India

এ বার কাঁধে চোট, নিউজ়িল্যান্ড সফর অনিশ্চিত শিখরের

নিউজ়িল্যান্ড সফরের জন্য আজ, সোমবার রাতে বেঙ্গালুরু থেকেই রওনা দিচ্ছে ভারতীয় দল।

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৯
Share:

উদ্বেগ: কাঁধে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন ধওয়ন। পিটিআই

শিখর ধওয়নের খারাপ সময় যেন শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না। ফের চোটের ধাক্কায় দল থেকে ছিটকে যাওয়ার মুখে তিনি। বেঙ্গালুরুতে বাঁ কাঁধে চোট পেয়ে ব্যাট করা তো দূরে থাক, নিউজ়িল্যান্ড সফরেও প্রবল ভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন তিনি। অনিশ্চিত কেন, বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, তিনি যেতে পারবেন না।

Advertisement

নিউজ়িল্যান্ড সফরের জন্য আজ, সোমবার রাতে বেঙ্গালুরু থেকেই রওনা দিচ্ছে ভারতীয় দল। ধওয়নেরও যাওয়ার কথা ছিল এই উড়ানেই। তিনি ভারতের টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে দলে রয়েছেন। প্রথমে টি-টোয়েন্টি হবে, তার পরে ওয়ান ডে। যা পরিস্থিতি, টি-টোয়েন্টি সিরিজে অন্তত ধওয়নের পক্ষে খেলা কঠিন। ওয়ান ডে-তেও পারবেন কি না, নিশ্চয়তা নেই। তাঁর জায়গায় পরিবর্ত ওপেনার বেছে নিয়ে দু’এক দিনের মধ্যে নিউজ়িল্যান্ড পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

রবিবার বেঙ্গালুরুতে সিরিজ ফয়সালার ম্যাচে অস্ট্রেলীয় ইনিংস চলার সময় পঞ্চম ওভারেই ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ধরতে গিয়ে কাঁধে চোট পান ধওয়ন। কভার পয়েন্টে অ্যারন ফিঞ্চের ড্রাইভ ধরতে গিয়ে বাঁ কাঁধের উপরে পড়েন তিনি। তখনই তাঁর চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বেশ গুরুতর চোট পেয়েছেন। ফিজিয়ো নীতিন পটেল ছুটে আসেন। অধিনায়ক কোহালিকেও বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। ফিজিয়ো তখনই বাইরে নিয়ে চলে যান ধওয়নকে।

Advertisement

জানা যায়, সঙ্গে-সঙ্গেই তাঁকে হাসপাতালে এক্স-রে করতে নিয়ে যাওয়া হয়। ধওয়ন আর ফিল্ডিং করেননি, দীর্ঘক্ষণ তাঁর ব্যাপারে কোনও খোঁজও পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে যখন তিনি ড্রেসিংরুমে ফেরেন, টিভি-তে দেখা যায়, স্লিং ঝোলানো রয়েছে। ধওয়নকে ব্যাট করতে নামানো যায়নি। রাজকোটে পাঁচ নম্বরে নেমে ৫২ বলে ৮০ করা কে এল রাহুলকে ওপেন করতে পাঠানো হয় রোহিত শর্মার সঙ্গে। রাজকোটের সেই ম্যাচেও চোট পেয়েছিলেন ধওয়ন। পাঁজরে এসে লাগে প্যাট কামিন্সের বল। চোট নিয়েই ব্যাট করে যান তিনি। এই নিয়ে গত কয়েক মাসে তৃতীয় বার চোটের কারণে ছিটকে যাচ্ছেন তিনি। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেও আঙুলের হাড়ে চিড় ধরায় বাকি টুর্নামেন্টের বাইরে চলে যান। তার পর গত নভেম্বরে বাঁ হাঁটুতে অনেকটা কেটে গিয়ে সেলাই পড়ে। তার ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যেতে পারেননি।

