেন আমোলে গুপ্ত। পরিণীতি চোপড়া অভিনীত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সাইনার বায়োপিকের পরিচালকও তিনিই। পরিণীতিকে পর্দার সাইনাতে পরিণত করতে নিরন্তর পরিশ্রম করেছেন এই শ্রীকান্তই।
পড়াশোনা সম্পূর্ণ করার পর একটি ফার্মাসুটিক্যাল সংস্থায় কাজ পান তিনি। মোটা মাইনের এই চাকরিতে সংসার তো হেসেখেলে চলে যেত, কিন্তু মন ভাল ছিল না তাঁর। সব সময়ই পেশাগত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার কথা ভাবতেন।
চাকরি ছেড়ে ৩২ বছর বয়সে সেটাই হয়েছিলেন তিনি। তার আগে অবশ্য টুকটাক খেলতেন। ১৯৮৮ সালে তাঁর সামনে দরজা খুলে যায়।
ঠানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন দাদোজি কন্দাদেভ স্টেডিয়াম গড়ে উঠছিল তখন। সেখানে ব্যাডমিন্টন কোচ হওয়ার জন্য আবেদন জানান তিনি। কিন্তু তার জন্য তাঁর কাছে শংসাপত্র চান স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ।
তখন তিনি ওই ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পাতিয়ালার ব্যাডমিন্টনে কোচ হওয়ার একটি কোর্স-এ ভর্তি হন। সে সময়ে জেলা এবং রাজ্যস্তরের ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেও শুরু করেন।
কোর্স সম্পূর্ণ করে শংসাপত্র হাতে নিয়ে ওই স্টেডিয়ামে ব্যাডমিন্টন শেখাতে শুরু করেন তিনি। ১৯৯২ সালে তাঁর প্রথম ব্যাচ-এর কিছু ছাত্র জাতীয় স্তরে খেলার সুযোগ পান। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
দারিদ্র যাতে প্রতিভার অন্তরায় না হয়, তার জন্য গরিব ঘর থেকে খুঁজে খুঁজে খেলোয়াড় তুলে আনতেন তিনি। তাঁদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিতেন। এমনকী এমন অনেক ছাত্র রয়েছে, যাঁরা বছরের পর বছর তাঁর বাড়িতেই থেকেছেন।
যেমন অক্ষয় দেওলকর। জাতীয় স্তরের এই বিজেতা ১০ বছর গুরুর বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছেলেমেয়েদেরও তিনি প্রশিক্ষণ দেন। গিরীশ শর্মা এবং আরতি পাল নামে তাঁর দুই শিক্ষার্থী প্যারালিম্পিকে খেলেছেন।
জীবনে বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০১১ সালে পেয়েছিলেন ‘সমাজ শক্তি পুরস্কার’, ২০০৩ সালে পেয়েছিলেন ‘দাদাজি কোন্ডাদেভ পুরস্কার’।
ঠানেতে তাঁর ইনস্টিটিউটে এক সময় সাইনাও খেলেছেন। ব্যাডমিন্টনে সাইনার খিদে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন তিনি। এর আগে আর কোনও শিক্ষার্থীর মধ্যে এত খিদে তিনি দেখেননি। সাইনার বায়োপিকে তাই পরিণীতিকে উপযুক্ত করে তুলতে তাঁরই সাহায্য নিয়েছেন পরিচালক।