চারমূর্তি: বার্তোস, খাবরা, ডুডু, র্যান্টি। ছবি: উৎপল সরকার
রবিবারের বড় ম্যাচটা দেখতে দেখতে পঁচাত্তরের স্মৃতি হঠাৎ ভেসে উঠল। সে দিনের বড় ম্যাচে মোহনবাগানের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, রতন দত্ত, কেষ্ট মিত্র এবং আমার মতো চার-পাঁচ জন তরুণ ফুটবলারকে দিয়ে শুরুতেই ডাইরেক্ট ফুটবল খেলানো হয়েছিল। সেই ভুলটাই এ দিন ভোম্বলদাকে করতে দেখলাম যুবভারতীতে। ৪-৪-১-১ না খেলিয়ে ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলালে মনে হয় বেশি ভাল করত ও! আমাদের পঁচাত্তরের ভুলের পুরো ফায়দা কিন্তু তুলেছিল সে দিন ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে খেলা ভোম্বলদা। কিন্তু এ দিন কোচ হয়ে নিজেই সেই ভুল করে বসল!
ভোম্বলদার প্রথম দলে ফাতাইকে রাখার সিদ্ধান্তকেও সমর্থন করতে পারছি না। যতই হোক, ফাতাই আমার মতে ওমোলো নয়। ফাতাইকে এ দিন যা দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছে বেলো রজ্জাক তুলনায় অনেক ভাল স্টপার। ফুটবল-বুদ্ধি আছে। জানে, কার্ড না খেয়েও শরীরটাকে কী ভাবে কাজে লাগাতে হয়।
মনে আছে, বছর দুয়েক আগে আমি যখন মোহনবাগান টিডি ছিলাম, অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার জেলেনিকে নিয়ে এসেছিলাম। অবিকল এ দিনের মতো সিচুয়েশন ছিল বড় ম্যাচের। সবে জেলেনি এখানে এসেছে আর সামনেই ডার্বি ম্যাচ। অনেক ভাবনা-চিন্তার পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, ওকে খেলাব। তবে স্টপার নয়, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে। জেলেনিকে দেখে বুঝে গিয়েছিলাম, ও অসাধারণ কিছু ফুটবলার নয়। কিন্তু ওর লম্বা-চওড়া চেহারাটা আমার খুব দরকার মেহতাবের লম্বা ক্রসগুলো এবং টোলগের উইং প্লে আটকানোর জন্য। ওই ম্যাচে আমরা দু’গোলে হারিয়ে ছিলাম ইস্টবেঙ্গলকে।
ভোম্বলদার কাছে অবশ্য সেই সুযোগ এ দিন ছিল না। জেলেনির মাপের ফুটবলারও ফাতাই নয় যে, ওকে পজিশন বদলে খেলাবে। বিদেশি কোটায় ফাতাইকে না খেলিয়ে শুরুতেই কাতসুমি-বোয়া দিয়ে শুরু করলেই বোধহয় ভাল হত। একা র্যান্টিকে আটকানোর জন্য মোহনবাগানের দেশি ডিফেন্ডাররাই যথেষ্ট ছিল। ইস্টবেঙ্গলে অর্ণব-দীপকরা যদি কাতসুমিকে আটকাতে পারে, তা হলে কিংশুক-ধনচন্দ্ররা র্যান্টিকে পারবে না কেন?
হাফটাইমের পরে মণীশ ভার্গবকে নামিয়ে কোনও লাভ হয়নি। মণীশ তো আর টিম-উইনার নয় যে, ও খেললেই দল জিতবে। র্যান্টি যেটা করল। পরে নামা বোয়াকেও আমার আহামরি লাগেনি। ওর খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, হয় ওকে ভোম্বলদা ঠিক ভাবে বোঝাতে পারেনি। নয়তো বোয়া নিজে বুঝতে পারেনি, মাঠে নেমে ওকে কী করতে বলা হয়েছে! ম্যাচের যে সময় ও নেমেছিল, ওর উচিত ছিল সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হয়ে যাওয়া। যাতে বিপক্ষের অ্যাটাকিং থার্ড আর মিডল থার্ডের মধ্যে ভাল যোগাযোগ তৈরি হতে না পারে।
কিন্তু সেটা না করে বোয়া উইংয়ে গিয়ে ওয়াল টাচ খেলে গেল! ওয়ান টাচ ফুটবলের স্কিল দেখাল। এমন সময় যখন ওর দল দু’গোলে পিছিয়ে। তখন ‘খুচুর খুচুর’ ফুটবল না খেলে যদি ইস্টবেঙ্গল বক্সে বেশি ডাইরেক্ট পাস বাড়ানোর চেষ্টা করত, বোধহয় লাভ হত মোহনবাগানের। আসলে ভোম্বলদার দলে এখনও নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোনও প্লেয়ার নেই। যে কিনা টিমটাকে চাপের মুখে গাইড করবে। কিন্তু সে রকম দূরদর্শিতা ওর তরুণ দলে কারও খেলায় নেই।
এ দিন ভোম্বলদার দলের সব ক’টা দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। আর তাতে ওদের কোচ আর্মান্দো কোলাসোর থেকে আমি ফুটবলারদের বেশি কৃতিত্ব দেব। ইস্টবেঙ্গলে প্রত্যেক বিভাগে একজন করে নেতা আছে। সেটা ডিফেন্সে অর্ণব মণ্ডল হোক, মাঝমাঠে মেহতাব হোসেন হোক, কিংবা অ্যাটাকে র্যান্টি মার্টিন্স হোক সবাই অভিজ্ঞ এবং যথেষ্ট দক্ষ।
দ্বিতীয়ার্ধে র্যান্টি যদি ওর হ্যাটট্রিক-গোল আর ম্যাচের শেষের দিকে তুলুঙ্গা যদি ফাঁকা গোল নষ্ট না করত, তা হলে মোহনবাগানের কপালে হয়তো আরও বড় লজ্জা ছিল!