এক নয়, দুই নয়, রবিবারেরটা ধরে চারটে হল। বলছি চার-চারটে ওয়ান ডে সিরিজ হারের কথা।
একটা সময় আমরা বিদেশে না পারলে ভাবতাম, ঠিক আছে দেশে দেখে নেব। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে থেকে যা চলছে, এক কথায় শিউরে ওঠার মতো! বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজ হারলাম। বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ গেলাম, ওখানেও হারলাম। তার পর দেশে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলতে এল, টি-টোয়েন্টি আর ওয়ান ডে দু’টোতেই আমাদের উড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। আবার বিদেশে গেল টিম, ভাগ্য পরিবর্তন কিন্তু হল না। সেই হার। বিশ্রী ভাবে হার।
এমএস ধোনি, এর পর আমরা জিতব কোথায়? দেশে পারছি না। বিদেশে পারছি না। বাকি তা হলে কী পড়ে থাকল?
ভাবা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় তিনশোর আশেপাশে তুলল টিম আর একটাতেও জিততে পারল না! ব্যাটসম্যানরা সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করছে, আর বোলাররা সে সবকে অবলীলায় জলে ডুবিয়ে আসছে। আধুনিক ট্রেন্ড, বিদেশে জিতলে ভাল। কিন্তু দেশে হারব না। কিন্তু আমরা এখন বিদেশেও হারি, আবার দেশেও পারি না।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এ রকম বিপর্যয় দেখে অনেককে আতঙ্কিত হয়ে পড়তে দেখছি। প্রচুর লোক তেড়ে গাল দিচ্ছে বোলিংকে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, টি-টোয়েন্টিতে ধোনি যদি নিজের পছন্দের পিচ পায়, অর্থাৎ স্লো টার্নার, তা হলে কিছুটা সামাল দিতে পারবে। না হলে কিন্তু বেশ কয়েকটা ব্যাপার ভোগাবে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে সিরিজ হারায় যে সমস্যাগুলো খুব বিশ্রী ভাবে সামনে চলে এল।
যেমন, শিখর ধবন। ও একটা ম্যাচে খেললে, পাঁচটা ম্যাচ রান করবে না। অজিঙ্ক রাহানেকে উপরে আনা যায়। কিন্তু কোহলির পর মিডল অর্ডারে ধরবে কে?
যেমন, ভারতীয় বোলিং। উইকেট নেওয়ার লোক একটাও নেই। রবিচন্দ্রন অশ্বিন যদি কিছু করে, উইকেট আসবে। কিন্তু ও না পারলে কে? কোন পেসার? নতুন বলে উইকেট আসছে না। পুরনো বলে রান আটকানো যাচ্ছে না।
যেমন, নাম্বার সিক্স বা সেভেন। ফিনিশার ধোনি আর আগের মতো নেই। কিন্তু ওর বদলিও নেই। ফিনিশারের রোলে তা হলে কে? সাতেই বা কে যাবে?
একটা প্রশ্নেরও উত্তর নেই। আমার সবচেয়ে বিশ্রী লাগছে, ভারতের ওয়ান ডে মডেলটা। বোলাররা উইকেট নেওয়ার বদলে রান আটকাতে যাচ্ছে। আজকের দিনে কেউ বাঁচতে পারে না এ ভাবে? সব টিমে বড়-বড় হার্ড হিটার আছে। যারা শেষ দশ-পনেরো ওভারে টার্গেট করে থাকে বোলারকে ধ্বংস করার। জিততে হলে এখনকার ক্রিকেটে উইকেট নিতে হয়। ভারত তো সেটাই পারছে না। বলা হতে পারে, বোলাররা না পারলে ধোনি কী করবে? ওকে বলে লাভ কী? আমার কথা হল, তুমি তা হলে অস্ট্রেলিয়া মডেল নাও। অস্ট্রেলিয়া বুঝতে পারছে, ওদের বোলাররা আনকোরা। ওরা তাই রান তাড়া করার দিকে চলে যাচ্ছে। তা হলে ভারতও সেটাই করুক। রান তাড়া করার দিকে যাক (এ দিন অবশ্য টস হেরে ব্যাটিং করতে হল)। কিন্তু সেটাও হচ্ছে না। টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনাচিন্তায় তেমন কোনও ফ্লেক্সিবিলিটিই দেখতে পাচ্ছি না।
