ভাঙন: ওয়ার্ন-সচিন মধুচন্দ্রিমা টিকল না বেশি দিন। ফাইল চিত্র
ক্রিকেট মাঠে তাঁদের দ্বৈরথ প্রায় ক্রিকেটীয় রূপকথার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল এক সময়— সচিন তেন্ডুলকর বনাম শেন ওয়ার্ন। কিন্তু মাঠের বাইরে তাঁদের সম্পর্কে কখনও চিড় ধরেছিল বলে শোনা যায়নি। কিন্তু ওয়ার্নের কথা অনুযায়ী, সচিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে অবনতি ঘটেছিল বছর তিনেক আগে।
কী সেই ঘটনা?
ওয়ার্ন তাঁর সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, কী ভাবে তিনি আর সচিন মিলে ঠিক করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাৎসরিক ক্রিকেট উৎসব চালু করবেন। কিন্তু সচিনের সঙ্গে মতান্তরের জেরে সেই পরিকল্পনা প্রথম বছরের পরে আর বাস্তবায়িত হয়নি।
কেন ঘটেছিল এই মতান্তর? সচিন আর ওয়ার্ন মিলে যুক্তরাষ্ট্রে চালু করেছিলেন ‘কিংবদন্তিদের ক্রিকেট’। যেখানে ২০১৫ সালে, প্রথম বছরেই খেলতে দেখা গিয়েছিল, ব্রায়ান লারা, গ্লেন ম্যাকগ্রা, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ক্রিকেটারদের। ওয়ার্ন স্বীকার করে নিয়েছেন, এই প্রদর্শনী ম্যাচগুলির যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা করেছিলেন সচিনই। কিন্তু এই ‘কিংবদন্তিদের ক্রিকেট’ চালানোর জন্য যে সব লোক সচিন এনেছিলেন, তা পছন্দ হয়নি ওয়ার্নের। প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় স্পিনারের এই অভিযোগ নিয়ে সচিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল সংবাদ সংস্থার পক্ষ থেকে। ভারতীয় কিংবদন্তি এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। আত্মজীবনীতে ওয়ার্ন লিখেছেন, ‘‘সঞ্জয় নামের একজনকে এনেছিল সচিন। ও ছিল মূলত ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা। আমার পরিকল্পনার কথা আমি ওদের সবাইকে বলি। বুঝিয়ে দিই, ঠিক কী চাইছি। ওরা ব্যাপারটা দারুণ ভাবে নিয়েছিল। বেন স্টার্নার নামে আরও একজনকে নিয়ে আসে ওরা। সচিন গোঁ ধরেছিল ওর লোকেরাই পুরো ব্যাপারটা চালাবে।’’
আরও পড়ুন: সঙ্কট নেই মিউচুয়াল ফান্ডে, লগ্নিকারীদের আশ্বাস কর্তৃপক্ষের
ওয়ার্ন জানাচ্ছেন, তিনি চেয়েছিলেন তাঁর পক্ষের দু’জন লোক এবং সচিনের দু’জন লোকের হাতে দায়িত্ব থাকবে। কিন্তু সচিন নাকি বলে দেন, সঞ্জয় এবং বেনকে তাঁর চাই। পরে আরও দু’জন লোককে নিয়ে আসেন সচিনেরা। যা নিয়ে ওয়ার্ন লিখেছেন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম, ঠিক আছে। সচিনকে আমি ২৫ বছর ধরে চিনি। ক্রিকেটের বাইরেও ও দারুণ সফল। ভেবেছিলাম, ব্যবসায়িক দিকটাও দারুণ ভাবে সামলে নেবে। কিন্তু পরে বুঝলাম ওরা সাংগঠনিক দিকটাই সে ভাবে সামলাতে পারছে না। এই রকম বিশাল ইভেন্ট সামলানোর দক্ষতা ওদের ছিল না।’’
এর পাশাপাশি ওয়ার্ন ‘ভারতীয় পদ্ধতি’ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যা তাঁর মতে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ ফেলে রাখা। ওয়ার্ন লিখেছেন, ‘‘ভারতীয়রা সব কিছু একেবারে শেষ মুহূর্তের জন্য ফেলে রাখে। নিজের দেশে বসে হয়তো শেষ মুহূর্তে সব সামলে দেওয়া যায়। কিন্তু বিদেশে গিয়ে সমস্যা হয়।’’
এর পরে ওয়ার্ন আরও লিখেছেন, ‘‘সচিন একজনকে নিয়ে এসেছিল। রাজ। যাকে আমি পোকার খেলায় দেখেছিলাম। শেষ মুহূর্তে ও-ই আমাদের বাঁচায়। সাংগঠনিক দক্ষতা তো ছিলই। পাশাপাশি প্রচুর অর্থ সাহায্যও করেছিল।’’
ওয়ার্নের বক্তব্য, এর পরে তিনি যখন এই ব্যাপারগুলো নিয়ে কথা বলতে যান, সচিন সেটা ভাল ভাবে নেননি। আত্মজীবনীতে ওয়ার্ন সোজাসাপ্টা লিখেছেন, ‘‘আমি সচিনকে বলেছিলাম, তোমার লোকেরা এই বিশাল ব্যাপার ঠিক সামলাতে পারছে না। তাই পেশাদার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লোকেদের দায়িত্ব দেওয়া হোক। আমি নিজের ম্যানেজারের কথা বলেছিলাম। এমনকী এও বলেছিলাম, তোমার দু’জন লোক থাক, আমার দু’জন লোক থাক। কিন্তু সচিন রাজি হয়নি। ও বলে দিয়েছিল, পুরো ব্যাপারটাই ওর লোকেরা চালাবে।’’ এর পর থেকে নাকি দুই কিংবদন্তির মধ্যে যোগাযোগ কমতে থাকে। পরে পুরো ব্যাপারটাই বাতিল হয়ে যায়। যে জন্য ওয়ার্ন দায়ী করেছেন, সচিনের আশে পাশে থাকা কিছু ‘হিংসুটে লোককে’।