দলে তাঁর জায়গা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়ে পড়েছিল কারণ কে এল রাহুল ভাল খেলে দিয়েছিলেন। রোহিত-রাহুল জুটি ভাঙার পক্ষপাতী ছিলেন না অনেকে। কিন্তু ধওয়নকে সুযোগ দিতে গিয়ে সেই জুটি ভাঙতেই হয়। মুম্বইয়ে রাহুলকে তিন নম্বর জায়গা ছেড়ে দিয়ে স্বয়ং কোহালি ব্যাট করেন চারে। ভারত সেই ম্যাচ হারায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে। রাজকোটে কোহালি ফের তিন নম্বরে নামেন। পাঁচ নম্বরে নেমে ভাল খেলে দেওয়ায় রাহুলকে ওখানেই ব্যাট করানো হবে ঠিক করে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু ধওয়ন চোট পেয়ে যাওয়ায় ফের হয়তো রাহুলকে ওপেনার হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

তবে বেঙ্গালুরুতে সিরিজ জিতে উঠে কোহালি বলে গিয়েছেন, আপাতত রাহুলকে তাঁরা উইকেটকিপার হিসেবেও ব্যবহার করতে চান। তাঁর কিপিং নিয়ে সকলেই খুশি। তাই ঋষভ পন্থের জন্যও আগামী দিনে খুব ভাল খবর অপেক্ষা করে নেই। পন্থ এ দিন চিন্নাস্বামীতে দলের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করেন। তাঁকে বেশি করে কিপিং প্র্যাক্টিস করতেই দেখা যাচ্ছিল। যদিও এখনই দস্তানা ফেরত পাওয়া কঠিন দেখাচ্ছে। আর রাহুল যদি কিপিং করেন, তা হলে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি জায়গা পাবেন কি না, সন্দেহ। বিশেষ করে ব্যাট হাতে যখন কিছুই করে উঠতে পারছেন না পন্থ। কোহালি ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলেছেন, ‘‘রাহুলকে কিপিং করানো হলে আমরা এক জন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলাতে পারছি।’’ বলার মধ্যে পরিষ্কার, অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান বলতে মণীশ পাণ্ডের মতো কাউকে বোঝাচ্ছেন। কেদার যাদবও বাইরে বসে আছেন। তাঁকেও সুযোগ দেওয়া হতে পারে।

ম্যাচের পরে দু’পক্ষের করমর্দনের সময় আবার একটা আকর্ষণীয় দৃশ্য দেখা গেল। প্যাট কামিন্স এসে আদরের ভঙ্গিতে পন্থের মাথার চুল নাড়িয়ে দিলেন। মাথা নেড়ে তাঁকে পন্থ বোধ হয় বললেনও, এখন ঠিক আছেন। তেমনই শিখরকে ‘স্লিং’ নিয়ে আসতে দেখে অস্ট্রেলীয়রা অনেকে জিজ্ঞেস করতে থাকলেন। ধওয়ন যতটা সম্ভব হাসি মুখ রাখার চেষ্টা করে গেলেন। কিন্তু যে ভাবে ‘স্লিং’ ঝুলিয়ে ঘুরতে দেখা গেল তাঁকে, সোমবার ভোর রাতে কেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিউজ়িল্যান্ডের উড়ান ধরলে, সেরা চমক হবে।

ধওয়নের সম্ভাব্য পরিবর্ত হিসেবে প্রাথমিক ভাবে দু’টো নাম ভাসছে। পৃথ্বী শ এবং সঞ্জু স্যামসন। দু’জনেই নিউজ়িল্যান্ডে আছেন। তাই আলাদা করে আর পাঠাতে হচ্ছে না। শুভমন গিলের নামও ভাবা হতেই পারে। তিনিও যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিমান এবং ইতিমধ্যেই ভারতীয় দলে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচকদের একাংশ আবার ওয়ান ডে-তে অজিঙ্ক রাহানেকে ফেরানোর চেষ্টা করছেন। রাহানে দু’বছর ধরে কোনও ওয়ান ডে খেলেননি, কোনও সাদা বলের টুর্নামেন্টে ভাল করেছেন বলেও শোনা যায়নি। টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে রাহানেকে ফেরানোর সমর্থক খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ দিন শ্রেয়স আইয়ার দারুণ খেলে দেওয়ার পরে চার নম্বরে অন্য কারও নাম নিয়ে আলোচনা হওয়ার রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত। আরও কথা উঠছে, নতুন কাউকে নিতে হলে সামনের দিকে তাকিয়ে তরুণ কোনও ব্যাটসম্যানের কথা ভাবা উচিত। যাঁকে ২০২৩ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা যাবে। ভারতীয় ক্রিকেটে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় চমক সত্যিই শেষ হতে চায় না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement