১০০ মিটারের সব পদক জয়ের পর জামাইকার থম্পসন, শেলি, শেরিকা। ছবি: টুইটার।
অ্যাথলেটিক্সের সেরা ইভেন্ট ১০০ মিটার দৌড়। কে হবেন বিশ্বের দ্রুততম বা দ্রুততমা তা নিয়ে আকর্ষণ থাকে তুঙ্গে। গত কয়েক বছর ধরেই অ্যাথলেটিক্সের এই ইভেন্টে মূল লড়াই আমেরিকা এবং জামাইকার। অন্যথা হল না ওরেগনে আয়োজিত বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপেও।
পুরুষদের ১০০ মিটারের তিনটি পদকই ঘরে তুলেছে আমেরিকা। পরের দিনেই মহিলাদের ১০০ মিটারের তিনটি পদক জিতে নিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশটি। প্রথম বার এই কৃতিত্ব দেখাল জামাইকা। উসেইন বোল্ট, আসাফা পাওয়েলদের দাপটে কয়েকটা বছর ১০০ মিটারের ট্র্যাকে তেমন সুবিধা করতে পারেনি আমেরিকা। পুরুষদের ইভেন্টে ছবি বদলেছে। কিন্তু জামাইকার শেলি অ্যান ফ্রেজার প্রাইস, শেরিকা জ্যাকসন, থম্পসন হেরাদের গতিতে এ বারও শীর্ষেই থাকল জামাইকা। বিশ্বের প্রথম তিন দ্রুততমাই জামাইকার। এক সন্তানের মা ৩৫ বছরের শেলি সোনা জিতলেন ১০.৬৭ সেকেন্ড সময় করে। দ্বিতীয় শেরিকার সময় নিলেন ১০.৭৩ সেকেন্ড। আর থম্পসন ১০০ মিটার দৌড় ১০.৮১ সেকেন্ডে শেষ করে ব্রোঞ্জ জিতলেন।
২০০৮ সাল থেকেই শেলি বিশ্বের অন্যতম দ্রুততমা। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে শেলি সোনা জিততে পারেননি। রুপো জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সোনা জিতেছিলেন থম্পসন। ব্রোঞ্জ পান শেরিকা। এক বছর পরেও মহিলাদের ১০০ মিটারের পদকজয়ীরা একই থাকলেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শিপে শুধু বদলে গেল তাঁদের পদকের রং। ফাইনালে জামাইকার প্রতিযোগী ছিলেন তিন জন। সকলেই পদক জিতেছেন।
বেজিং এবং লন্ডনে ১০০ মিটারে সোনা জয়ী শেলি টোকিয়ো অলিম্পিক্সের সোনা না পেয়ে হতাশ ছিলেন। তখনই ঠিক করেন নেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পঞ্চম সোনা তাঁর চাই-ই। সেই স্বপ্নপূরণের পর তিনি বলেছেন, ‘‘অলিম্পিক্সের পর বাড়ি ফিরে শুধু পরিশ্রম করেছি। কঠোর পরিশ্রম করে এখানে এসেছি। তারই ফল পেলাম। সব সময় পরিশ্রমে বিশ্বাস করি। প্রতিযোগিতাগুলোয় দেখাতে চাই ঠিক কতটা পরিশ্রম করে এসেছি। কখনও ক্লান্ত হয়নি। বরং আরও বেশি পরিশ্রম করতে চাই।’’ বিশ্ব পর্যায়ের সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০টি সোনার পদক থাকার পরেও হাল ছাড়েননি ৩৪ বছরের শেলি। সেই হাল না ছাড়া কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার পেলেন ওরেগনে। ২০০৯, ২০১৩, ২০১৫, ২০১৯ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পর ২০২২। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটারে বোল্টের সোনা রয়েছে তিনটি। শেলির এখনই পাঁচটি।
২০১৯ সালে সোনা জিতে শেলি বলেছিলেন, ‘‘মাতৃত্বের জয়।’’ এ বার বলেছেন, ‘‘আমার এই সাফল্যের রহস্য হল, আমি এক জন প্রতিযোগী। প্রতিযোগিতায় নামতে ভালবাসি। বিশ্বাস করি ঈশ্বর আমাকে এই উপহার দিয়েছেন।’’ আরও বলেছেন, ‘’৩৫ বছর বয়সেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিততে পারলাম। তাই এই জয়টা একটু আলাদা আমার কাছে। অনেকেই আমার বয়স নিয়ে কথা বলছিলেন। অনেকে বলছিলেন, সন্তান হওয়ার পর আর পারব না। কিন্তু এসব তো জীবনেরই অঙ্গ। জীবন এ ভাবেই এগোচ্ছে। এ সব নিয়ে ভাবি না। কারণ এগুলো আমার মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। নিজের অতীত সাফল্যই যথেষ্ট আমাকে ইতিবাচক রাখার জন্য।’’
পঞ্চম বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও থামার কথা ভাবছেন না শেলি। জামাইকান বলেছেন, ‘‘আমি তো বেশ দ্রুতই দৌড়তে পারছি। বিশ্বাস করি আরও দ্রুত দৌড়তে পারি আমি। যতদিন এ ভাবে দৌড়তে পারব, তত দিন থামার কথা ভাবব না। নিজের উপর, কোচের উপর এবং নিজের দক্ষতার উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়েছি। মনে হয় আরও কিছুটা পথ দৌড়তে পারব।’’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে মহিলাদের ১০০ মিটারের প্রথম বার তিনটি পদকই জামাইকা জেতায় খুশি শেলি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি সবার আগে শেষ করেছি। আমার পিছনে যারা ছিল, ওরাও আমার দেশেরই। আমাদের মধ্যে সব সময়ই এমন তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। স্বামী, সন্তান গ্যালারিতেই ছিল। ওদের সামনে এই সাফল্য অন্যরকম অনুভূতির।’’