রবিবারের ম্যাচটাই ধরুন। যে তিনটে সারফেসে এখনও পর্যন্ত খেলল ভারত, মেলবোর্নেই বল ঘুরেছে। অথচ সে দিনই অশ্বিন টিমে নেই! জাডেজার বল যেখানে টার্ন করছে, সেখানে অশ্বিনেরও যে করবে এ তো বাচ্চা ছেলেও জানে। তার মানে টিম ম্যানেজমেন্ট পিচ বুঝতেই পারেনি। শিখর ধবন যে ইনিংসটা খেলল, তারও কোনও মাথামুণ্ডু পেলাম না। ও রান করেছে মানছি, কিন্তু স্ট্রাইক রেটটা দেখুন। টিম যেখানে তিনশো তুলে জিততে পারছে না সেখানে সত্তর-আশি স্ট্রাইক রেট রাখার অর্থ কী? বোলিংয়ে একজনও কাউকে পেলাম না যে নেতৃত্ব দিতে পারে। উমেশ যাদব পরের দিকে কী করল, ও-ই জানে। রবিবার আবার একই সঙ্গে দু’জন নতুন ছেলেকে খেলিয়ে দেওয়া হল। যাদের মধ্যে ঋষি ধবনকে নিয়ে ক’দিন আগেই ধোনি সাংবাদিক সম্মেলনে বলে গিয়েছে, টিমে ওকে খেলানোর জায়গা সে ভাবে দেখছে না। অথচ ঋষি ধবন রবিবার ভারতীয় জার্সি পেল। মণীশ পাণ্ডেকে দুটো ম্যাচে খেলিয়েই বসিয়ে দেওয়া হল। টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তাভাবনা যে কতটা তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে, উদাহরণগুলো এক-একটা জলজ্যান্ত প্রমাণ।
এক-এক সময় তো দেখে বিশ্বাসই হচ্ছে না এটা ধোনির টিম! এটা ধোনির টিমের মানসিকতা! ধোনির অনেক ফাটকা অতীতে সফল হয়েছে। কিন্তু এখন হচ্ছে না। তা ছাড়া ক্যাপ্টেনের ফিল্ড প্লেসিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার সিঙ্গলস আটকানো যায়নি। ধোনির বোলিং চেঞ্জও মাঝে মাঝে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
অতীতে তো এমন দেখিনি।
একটা কারণ হতে পারে যে, জিগ স পাজলের একটা পিস মিসিং থাকলে সামাল দেওয়া সম্ভব, অনেকগুলো হয়ে গেলে অসম্ভব। ধোনিরও হয়তো সেই সমস্যা। ওর নিজের ব্যাটিং দেখেও মনে হচ্ছে যে, নতুন করে চিন্তাভাবনা করা উচিত। আজ সামনের পায়ে বল পেয়েছে, মেরেছে। কিন্তু এখন ওকে আর পায়ে কেউ বল করে না। ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়, ও-ও পারে না। তার উপর টিমের একগাদা সমস্যা। ধোনি এখন জানেই না উইকেট নেওয়ার দরকার হলে ও কোন বোলারের কাছে যাবে? কাকে ডাকলে উইকেট আসবে? টার্নারে তো না হয় স্পিনাররা, কিন্তু ভাল পিচে? ঠিক তেমন ও এটাও জানে না যে, ও না থাকলে শেষ দশ-পনেরো ওভারে ফিনিশ করার গ্যারান্টি কে দেবে? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই হার, টিমের মনোবলে বড় ধাক্কা নিঃসন্দেহে। কিন্তু তার চেয়েও ধোনির জন্য আরও বড় একটা ধাক্কা অপেক্ষা করবে।
মার্চ মাসেও এমএস ধোনি জানতে পারবে না ওর সেট টিমটা কী? কোন টিম নিয়ে বিশ্বযুদ্ধে নামা উচিত!
মেলবোর্নের স্কোর
ভারত
রোহিত ক ওযেড বো রিচার্ডসন ৬
ধবন বো হেস্টিংস ৬৮
কোহলি ক বেইলি বো হেস্টিংস ১১৭
রাহানে ক ম্যাক্সওয়েল বো হেস্টিংস ৫০
ধোনি ক ম্যাক্সওয়েল বো হেস্টিংস ২৩
গুরকিরত বো ফকনার ৮
জাডেজা ন.আ. ৬
ঋষি ন.আ. ৩
অতিরিক্ত ১৪
মোট ৫০ ওভারে ২৯৫-৬
পতন ১৫-১৩৪-২৪৩-২৬৫-২৭৪-২৮৮।
বোলিং: রিচার্ডসন ১০-০-৪৮-১
হেস্টিংস ১০-০-৫৮-৪
ফকনার ১০-০-৬৩-১
বোল্যান্ড ৯-০-৬৩-০
ম্যাক্সওয়েল ৯-০-৪৬-০
মিচেল ২-০-১২-০।
অস্ট্রেলিয়া
শন ক ধোনি বো ইশান্ত ৬২
ফিঞ্চ ক ধোনি বো উমেশ ২১
স্মিথ ক রাহানে বো জাডেজা ৪১
বেইলি স্টাঃ ধোনি বো জাডেজা ২৩
ম্যাক্সওয়েল ক ধবন বো উমেশ ৯৬
মিচেল রান আউট ১৭
ওয়েড ক ধবন বো ইশান্ত ৬
ফকনার ন.আ. ২১
হেস্টিংস ন.আ.০
অতিরিক্ত ৯
মোট ৪৮.৫ ওভারে ২৯৬-৭
পতন ৪৮-১১২-১৫০-১৬৭-২০৪-২১৫-২৯৫।
বোলিং: উমেশ ৯.৫-০-৬৮-২
স্রান ৮-০-৬৩-০
ইশান্ত ১০-০-৫৩-২
ঋষি ৬-০-৩৩-০
গুরকিরত ৫-০-২৭-০
জাডেজা ১০-০-৪৯-২।